এই যে পড়ছে রিমঝিম বৃষ্টি অথচ আজ তুমি নেই! না থাকবার খুব সহজ উত্তর হয়ে যেতে পারে- নিয়তি।নিয়তি আসলে কী- বলো তো! নিয়তি হল দুটি আত্মাকে আলাদা করে দেবার এক চিরন্তন পদ্ধতি।হয়তো বলবে এসব শিখেছি কোথায়!
যা শেখার শিখেছি সবটুকুই আমি কবিতার
কাছ থেকে।কবিতা আমাকে শিখিয়েছে
কীভাবে ব্যথা পেতে হয় আর ব্যথগুলোকে গুড়িয়ে ফেলতে হয় ইটের খোয়ার মতন।শিখেছি – ভালবাসলে কতোটা শ্রদ্ধা নিয়ে ভালবাসার মানুষটাকে পুজো দিতে হয়।এসব না হয় থাক।এক জীবনে হয়তো এমনই হবার কথা ছিলো –
তুমি থাকবে দূরে অচিন্ত কোনো পুরে, আর আমি দূরত্ব ছাড়িয়ে ভূবন ডিঙানো এক নক্ষত্রহীন অন্ধকার পৃথিবীর ঠোঁটে।এরকমটাই কি হয় নি, জরি,বলো! অথচ,তোমার মনে আছে -সেই যে সেবার নিঝুম মন্দির ঝুম বৃষ্টি পুজারি নেই কোনো, পুরোহিত মশায়ও যেনো কোথাও বেরিয়ে গেছে কাজে।কেবল , শুধু তুমি শুধু আমি -আটকে পড়ে গেছিলাম মন্দিরের নির্জনতায়।সেদিনই ইচ্ছে করলে তোমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে তোমাকে করে ফেলতে পারতাম চিরন্তনভাবে আমার
শুধুই আমার, আর নিয়তি শুধু অসহায়ের মতো থাকিয়ে থেকে দেখে যেতো এই অলৌকিক দৃশ্যটি।কিন্তু আমরা নই,সেদিনও নিয়তিই
জিতে গিয়েছিলো।মন্দিরের নির্জনতায় তোমাকে আমার সত্যিই খুব দেবী দেবী লাগছিলো।
প্রেমিক পুরুষের কাছে প্রেমিকাকে দেবী মনে হবে এটা নতুন কিছু নয়।নতুন যা-সে হলো-
সেদিন কেনো যেনো আমি বুঝে গিয়েছিলাম -তোমাকে আমার আর কোনোদিনই
সিঁদুর পরানো হবে না! সেই সুযোগ আমার আসবে না আর।এসব হয়ে গেছে বহুদিন আগে – প্রায় ৮ টি বছর।
জানো জরি, আমি অন্তত একজনের কাছে
শ্রেষ্ঠ পুরুষ একমাত্র পুরুষ হতে চেয়েছিলাম –
সেই মানুষটাই ছিলে তুমি।কিন্তু আমি আজও জানি না তোমার কাছে আমি শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে পেরেছিলাম কিনা।তুমি কোখনোইও তা বুঝতে দাও নি- সে কি ইচ্ছে করেই নাকি আমি তোমার কাছে তেমন কেউ ছিলাম না বলে -এসব কেবল তুমিই জানো –
এ কথাগুলো এখন আর প্রাসংগিক নয়।তাহলে প্রসংগটা কি? তোমার আর আমার প্রসংগ
চুকে বুকে গেছে সেই ৮ বছর আগেই।কিন্তু হৃদয়ের গভীরে কোথাও তুমি আমার কাছে চিরকাল প্রাসংগিক হয়ে আছো- এ কথা তোমাকে
বলা হবে না আর।একদিন বুকের ভেতর মুখ গুঁজে বলেছিলে- এই বুক শুধুই তোমার, অন্য কারো নয় কিছুতেই নয়।হ্যাঁ , জরি, এই বুক এখনো তোমারই রয়ে গেছে, শুধু তুমি নেই এই বুকে আর।
তুমি বেছে নিয়েছো অন্য কারো বুক
কিংবা সেই বিখ্যাত নিয়তিই হয়তোবা
বেছে দিয়েছে নিপুন কৌশিলে।আজ এই রিমঝিম বৃষ্টিতে এসবই মনে পড়ছিলো।তোমারও কি এরকম মনে পড়ে যে রকম এই আমার! সে কথা জানবার উপায় নেই কোনো, সমস্ত দরোজাই
বন্ধ হয়ে গেছে।আসলে এইসবই তো কেবল
আমার কথা আমার ব্যক্তিগত একান্তই আমারই ব্যক্তিগত অনুভুতি -এতে কার কি
এসে যায়, এমনকি এসে যায় না হয়তো তোমারও!কিন্তু আমি এই ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না কিছুতেই।
শুধু মনে পড়ে- একটি নির্জন মন্দির ভরা বর্ষণ আশেপাশে কেউ নেই শুধু একটি নারী- জরি, শুধু একটি পুরুষ- অবিনাশ। এক কৌটো সিঁদুর তোমার প্রাগৈতিহাসিক সিঁথি অবিনাশের ভীরুতা কপোল আর ঠোঁট ছুঁয়ে তারপর সিঁথিতে সিঁদুর ছুঁইয়ে না দেয়া এবং অবশেষে
নিয়তির দোহাই দিয়ে নিয়তিকে জয়ী করে দেয়া।মনে পড়ে এইসব ব্যর্থতা এইসব ব্যর্থতা শুধু।
প্রায়শ আনমনে ভেবে চলি – সিঁথিতে সিঁদুর ছাড়া জরি কি কোখনোই অবিনাশের হতে পারে না? এক কৌটা রঙ মানে এক কৌটো সিঁদুর কি জীবনের চেয়েও, ভালবাসার চেয়েও
অনেক বেশি দামি! কে বানিয়েছে জীবন হরণকারী এসকল প্রথাচার!আসলে বিষয়টা কি জানো- বৃক্ষ নদী সূর্য সবারই একটা স্বাধীনতা আছে।
সেই স্বাধীনতা চিরন্তন শাশ্বত – সূর্য পুব দিকেই ওঠে, অস্ত যায় পশ্চিমে -এটা চিরন্তন এটা তার অধিকার।মানুষেরও একটা অধিকার আছে- চিরন্তন এবং শ্বাশ্বত, সেই অধিকারের নাম ভালবাসা। কিন্তু সেই অধিকারের মধ্যে মানুষেরা ঢুকিয়ে দিয়েছে সংস্কার ঢুকিয়ে দিয়েছে সিঁদুর মন্ত্র আরও কত কিছু। এই সিঁদুর মন্ত্র এইসব সংবিধান পুড়িয়ে ফেলতে না পারলে ভালবাসা চিরদিন
হেরে যাবে।জরি, এতোদিনে আমি খুব ভাল করেই জেনে গেছি, কবিতা আমকে জানিয়ে দিয়েছে- সিঁদুর মন্ত্র পুরোহিত আর যাবতীয় প্রথাচারকে যে- ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে জায়েজ করা হয়েছে – এসব সংস্কার নিয়ে সেই ঈশ্বরের কোনোই মাথা ব্যথা নেই, কারণ মাথা ব্যথা থাকলে যে ঈশ্বর নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবেন!আমি বিশ্বাস করি-
ঈশ্বর নিশ্চয়ই এতটা বোকাচোদা নন!
এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৬১ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন