সুবোধ সরকার

কবিতা - আমার মেয়ের বিশ্বজয়

সুবোধ সরকার

হরমন প্রীত কৌর যে ক্যাচটা নিলেন
সেটা কোনও ক্যাচ নয়
দুহাজার বছরের গ্লানির টুঁটি মুঠোয় ভরে
ডিপ কভারের দিকে দৌড় দিলেন।
ডিপ কভার থেকে ভারতবর্ষের সমস্ত মা-কে
বলছিলেন, মা দেখো, মেয়েরা পারে।

মা,তোমাকে একদিন ক্রিকেট মাঠ থেকে
তাড়িয়ে দিয়েছিল পাড়ার ছেলেরা
বলেছিল যা, উঠোনে বসে পুতুল খেল।
মা, আমি সেই উঠোন থেকে উঠে এসেছি আর একটা উঠোনে।
মধ্যরাতে ঘরে ঘরে ষাট কোটি চোখ তাকিয়ে আছে
যে উঠোনের দিকে,সেই নবী মুম্বাইয়ের
ভরা স্টেডিয়াম থেকে বলছি: মেয়েরা পারে।

তিন স্পিনার –- রাধা যাদব,দীপ্তি শর্মা, শ্রী চরণী
কই তাদের কানের দুল? কোথায় গেল লিপস্টিক?
যে কানের দুল দেখে রবি শাস্ত্রীরা কমেন্ট্রি বক্স থেকে
মেয়েদের চিনে নিতেন। কে ভাল কে আরো ভাল!

দরদর করে ঘামছে মেয়েগুলো, দৌড়চ্ছে বাউন্ডারি দিকে
ছুটন্ত বলের দিকে, বল নয়, যেন নিজের দূরন্ত আত্মার দিকে।
ঘামে ভেজা মেয়েদের মুখ যে এত সুন্দর হতে পারে
সে আমি কখনো ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম
রাধা শুধু যমুনাতে জল আনতে যায়।

কিন্তু বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ বললেন, একটাই কথা ছিল,
শরীরের শেষ বিন্দু দিয়ে দিতে হবে।
সৌরভ যা পারেননি। রিচা সেই বিশ্বকাপ হাতে ধরলেন।
বাইশ রাত না ঘুমিয়ে যে মেয়েটা মাঠে নেমেছিল
সে আরো বাইশ রাত জাগতে পারবে। স্বপ্ন কাকে বলে?
যা আমরা ঘুমিয়ে দেখি? না না না
স্বপ্ন বলে তাকে যা আজীবন ঘুমোতে দেয় না।

গত পঞ্চাশ বছরে যত ভ্রূণহত্যা হয়েছে তারা আজ বলছে:
আমাদের একটা মাঠ দাও
আমাদের একটা বল দাও
আমাদের একটা ব্যাট দাও।
আমাদের মেরে ফেলো না। আমরাও পারি।

ঘরে ঘরে পাড়ায় পাড়ায় রাস্তায় রাস্তায়
মেট্রোরেলে এরোপ্লেনে
ভাবা অ্যাটোমিকে নাসায়
বুকার প্রাইজে ক্ষেপণাস্ত্র্রে প্রতিটি নক্ষত্র জয়ে

প্রতিটা কন্যাভ্রূণ উঠে দাঁড়িয়ে বলছে: কী বলছে?
মেয়েরা কী বলছে?
মেয়েরা বলছে:
আমাদের একটা মাঠ দাও
আমাদের একটা বল দাও
আমাদের একটা ব্যাট দাও।
আমরাও সারা ভারতবর্ষ-কে, আনন্দে, নবীন আনন্দে, কাঁদিয়ে দিতে পারি।।

পরে পড়বো
৮৯৮
আবৃত্তি করেছেন: Riya Bhattacharya

প্রকাশিত মন্তব্য গুলো

  1. অসাধারণ অভিব্যক্তি…

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন