শংকর ব্রহ্ম

গল্প - এন্টি ব্যুরোক্রাসি ট্যাব

শংকর ব্রহ্ম
সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪ রম্য

এন্টি ব্যুরোক্রাসি ট্যাব
শংকর ব্রহ্ম

চালুনির ভিতর দিয়ে গুঁড়ো পড়ছে,তেমনি কুয়াশা রোদ্দুরে চিকচিক করছে ঘরের চারপাশটা।জানলার বাইরে বকফুল গাছের ডালের উপরে বসে একটা কাক
এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে আর
মাঝে মাঝে কা-কা রবে ডাকছে।
সকালে ঘুম ভেঙে উঠে,হাত মুখ ধুয়ে
প্রথম কাপ চায়ের সঙ্গে খবরের কাগজ পড়া আমার স্বভাব।আজও তেমনি পড়তে গিয়ে একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল।
” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক
বিভাগের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল গবেষনার পর একটি ওষুধ তারা আবিস্কার করেছেন
নাম দিয়েছেন, এন্টি ব্যুরোক্রাটিজম।”
সংবাদটি পড়ে মন চনমন করে উঠল,
সেটি প্রয়োগ করে দেখার লোভ।
সকাল দশটার পর,যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক বিভাগে ফোন করে খবরের সত্যতা যাচাই করে,তাদের থেকে তিনটি ওই ট্যাবলেট আদায়ের প্রতিশ্রুতি পেয়ে, সোজা সেখানে চলে গেলাম।তারপর ট্যাব তিনটি সংগ্রহ করে
সোজা চলে এলাম ‘নবান্নে’ সত্যিকারের ব্যুরোক্রাটের অফিস।
ছোটছোট করে ছাঁটা, একমাথা কালোচুল,মোটা গোঁফ,উচিংড়ে চেহারার
এক ঝকঝকে যুবক,চীফ সেক্রেটারীর পি.এ আমাকে চেনেন,তাই আমাকে দেখেই বললেন,মিঃ মিটারের( মিত্রের) সঙ্গে আজ আর দেখা হবে না,উনি আজ খুব ব্যস্ত থাবেন সি.এম-এর সঙ্গে জরুরী
মিটিংয়ে।
ঠিক সেই সময়ে চিফ সেক্রেটারীর আর্দালী এককাপ চা নিয়ে তার ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন,আমি তাকে আড়াল করে লুকিয়ে একটা ট্যাব তার চায়ের কাপে ফেলে দিলাম।
প্রতীক্ষায় রইলাম কি ঘটে তা দেখবার জন্য। দশ মিনিটও পার হয়নি,হঠাৎ দেখি চিফ সেক্রেটারী ঘর থেকে বেরিয়ে আমায় দেখতে পেয়ে, অমায়িক হাসি হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।অনুরোধের ভঙ্গিতে বললেন,প্লীজ বলুন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?এমন ভাবে প্রশ্নটা করলেন,যেন আমি তার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ।তিনি আরও বললেন, আপনার জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব,খুশিতে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।পরম আগ্রহে তিনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন,হাত টেনে নিয়ে চেপে ধরলেন।যেন নিপীড়িত অসহায় মানুষকে
ক্রোড়ে ঠাঁই দিলেন।
ছবির মতো সাজানো,তার চেম্বারে হাত ধরে আমাকে নিয়ে গেলেন।যন্ত সহকারে
গদিআঁটা চেয়ারে বসালেন।নরম গদিতে
শরীর ডুবের যাচ্ছিল।
বিনীত কন্ঠে তিনি আবার বললেন,এবার বলুন স্যার, আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?
– আমার একটা সার্টিফিকেট দরকার ছিল।
– মাত্র একটা?
– আপাতত একটা পেলেই চলবে।
– বেশ বেশ, এ’তো আমার সৌভাগ্য।
– এক সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাব আশা করি
– ছি ছি, কি যে বলেন,একটা সার্টিফিকেটের জন্য এক সপ্তাহ লাগবে কেন? আপনি এক্ষুনি পেয়ে যাবেন।
– আজ খুব ব্যস্ত আছেন শুনলাম,আমি না হয় কালই আসব।
– সে কি কথা,একটা সার্টিফিকেটের জন্য দু’বার আসবেন কেন?প্লীজ আপনি একটু
বসুন ….
দরজা দিয়ে তিনি বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
শুনলাম পাশের ঘরে তিনি তার পি.এ-কে বলছেন,আমাকে দেখলেই আপনি দম দেওয়া পুতুলের মতো লাফিয়ে ওঠেন কেন?আর সব সময় মুখে অমন পুরো করে মাখমের প্রলেপের মতো বিনয়ের হাসি মাখিয়ে রাখেন কেন?আজকে দেখছি সাক্ষাৎ প্রার্থী মাত্র একজন।
সম্ভাব্য সব জায়গায় খবর নিন,আর কারও কোন প্রয়োজন আছে কি না আমার কাছে।
কোন দরখাস্ত চিঠিপত্র থাকলে রেডি করে রাখুন,এই ভদ্রলোকের সার্টিফিকেটটা দিয়েই আমি সে সব নিয়ে বসব।
এরপর তার ঘর থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম।
আরও দুটি ট্যাব সঙ্গে আছে।
দেখি শিল্প মন্ত্রীর আর্দালী,চায়ের কাপ নিয়ে তার ঘরের দিকে যাচ্ছে। এ’,সুযোগ
ছাড়া যায় না।দিলাম একটা ট্যাব তার কাপে ছেড়ে সবার অলক্ষ্যে।দেখি কি প্রতিক্রিয়া হয় তার?
দশ মিনিট পেরিয়ে গেল,পনেরো মিনিট পার।আমি ভাবলাম ট্যাব আর কাজ করলো না।দেখি তিনি বেরিয়ে আমাকে দেখতে পেয়েই বললেন,আসুন আপনার ফাইলটা অনেকদিন ধরেই জমি জটিলতায় আটকে ছিল,আজ নিয়ে যান
আমি সই সাবুদ করে দিচ্ছি।আপনাকে অনেকবার আসতে হয়েছে বলে আমি দুঃখিত।
– না না এ’ভাবে বলছেন কেন? আপনি কত ব্যস্ত মানুষ।
– ছিঃ এ’ভবে লজ্জ্বা দেবেন না।আপনাদেন সহায়তা করাই তো আমার কাজ।না করতে পারলে আমার থাকা আর না থাকা।
দু’মিনিটের মধ্যেই দু’বছরের আটকে থাকা ফাইল সই কর তিনি ছেড়ে দিলেন।ফাইলটা নিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম।পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের জোয়ার আসছে শুনে,
একটি সার কারখানা খোলার জন্য,এক একর জমির জন্য আবেদন করেছিলাম।
আজ তার পারমিশন পেয়ে গেলাম।
আরও একটি ট্যাবলেট এখনও আছে আমার কাছে।কারও প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতে পারেন আমার সঙ্গে,
এক্সপায়ারী ডেট ফুরাবার আগে।

০৬.০৮.১৯.
—————————-
#রম্যগল্প // (৩৫). নোবেল চুরি রহস্য

নোবেল চুরি রহস্য
শংকর ব্রহ্ম

‘নোবেল চুরির তদন্তে নেমে সিবিআই,
রহস্যের কোন কিনারা করতে না পেরে,
হাল ছেড়ে দিয়ে,হাত গুটিয়ে নিয়েছে।’
– তথ্য সূত্র( নিউজ এজেন্সী)

রবি স্বর্গের বাগানে(Eden Garden) বেড়াতে বেড়াতে,একটি পারিজাত ফুলের গাছ দেখে, সেদিকে এগিয়ে গেল।দেখল গাছের নীচে কয়েকটি টাটকা ফুল পড়ে আছে।উপরে তাকিয়ে দেখল অসংখ্য পারিজাত ফুটে আছে গাছ আলো করে।
নীচ থেকে একটি ফুল তুলে নিলো সে, নতুন বৌঠানের খোঁপায় দারুণ মানাবে।
এমন সময় নিত্য গীত বাদ্যের শব্দ কানে এলো তার।ফুলটি হাতে নিয়ে সে আনমনে সেদিকে হাঁটতে থাকে।হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবছিল,নতুন বৌঠানের কথা।
অমরাবতীর(ইন্দ্রপুরী)ভিতরে নৃত্য গীত বাদ্য হচ্ছিল।সেখানে ঢুকতে গিয়ে প্রহরীর বাঁধা পেল সে।
প্রহরী জানাল,রম্ভা মেনকার নাচ দেখতে, গান শুনতে বিশিষ্ট জনেরাই পারেন।
রবি বলল,আমিও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি,নোবেল প্রাইজ পাওয়া মানুষ।
প্রহরী বলল,দেখি?
রবি বলল,সে তো মর্তে আছে।
প্রহরী বলল, তবে নিয়ে এসো সেখান থেকে।
রবি তার কথা মতো মর্তে এসে হাজির হলো,শান্তিনিকেতনে এসে দেখে, প্রথমটায় চিনতে পারেনি,এতটাই বদলে গেছে জায়গাটা।সে যাই হোক,বিশ্বভারতী থেকে সে তার নোবেল পুরুস্কারটি নিয়ে স্বর্গে ফিরে গেলে।ততক্ষণে ইন্দ্রপুরীতে আসর ভেঙে গেছে নাচ গানের।
রবি তা দেখে মনে মনে মুষড়ে পড়ল কিছুটা।

তারপর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে,
নোবেল পুরুস্কারটি আজও ফিরিয়ে দিয়ে যেতে পারেনি সে বিশ্বভারতীতে, কবে যে দিতে আসতে পারবে,তাও ঠিক তার জানা নেই।তাই আজও বিশ্বভারতী নোবেল শূন্য।

১০৯
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন