সত্য কুম্ভকার

গল্প - পুরোনো কঙ্কাল এর কান্না

সত্য কুম্ভকার
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫ ভৌতিক

এই গল্পটি একটি পুরনো, জরাজীর্ণ জমিদার বাড়ি নিয়ে। এই বাড়িটি প্রায় দুইশ বছরের পুরনো, যেখানে অনেক ভূতুড়ে ঘটনা ঘটেছে বলে মানুষের বিশ্বাস। তবে এই গল্পটি সেইসব ভূতের থেকে আলাদা।
গল্পের প্রধান চরিত্র হলো একজন ফটোগ্রাফার, যার নাম রাশেদ। সে তার শখ মেটাতে এবং কিছু নতুন ছবি তোলার উদ্দেশ্যে একদিন সেই জমিদার বাড়িতে যায়। রাশেদ এই বাড়িটির ভৌতিক গল্পের কথা শুনেছে, কিন্তু সে এসব বিশ্বাস করে না। সে বরং এই বাড়িটির পুরনো স্থাপত্য এবং নীরবতার মধ্যে এক ধরনের সৌন্দর্য খুঁজে পায়।
বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে রাশেদ মুগ্ধ হয়ে যায়। ধুলো আর মাকড়সার জালে ভরা প্রতিটি ঘরের প্রতিটি জিনিস যেন অতীতের কোনো এক গল্প বলছে। সে তার ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে শুরু করে। হঠাৎ একটি ঘরের কোণে সে একটি পুরনো কাঠের বাক্স দেখতে পায়। রাশেদ কৌতূহলী হয়ে বাক্সটি খুলে ফেলে। ভেতরে সে একটি ছোট সাদা কঙ্কাল দেখতে পায়, যা সম্ভবত একটি শিশুর কঙ্কাল।
কঙ্কালটি দেখে রাশেদের বুক কেঁপে ওঠে। সে বাক্সটি বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। রাশেদ যখন বাইরে আসে, তখন হঠাৎ বাতাসের গতি বেড়ে যায় এবং ঝড় শুরু হয়। এমন সময় সে কঙ্কালের কান্না শুনতে পায়, যা তাকে ভিতরে আবার নিয়ে যায়। রাশেদ কঙ্কালের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কে তুমি?”
কঙ্কালটি তখন নিজের গল্প বলতে শুরু করে। সে বলে, তার নাম রাজু। ছোটবেলায় সে এই জমিদার বাড়িতে খেলার সময় হঠাৎ একটি অন্ধকার ঘরে আটকা পড়ে যায়। কিন্তু কেউ তাকে খুঁজে পায়নি এবং সে ধীরে ধীরে এই অন্ধকার ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তার আত্মা এখনও এই ঘরে আটকা পড়ে আছে।
রাজুর আত্মা রাশেদকে অনুরোধ করে, “আমার কঙ্কালটিকে আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দাও। আমি আমার মাকে শেষ বারের মতো দেখতে চাই।”
রাশেদ অবাক হয়ে যায়। সে কঙ্কালটিকে নিয়ে বাড়িটি ছেড়ে চলে যায়। রাজুর আত্মা তার সাথে যায়। রাশেদ বহু খোঁজাখুঁজির পর রাজুর মায়ের খোঁজ পায়। তিনি একজন বয়স্ক বৃদ্ধা। রাশেদ তার কাছে গিয়ে রাজুর গল্প শোনায় এবং কঙ্কালটি তাকে দেয়।
বৃদ্ধা রাজুর কঙ্কালটি পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমি জানতাম আমার ছেলে ফিরে আসবে।” এরপর রাজুর আত্মা রাশেদের কাছ থেকে বিদায় নেয় এবং শান্তিতে বিলীন হয়ে যায়।
রাশেদ তখন উপলব্ধি করে, কিছু গল্প শুধুমাত্র ভূতের নয়, বরং ভালোবাসা এবং শান্তিরও হয়।

৩৭
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন