বঙ্গের ইতিহাস
– শাহ্ আলম আল মুজাহিদ
বঙ্গ নামের কোমল বদ্বীপ ভূমি
আজন্ম লালিত বঙ্গোপসাগরের কোলে,
তেরোশত নদী যায় চরণ চুমি
মহাযাত্রার স্রোতজ কল্লোলে।
উজান থেকে পলি বয়ে আনে,
ভরা বর্ষায় বান ডাকে ঘোলা জলে,
উর্বর মাটির সতেজ আস্তরণে
এদেশের ভূমি জীবন্ত করে তোলে।
এদেশের বুকে বিচিত্র ফসল ফলে,
বাণিজ্যধারা দেশবিদেশে ছিল,
নাবিকদৃষ্টি সজাগ করে তোলে—
ব্রিটিশ জাতিও তেমনি এসেছিল।
এসেছিল পর্তুগিজ আর ওলন্দাজ,
আরও অনেক নাবিক অভিযাত্রী,
যুদ্ধ ছিল ব্রিটিশ জাতির কাজ,
দস্যুর মতো সবই নিত কারি।
আঠারো শতকে দেশে এলো বর্গি,
মারাঠি জলদস্যু তাদের সাথী,
সুকৌশলে নবাব আলীবর্দী
দমন করলেন সে বর্গি-মারাঠি।
মহান নবাব আলীবর্দী খাঁ
বঙ্গদেশের ছিলেন ভরসা,
নবজাতকের কাছে যেমন মা—
নিরাপত্তার নিবিড় আশ্রয়বাসা।
তখন ধনের প্রাচুর্য ছিল দেশে,
দিবস-রাত্রি প্রজা থাকত সুখে,
সহস্র বছরের স্মৃতি গাঁথা রয়ে
গর্ব হয়ে উঠত বাঙালির বুকে।
আলীবর্দী হঠাৎ বিদায় নিলে
দুর্যোগের মেঘ ঘনায় দেশে,
দায়িত্বভার সিরাজ-উদ-দৌলা নিলে
ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ে শেষে।
অনেক কষ্টে যুবক সিরাজ-উদ-দৌলা
ঘনিষ্ঠদের ষড়যন্ত্রজাল মুছে,
সিংহাসনের দ্বার হলো খোলা,
অল্প হলেও রাজ্য-অভাব ঘুচে।
আশার পিদিম একটু ভেঙে গেলে
যায় কি পিদিম আগের মতো জালা?
আঁধার দেশে কাঁদার সায়র মেলে
যদিও সেথায় জোনাক ছড়ায় আলা।
নতুন করে ষড়যন্ত্রজাল গড়ে,
শত্রু-মিত্র সবাই শ্রমিক তাতে,
শিষ্যদেরই প্রভাব বেড়ে বেড়ে
গুরুর কাঁধে পা পড়ে রাতে।
ব্রিটিশ বণিক নানান কথার ছলে
অপমান, খুন আর ষড়যন্ত্রে মেতে,
ক্ষমতার ঐ বিত্তসুখের ঢলে
যুদ্ধ বাঁধে নবাবের সাথে।
পলাশির আমবাগানের দেশে
মীরজাফরের নৃশংস নেতৃত্বে,
দ্বন্দ্বযুদ্ধের এক পর্যায়ে এসে
পরাজিত হলেন নবাব তাতে।
পরাস্ত হলো গোটা বঙ্গভূমি,
সূচিত হলো ঔপনিবেশিক শাসন,
অসুর হলো আসল ভূস্বামী,
চলল দেশে পিড়াপিড়ি শোষণ।
অত্যাচারের চরম সীমায় এসে
মানুষ যখন পথের কুকুর সাজে,
পঙ্কসাগরের তরঙ্গে ভেসে ভেসে
জাগে প্রতিরোধ, নবজাগরণ মাঝে।
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে
পতন হলো ইংরেজ শাসনের,
’৪৭-এর দেশভাগের বেসে
জন্ম নিল ভারত-পাকিস্তানের।
দানবকূল বিদায় নিলেও দেশে
আসেনি তো কোনো স্বাধীনতার,
পাকিস্তানের অধীনতায় এসে
ক্ষুধিত হয় নিপীড়নের পাতা্
যে নিপীড়ন ভাষায় আঘাত হানে,
যে নিপীড়ন অর্থে শোষে,
সে পীড়ায় পীড়িত বাঙালিরাই
মহান যুদ্ধে স্বাধীনতা আনে।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন