দুঃখহীনের অভিমান

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

এটা কোন ঋতু ?
এইতো শরৎ এসে
বর্ষার উঠোনে পা রেখে বলল
তোমার সময় শেষ এবার যাও
এভাবেই এক ঋতুর সুন্দর
আর এক ঋতুর শোভার জন্যে
পথ ছেড়ে দেয়
মানুষের সঙ্গে যখন মানুষের বিচ্ছেদ হয়
তখনও তো একজনকে পথ ছেড়ে দিতে হয়
একজনের সব ছেড়ে যাওয়ার উঠোনে
আর একজনের সব পাওয়ার ইচ্ছে এসে দাঁড়ায়
চলে যাবার মুহূর্তে
জুতোর স্ট্র্যাপ লাগানোর সময়
মানুষ একবার ফিরে তাকিয়ে দেখে নেয়
কোথায় ছিল ঘর কোথায় অঙ্গন
তারপর অশ্রুবিন্দু কাউকে দেখতে না দিয়ে
ক্ষান্ত বর্ষণ মেঘের মতো
সে চলে যায় যেতেই হয়
যে যায় তার পিঠের ব্যাকপ্যাকে
শ্রাবণের বৃষ্টি কি ধরে রাখা থাকল
অন্ধকার পথের বিদ্যুৎ কি রাখা রইল
সাত সমুদ্র তেরো নদী
অনুভবে ঢেউ তুলতে থাকে
তাও কি পিঠের ন্যাপস্যাকে রাখতে পারে কেউ?
পথেই যাকে চলতে হবে
বিশ্রামের জন্যে সে গাছতলায় বসলেও
তার চলা থেমে থাকে না
সেখান থেকেই সে দেখতে পায়
বর্ষার শেষে শরৎ দাঁড়িয়ে আছে
নবান্নের দেশ আছে
সে শুনতে পায়
শীত শেষে আবিরে রাঙানো ঢোলের আওয়াজ
ছেঁড়া জুতো খুলে রেখে
আবার সে হাঁটতে শুরু করে
ব্যাকপ্যাকে যেসব ঝগড়া অশান্তি
অপ্রাপ্তির মনোবেদনা জমে ছিল
কখন পথের প্রান্তে
অজান্তে সেসব ফেলে দিয়েছে সে
শুধু ক্ষান্তবর্ষণ মেঘের মতো
যা ভারী হয়ে রইল
তা কি দুঃখহীনের অভিমান ?

~ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (কাব্যগ্রন্থ, ক্যালাইডোস্কোপ)
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৫৩ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন