আমি ফিরোজা, একটি ভারতীয় মেয়ে
সুবোধ সরকার
হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত,
এতগুলো ভারতের মাঝে দাঁড়িয়ে
আমি ফিরোজা একটি ভারতীয় মেয়ে ।
আপনারা বলতে পারেন, আমি কি দোষ করেছি ?
পৃথিবীর যে কোন দেশের
যে কোন একটি মেয়ের মতো আমি একজনকে
ভালবেসেছিলাম ।
প্রথম যেদিন ওর চোখে চোখ পড়েছিল আমার
আমি জানতাম না ও কে
বিকেল বেলার কলেজ ক্যাম্পাসে যে আলো এসে পড়েছিল
ওর চুলে, তার কোথাও লেখা ছিল ওর ধর্ম ।
হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত
আপনারা বলতে পারেন আমি কি দোষ করেছি ?
আমি যেদিন হাতে মোমবাতি নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম
আমি যেদিন বলে ফেললাম, আমি শরিয়ৎ মানি না
আমি যেদিন বুঝিয়ে দিলাম ভারতবর্ষের মাটিকে
মা বলে জানি, ভারতবর্ষের আকাশকে আকাশ
সেদিন থেকেই শুরু হল অত্যাচার ।
হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত
আপনারা বলতে পারেন, আমি কি দোষ করেছি
ছেলেটাতো আপনাদের
সে কি দোষ করল ?
আমাকে ভালবাসাই তার দোষ ?
ছেলেটার বাড়িতে আপনারা ঢিল ছুঁড়লেন
পার্সেল করে ছেঁড়া চটি পাঠালেন
ওকে হাতে মেরে, ভাতে মেরে
বাড়ির দেয়ালে বড় বড় করে লিখে দিলেন,
‘এসব চলবে না।’
লজ্জা করে না আপনাদের, আপনারা এগিয়ে থাকা মানুষ
এম এ পাশ, বি এ পাশ, ডাক্তার, এঞ্জিনিয়র
আমলা, মাস্টার, আপনারাই গণতন্ত্র নিয়ে ভাষণ দেন
আর প্রয়োজন মতো
গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেন ।
ধিক আপনাদের !
আমি কি ছোটবেলায় ভোরের আলোয় সরস্বতী পুজোর ফল
. কাটিনি ?
আমি কি স্কুলের বারান্দায় বসে
রাত জেগে আলপনা দিইনি ?
আমি কি পাশের বাড়ির হিন্দু বাবার জন্য রক্ত দিইনি ?
ওদের বাড়ির উঠোনে বসে ওদের ছেলেদের অ আ ক খ
. শেখাইনি ?
আমি আরবি শিখিনি, ফারসি শিখিনি, উর্দু শিখিনি
বাংলাই আমার ভাষা, এই ভাষা আমার ভাত, আমার রুটি
আমার চোখের কাজল, আমার পায়ের ঘুঙুর ।
এই ভাষা আমার গোপন চিঠি, যার অক্ষরে অক্ষরে লেগে আছে
আমার চোখের জল ।
আমরা যেদিন বিয়ে করি
সেদিন কফিহাউস গিয়েছিলাম, ও সেদিন
আমাকে ঝোলা ভর্তি করে রবীন্দ্রনাথ কিনে দিয়েছিল
হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে কানে কানে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন
ফিরোজা, তুমি আমার মৃন্ময়ী, তুমি আমার লাবণ্য
তুমি আমার সুচরিতা ।
সেদিন রাত্রে কি হয়েছিল জানি না
কি ঘটেছিল ওদের বাড়িতে, কি ঘটেছিল ওদের পাড়ায়, কি
. করেছিল ওদের
বাবাকাকা – সেটা আজও আমি জানি না
কিন্তু তার পরের দিন ওকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি
ও কোথায় চলে গেল আমি জানতে পারিনি ।
এই আপনাদের ভারতবর্ষ ?
এই আমাদের ভারতবর্ষ ?
আমি একজন সাধারণ মেয়ে
অথচ বাড়িতে পাড়ায় অফিসে পুজোর প্যান্ডেলে
বিয়ে বাড়িতে অন্নপ্রাশনে এখনো আমাকে নিয়ে ফিসফাস
ডাক্তারের কাছে যাই – ফিসফাস
কলেজে ঢুকি – ফিসফাস
বাজারে যাই – ফিসফাস
যে হাউসিং –এ থাকি সেখানেও চলতে থাকে অবিরাম লুকোচুরি ।
ওটা লুকোচুরি নয়, ওটা ফিসফাস নয়
ওটা আপনাদের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক-একটা সুপ্ত গুজরাট ।
যদি আপনাদের হৃদয়
বড় না করেন
আকাশের দিকে আপনারা যদি না তাকান
এই পোড়া দেশে আরও, আরও, আরও
অনেকগুলো পোড়া গুজরাট তৈরি হবে ।
এতগুলো ভারতের মাঝে দাঁড়িয়ে
আমি ফিরোজা একটি ভারতীয় মেয়ে ।
আপনারা বলতে পারেন, আমি কি দোষ করেছি ?
পৃথিবীর যে কোন দেশের
যে কোন একটি মেয়ের মতো আমি একজনকে
ভালবেসেছিলাম ।
প্রথম যেদিন ওর চোখে চোখ পড়েছিল আমার
আমি জানতাম না ও কে
বিকেল বেলার কলেজ ক্যাম্পাসে যে আলো এসে পড়েছিল
ওর চুলে, তার কোথাও লেখা ছিল ওর ধর্ম ।
হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত
আপনারা বলতে পারেন আমি কি দোষ করেছি ?
আমি যেদিন হাতে মোমবাতি নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম
আমি যেদিন বলে ফেললাম, আমি শরিয়ৎ মানি না
আমি যেদিন বুঝিয়ে দিলাম ভারতবর্ষের মাটিকে
মা বলে জানি, ভারতবর্ষের আকাশকে আকাশ
সেদিন থেকেই শুরু হল অত্যাচার ।
হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত
আপনারা বলতে পারেন, আমি কি দোষ করেছি
ছেলেটাতো আপনাদের
সে কি দোষ করল ?
আমাকে ভালবাসাই তার দোষ ?
ছেলেটার বাড়িতে আপনারা ঢিল ছুঁড়লেন
পার্সেল করে ছেঁড়া চটি পাঠালেন
ওকে হাতে মেরে, ভাতে মেরে
বাড়ির দেয়ালে বড় বড় করে লিখে দিলেন,
‘এসব চলবে না।’
লজ্জা করে না আপনাদের, আপনারা এগিয়ে থাকা মানুষ
এম এ পাশ, বি এ পাশ, ডাক্তার, এঞ্জিনিয়র
আমলা, মাস্টার, আপনারাই গণতন্ত্র নিয়ে ভাষণ দেন
আর প্রয়োজন মতো
গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেন ।
ধিক আপনাদের !
আমি কি ছোটবেলায় ভোরের আলোয় সরস্বতী পুজোর ফল
. কাটিনি ?
আমি কি স্কুলের বারান্দায় বসে
রাত জেগে আলপনা দিইনি ?
আমি কি পাশের বাড়ির হিন্দু বাবার জন্য রক্ত দিইনি ?
ওদের বাড়ির উঠোনে বসে ওদের ছেলেদের অ আ ক খ
. শেখাইনি ?
আমি আরবি শিখিনি, ফারসি শিখিনি, উর্দু শিখিনি
বাংলাই আমার ভাষা, এই ভাষা আমার ভাত, আমার রুটি
আমার চোখের কাজল, আমার পায়ের ঘুঙুর ।
এই ভাষা আমার গোপন চিঠি, যার অক্ষরে অক্ষরে লেগে আছে
আমার চোখের জল ।
আমরা যেদিন বিয়ে করি
সেদিন কফিহাউস গিয়েছিলাম, ও সেদিন
আমাকে ঝোলা ভর্তি করে রবীন্দ্রনাথ কিনে দিয়েছিল
হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে কানে কানে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন
ফিরোজা, তুমি আমার মৃন্ময়ী, তুমি আমার লাবণ্য
তুমি আমার সুচরিতা ।
সেদিন রাত্রে কি হয়েছিল জানি না
কি ঘটেছিল ওদের বাড়িতে, কি ঘটেছিল ওদের পাড়ায়, কি
. করেছিল ওদের
বাবাকাকা – সেটা আজও আমি জানি না
কিন্তু তার পরের দিন ওকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি
ও কোথায় চলে গেল আমি জানতে পারিনি ।
এই আপনাদের ভারতবর্ষ ?
এই আমাদের ভারতবর্ষ ?
আমি একজন সাধারণ মেয়ে
অথচ বাড়িতে পাড়ায় অফিসে পুজোর প্যান্ডেলে
বিয়ে বাড়িতে অন্নপ্রাশনে এখনো আমাকে নিয়ে ফিসফাস
ডাক্তারের কাছে যাই – ফিসফাস
কলেজে ঢুকি – ফিসফাস
বাজারে যাই – ফিসফাস
যে হাউসিং –এ থাকি সেখানেও চলতে থাকে অবিরাম লুকোচুরি ।
ওটা লুকোচুরি নয়, ওটা ফিসফাস নয়
ওটা আপনাদের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক-একটা সুপ্ত গুজরাট ।
যদি আপনাদের হৃদয়
বড় না করেন
আকাশের দিকে আপনারা যদি না তাকান
এই পোড়া দেশে আরও, আরও, আরও
অনেকগুলো পোড়া গুজরাট তৈরি হবে ।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ১১২ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন