মায়ার পৃথিবী
শংকর ব্রহ্ম
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলাম। একি চেহারা হয়েছে। চোখ দুটো কোটরে বসে গেছে। চোয়ালের হনু বেরিয়ে পড়েছে। চামড়া হয়ে উঠেছে খসখসে। মৃত্যুর ছোঁয়া লেগেছে যেন। শরীরটা ক’দিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে। তবে এতটা খারাপ হয়েছে বুঝতে পারিনি।
মায়ার এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে, ভাবতেই মনটা হু হু করে উঠলো। খারাপ হয়ে গেল খুব।
কিন্তু অনামিকা !
আমার বউ অণু পাগলী, তার কি হবে? আমায় খুব ভালবাসে, আমায় ছাড়া আর কিছু জানে না। খুব কাঁদবে নিশ্চয়ই। হয়তো কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফুলিয়ে ফেলবে।
আর কেকা?
সে হয়তো কোন খবরই পাবে না। দূরে কোথায় যেন বিয়ে হয়েছে তার। কবে যেন সে আমাদের বাড়িতে একটা শিউলী গাছ লাগিয়ে ছিল সে। বালিকা বয়স তখন তার। সে গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে যায়। সকালে গাছের নীচে যেন সাদা সাদা হীরের কুচি ছড়িয়ে পড়ে থাকে। সুগগ্ধে মেতে উঠে বাতাস,আমার জানলার দিকে ছুটে আসে। সেই গন্ধ নিয়ে যদি কেকার কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম। আমি মনে মনে ভাবি তাই।
সেই শিউলিগাছ যুবতী নারীর মতো হাতছানি দিয়ে কাছ ডাকে আমাকে, কেউ জানে না।
শুধু আমি জানি।
তার নীচে কিছুদিন আগেও গিয়ে আমি বসেছি। এখন আর পারি না। সামর্থে কুলায় না। গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকি অসহায়ের মতো। গাছটাও করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
পৃথিবীর সব মায়া কাটিয়ে এবার আমায় চলে যেতে হবে। আমি খুব ক্লান্ত। আর বইতে পারছি না শরীরের ভার। আসুক তবে এই অসহায় ক্লান্তির সমাপ্তি।
আমি এখন তারই প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি যে। একথাটাও কেউ জানে না আর। শুধু আমিই জানি।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন