শংকর ব্রহ্ম

গল্প - থাপ্পর

শংকর ব্রহ্ম
বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪ জীবনবাদী

থাপ্পর
শংকর ব্রহ্ম

আজ মহালয়া। পুজোর আর বেশী দিন বাকী নেই। সন্ধ্যায় হরনাথ বাবু মেয়ে অনামিকাকে নিয়ে পুজোর কেনাকাটা করতে গড়িয়াহাটে গেলেন। কী ভিড় দোকানগুলিতে ! ভিড় ঠেলে, দোকানে দোকানে ঘুরে, সব কেনাকাটা সেরে একটা ট্যাক্সী করে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেল ওদের। গাড়ি থেকে জামা কাপড়, গেঞ্জি-জাঙ্গিয়ার প্যাকেট, জুতোর বাক্স ঠিক মতোন নামল কিনা তার দেখাশুনা করছিল অনামিকা। কেনাকাটা করা সমস্ত জিনিষ একেএকে নামিয়ে এনে বারান্দার খাটের উপর জড়ো করে রাখা হলো।
সব প্যাকেট খুলে ফর্দ ধরে জিনিষ মিলিয়ে নিতে লাগল অনামিকা। সে একটা প্যাকেট খুলে বলল, বাবা তুমি ক’টা গেঞ্জি কিনেছো?
– কেন? দু’টো। দু’টোরই তো দাম নিলো দোকানদার। কেন কম দিয়েছে নাকি? শালারা যা চোর।
– না, কম দেয়নি বাবা, বেশি দিয়েছে একটা।
– মানে?
– তিনটে দিয়েছে, ভুল করে।
– বেশ বেশ, ঠিক আছে। হরনাথ বাবু মনে মনে পরিতৃপ্তির হাসি হাসলেন। বললেন, নে নে সব ভাল করে মিলিয়ে গুছিয়ে তুলে রাখ।
লিষ্ট ধরে মেলাতে মেলাতে, একটু পরেই অনামিকা আবার বলল, বাবা মায়ের দু’টো শাড়ির মধ্যে একটা শাড়ি তো দেখতে পাচ্ছি না।
– সে কি রে? কোথায় ফেললাম আবার?
সব নিয়ে তো ওই গেঞ্জির দোকানটাই ঢুকেছিলাম শেষে। বোধহয় ওখানেই ফেলে রেখে এসেছি। সেখানে পড়ে থাকলে কি আর ফেরৎ দেবে ওরা? যা চোর সব।

রাতে ভাল ঘুম হলো না হরনাথ বাবুর। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, চা না খেয়েই হরনাথ বাবু ছুটলেন গেঞ্জীর দোকানটার উদ্দেশে। একটা বাসে উঠে গড়িয়াহাটে এসে নামলেন। তারপর রাস্তা পেরিয়ে দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ালেন। দোকান খোলা দেখে মনে মনে খুশি হলেন। দোকানে সকালে কোন ভিড় নেই। দোকানে ঢুকে দোকানদারকে বললেন, দাদা কাল কি এখানে একটা শাড়ির প্যাকেট ফেলে রেখে গেছি?
– হ্যাঁ দু’টো প্যাকেট পড়ে আছে, দেখুন কোনটা আপনার?
– এই তো এই’টা। বাঁচালেন ভাই, কত টাকা দামের জিনিষ।
– দেখুন না কাল সন্ধ্যাবেলা ভিড়ের ভিতর, তাড়াতাড়িতে আমাদেরও দু’একটা জিনিষ চলে গেছে, সামান্য গেঞ্জী জাঙ্গিয়া রুমালের ব্যবসা আমাদের, দু’একটা গেলেই ক্ষতি হয়ে যায় বেশ।
অপরাধী সাব্যস্ত করে যেন কেউ হরনাথ বাবুর গালেই সজোড়ে এক থাপ্পড় কষালেন।

১২০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন