বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব ১
অর্পি হটাৎ ছুটে এসে খপ করে হাতটা ধরে বলতে লাগল “শুনছিস কিছু? বাজারে গন্ডগোল লাগছে! চল দেখবি তাড়াতাড়ি!”
“আরে কিন্তু গন্ডগোলের মধ্যে আমি গিয়ে কি করব? তোর যেতে ইচ্ছা তো তুই যা না! আমারে টানিস নাহ তো।”
“আরে দোস্ত চল না যাই। ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিব। আমি একা মেয়ে হয়ে কিভাবে যাই বলতো। তুই সাথে থাকলে তবেই না যেতে পারি। প্লিজ না করিস না!”
“চল!”
দৌড়াতে দৌড়াতে অর্পি আর আদি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। সম্ভবত এটা ২০০৭। ফেসবুকের এত চল নেই তখনো। কয়জনই বা স্মার্টফোন চালায়। যারা চালায় তাদেরকেই খানদানি বংশের বড়লোক বলা যায়। অর্পি স্যান্যাল আর আদিত্য চৌধূরী দুইজনই তখন স্মার্টফোন চালায়। তারা ছাড়াও গ্রামে আরো জন কয়েক আছে স্মার্টফোন কিনেছে কিন্তু এতটা চালাতে জানেনা। তাই কিছু হলেই ছেলেরা চলে আসে আদিত্যের কাছে আর মেয়েরা অর্পির কাছে। তারা দুইজন মোবাইল টা ভালই বুঝে। কিন্তু পড়াশুনায় দুইজনই কাঁচা। বয়স বেশি না হলেও ২২ এর কাছাকাছি হবে তাদের। অনেক ছোটবেলা থেকে তারা একে অপরের অনেক ভালো সঙ্গী। বেস্ট ফ্রেন্ড বলা যায় আরকি। বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও তাদের পছন্দ আর মতামত কখনো মিল খায় না। আর এটাই তাদের মধ্যে যত ঝামেলার মূল কারণ।
অর্পি ভিডিও করতে করতে বলে উঠে “এই আদি, দেখতো মেয়েটা কী সুন্দর তাইনা?”
ইশারা করে দেখায় এক ১৭ বছরের আশেপাশের বয়সী একটা ফর্সা,মায়াবী চেহারার মেয়েকে। আদি তাকে দেখেই একটু একটু করে গলতে শুরু করে কিন্তু তা যদি অর্পি বুঝতে পারে তাহলে তার খিল্লি উড়াবে এই ভয়ে বুঝতে দেয়না।
“আরে ধুর কি যে বলিস! এর মতো কত সুন্দরী আমার পিছনে ঘুরে তুই জানিস? আর ও কি তোর থেকে বেশি সুন্দরী নাকি?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝছি! আর চাপা মারিস না।”
“আমি চাপা মারি? তুই চাপা মারছ। তোর চৌদ্দ গুষ্টি চাপা মারে!”
“থাক বাবা থাক। তোর সাথে কথা বলাই আমার ভুল হইছে!”
“তো বলিস কেন কথা? বলতে বলছি আমি?”
অর্পি চুপ থাকে। সে জানে কিছু বললে আদি তার চৌদ্দ গুষ্টি ঝেড়ে দিবে। সে নিরবে ভিডিও করে নেয় আর মাঝে মাঝে আড়চোখে আদির চোখের গতিবিধি লক্ষ্য করে। সে খুব ভালো বুঝতে পারে আদি ওর মেয়েটার দিকে একটু পর পর তাকায় আর যেই চোখে চোখ পড়ে যায় অমনি চোখ সরিয়ে নেয়। অর্পি মুচকি মুচকি হাসে আর ভাবে এই যুগেও এত ভীতু ছেলে হয় নাকি!
অর্পি আদির হাত ধরে বলে এত তাকালে যে চোখে কখন পাখিরা টয়লেট করে দেয় কে জানে। একটু তো আবেগ বাকি রাখ কালকের জন্য।
“মানে? কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
“মানে কিছুই না। এত যে বারবার তাকাচ্ছিস ওর দিকে ঢের বুঝতে পারছি প্রেমে পড়েছিস।”
“আরে না এমন কিছুনা। ভাবছিলাম আরকি মেয়েটা কোথা থেকে আসলো আর কোথায়ই বা থাকে। এর আগে তো এই গ্রামে দেখি নাই।”
“হ্যাঁ কারণ ও এই গ্রামে নতুন! কালকে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে দিনাজপুর এসেছে। এস এস সি শেষ তাই এবার আরকি কলেজে ভর্তি হবে এখানে। আমাদের কলেজেই চান্স পেয়েছে।”
“তুই এত কিছু জানলি কিভাবে? চিনিস নাকি?”
“চিনতাম না যদি কালকে কলেজ থেকে ফেরার পর আমাদের ওই পুরনো পুকুর ঘাটে না বসতাম। ও তো ওখানেই ঘুরতে গিয়েছিল আর রাস্তা ভুলে গেছিল। আমিই তো তার বাসায় পৌঁছে দিলাম। অনেক জোড়াজোরি করায় তার বাসায় যাই। এক কাপ কফি অফার করে আর কফি খেতে খেতে সংক্ষিপ্ত পরিচয়পর্বটা সেরে ফেলি।”
“বাহ তুই তো দেখি গভীর জলের মাছ!”
“এখানে গভীর জলের মাছ হওয়ার মত কি দেখলি?”
“নাহ কিছুনা। নিয়ে যাবি ওর বাসায়?”
“এহহ। ওর বাসা তো আমার বাপের টাকায় কিনা যে যখন খুশি যারে খুশি নিয়ে চলে যাবো!”
“থাক তোর নিতে হবেনা। আমিই ওর সাথে যাবো!”
“ওকে দেখা যাবে। ও তো তোকে পাত্তাই দিবে না।”
আদিত্যের মনে গেঁথে যায় কথাটা। তার আবার একটু আত্মসম্মানবোধ বেশি। তাই সে অপমান সহ্য করতে নারাজ। নিজে থেকেই এগিয়ে যায় তার সাথে পরিচিত হতে। কিন্তু মেয়েটা কথা বলতে বলতে কোথায় ভিড়ের মধ্যে মিশে গেছে খুঁজেই পায়না আদিত্য। নিরাশ হয়ে ফিরে আসে। অর্পি হাসতে থাকে!
“কিরে পাত্তা দিলোনা তো?”
“খুঁজেই পেলাম না!”
“কেন উধাও হয়ে গেছে বুঝি?”
“হ্যাঁ। ভিড়ের মধ্যে পাইনি খুঁজে!”
“আচ্ছা আরেকদিন খুঁজিস। আজকে বাড়ি চল।”
“ওর নামটা যেন কি বললি?”
“নাম বলেছি বলে তো মনে পড়েনা!”
“তো কি সরাসরি নাম জিজ্ঞেস করবো? আমার আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই নাকি?”
“আহারে আইছে আমার সম্মানী টা। ওর নাম পিংকি!”
“নামটা তো সুন্দর!”
“কেন? ভাল্লাগছে? বিয়ে করবি ওরে?”
“কি থেকে কি বানিয়ে ফেললি! শুধু বললাম নামটা সুন্দর।”
“সবই বুঝি। আজ নাম সুন্দর কাল চেহারা সুন্দর পরশু মেয়েটাই সুন্দর।”
“আমি কি বলছি একবার ও?”
“আজ বলছ নাই কিন্তু বলতে কতক্ষন?”
“বেশি বুঝিস দুই লাইন! বাড়ি চল।”
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব ২
আদি সচরাচর কলেজে যায়না। পড়াশুনা ভালো লাগেনা তার। কিন্তু ওইদিন সে নিজের ইচ্ছায় কলেজে যায়। তার ধারণা সে কলেজে পিংকির দেখা পাবে। দেখা হলে পরিচয় হবে পিংকির সাথে। কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হতে বেশি সময় নিল না। সে কলেজে গিয়েই শুনতে পায় ক্লাস শুরু হয়ে গেছে আর সে দেরী করে ফেলেছে। তাই তাকে ক্লাসে এসে বসতে হয়। কিন্তু পিংকি তো সবে কলেজে ভর্তি হলো। সে কি আজ কলেজে এসেছে কিনা তারও কোন নিশচয়তা নেই। তাও ক্লাস শেষে আদি পিংকিকে খুঁজতে বের হয়। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসরুমের সামনে এসে থমকে যায় আদি।
“এ কি করছি আমি, একটা মেয়েকে হন্যে হয়ে খুঁজছি যাকে আমি চিনিও না। কি সম্পর্ক আমার তার সাথে। কেন খুঁজছি তাকে?”
পিছন থেকে একটা মেয়ের হাত তার কাঁধে স্পর্শ করে এমনটা অনুভব করে আদি। সাথে সাথে ভয়ে আর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয় আদি। মৃদু স্বরে তোতলায় –
“ক ক কে?”
কোন উত্তর আসে না শুধু একটা মৃদু হাসির আওয়াজ ব্যতীত। আদি আবার জিজ্ঞেস করে-
“ক ক কে আপ আপনি? এ একটা ছেলের গা গায়ে হাত রা রাখতে ল ল লজ্জা করে না আপ আপনার? প পরিচয় দেন আপনার!”
“আরে গর্দভ পিছনে ফিরে চোখটা তো খুলে দেখে নে”
আদি ভয়ে ভয়ে পিছনে ঘুরে আস্তে আস্তে চোখ খুলে আর সামনের মেয়েটিকে দেখে চমকে উঠে।
“তুই? তুই না বললি আজকে কলেজ আসবি না? তোর বাবার শরীর খারাপ?”
“আসলে ভাইয়া এসেছে না জানিয়ে। কালকে রাতে বাবার অসুস্থতার কথা তাকে জানাই। তাই সে সকালে উঠেই ডাক্তার নিয়ে চলে আসে।”
“ওহ আচ্ছা। বাঁচালি বোন। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কে না কে।”
“কি ভেবেছিলেন আপনি? পিংকি আপনাকে লাইন মারতে দেখে ধরে ফেলেছে?”
“এই কি বললি তুই? আমি লাইন মারছিলাম? খাবি এক চর! কিন্তু এটা ঠিক ভেবেছিলাম পিংকি হয়ত..”
“হুঁ বুঝলাম। তা আমি ওনাকে পুরো কলেজ খুঁজে ফেললাম আর উনি এখানে নারী খুঁজতে ব্যস্ত। টা কতদূর এগোলি?”
“এক্ষুনি ওর দেখা পেয়ে যেতাম মাঝখান থেকে তুই এসে ব্যাগরা দিলি।”
“কিঃ আমি ব্যগরা দিলাম?”
“হ্যাঁ টা নয়তো কি?”
“কই পিংকি এখানে দেখা?”
“কই আবার ক্লাসের ভিতর!”
“হুঃ আমি পিংকি কে মাত্র আসার সময় কলেজ গেট থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি!”
“কিহ?”
বলেই আদিত্য এক দৌড়ে চোখের দৃষ্টিসীমার আড়াল হয়ে যায়। সে ঊর্ধ্বশ্বাসে বাড়ির পথে দৌড়াতে থাকে। ভুলে যায় যে তার বইপত্র সে ক্লাসে ফেলে এসেছে। অর্পি এগুলো সামলে নেয়। বাড়ি কলেজ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা। হেঁটে যেতে ছেলেদের প্রায় ১৫ মিনিট আর মেয়েদের ২৫ মিনিট লাগে। আদিত্য তাই ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ায় কেননা সে মনে করে পিংকি এতক্ষণে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তাকে নাগালে পাওয়াই এই মুহূর্তে তার জন্য ব্রহ্মদায়িত্ত। অনেকটা ছুটে ছুটে এসে ক্লান্ত হয়ে যায় সে তাও তার প্রচেষ্টা চালিয়ে রাখে। ঠিক বাড়ির সামনে এসে সে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। কোনমতে নিজেকে সামলে আবার উঠে দাঁড়ায়। তারপর ভাবে একটা মেয়ে কিভাবে এত তাড়াতাড়ি এই দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে চলে আসতে পারে। তাহলে কি?
“নাহ এটা ঠিক করে নি ও। এটার জন্য ওকে শাস্তি পেতেই হবে! কিন্তু আমার এখন আর সেই শক্তি নেই যে আবার কলেজে যাব।”
বলেই সে মাটিতে বসে পড়ে। পাশে থাকা ইটের শুরকি তুলে নিয়ে একটা চ্যাপ্টা পাথরের গায়ে তার নিজের নাম লিখতে চায় সে। তখনই তার মনে পরে পিংকির কথা। সে পিংকির কথা ভাবতে ভাবতে আনমনে পাথরে পিংকির নাম লিখে ফেলে। তার হুস ফিরলে সে বুঝতে পারে ভাবনার জগতে আপনাকে হারিয়ে সে নিজের অজান্তেই পাথরে পিংকির নাম লিখে ফেলেছে। তখন সে উঠে দাড়ায়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করায় তার শরীরে কিছুটা শক্তি ফিরে পায়। বাসা থেকে তার ভাঙাচোরা সাইকেলটা বের করে ক্রিং ক্রিং বেল বাজাতে বাজাতে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। যেতে যেতে আনমনে গান ধরে সে –
“বলব না গো
আর কোনদিন
ভালোবাসো তুমি মোরে”
কম সময়ের মধ্যেই কলেজে পৌঁছায় আদি। গেট এ এসে সাইকেল থেকে নেমে সাইকেল রেখে ভিতরে ঢুকে আর সাথে সাথে পিংকির সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। আদি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। পিংকি তখন তাকে পাত্তা না দিয়ে বাইরের দিকে বের হতে থাকে। আদি ভাবতে থাকে তার এখন কি করা উচিৎ। যদি পিংকির পিছু নেয় তাহলে অর্পিকে শিক্ষা দেওয়া হবে না। আর রাগ কমে গেলে সে অর্পির প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। আর যদি অর্পিকে শিক্ষা দিতে যায় তবে পিংকিকে হারিয়ে ফেলবে। আদি দোটানায় পরে যায়। শেষ পর্যন্ত সে পুরুষ সুলভ সিদ্ধান্তটাই নেয়। পিংকির পিছু নেয়। কিছুদূর এভাবে হাঁটার পর ইস্টদেবের নাম জপ করে পিংকির সামনে গিয়ে দাড়ায় –
“আমি আদিত্য, আদিত্য চৌধুরী”
“পিংকি চক্রবর্তী”
“খুব সুন্দর নাম তো! এলাকায় নতুন?”
“হ্যাঁ”
“আপনার সাদা ড্রেসটা কিন্তু খুব মানিয়েছে আপনাকে।”
“ধন্যবাদ”
“পরী দেখেছেন কখনো?”
“না। আপনি দেখাবেন?”
“আপনার বাসায় আয়না নেই?”
“বুঝলাম আর বলতে হবে না”
“কোন ক্লাসে পড়েন?”
“ইন্টার প্রথম বর্ষ”
“সায়েন্স?”
“আর্টস”
“আপনার ঠিকানাটা? না মানে একদিন বসে কফি খাওয়া যেত!”
পিংকি কোন উত্তর দেয়না। পিংকির হাঁটার গতি বেড়ে যায়। আদি বুঝতে পারে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে।
“এইযে পিংকি! আমি অর্পির বেস্ট ফ্রেন্ড!”
পিংকি যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“তাহলে আমার পিছু নিয়েছেন কেন? অর্পি তো খুব ভালো একটা মেয়ে। তার বেস্ট ফ্রেন্ড এমন ভাবতেও পারিনি।”
“ভুল ভাবছেন। আমি শুধু অর্পির কাছে আপনার নাম শুনেছি। ও এত প্রশংসা করে আপনার যে আপনার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে ইচ্ছা হয়।”
“বুঝলাম কিন্তু আমার যে কোন ছেলে বন্ধু নেই!”
“আমিই তাহলে প্রথম?”
“বন্ধুত্ব করেছি?”
“নীরবতা সম্মতির লক্ষণ নয়কি?”
“আজব তো”
“বড়ই আজব আমি”
“বাড়ি যান। এভাবে একটা মেয়ের সাথে এভাবে হাঁটলে মানুষ খারাপ বলবে।”
“আমরা খারাপ না ভাবলেই হবে”
“মানুষের চিন্তাধারা পরিবর্তন করা সহজ না”
“তার মানে বন্ধু হলাম?”
“একবারও বলেছি?”
“ধরে নিয়েছি”
“তাহলে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে কফির নিমন্ত্রণ রইল!”
“ঠিকানা?”
“অর্পি আমাকে আগেই বলেছিল। ওই নিয়ে আসবে।”
বলেই পিংকি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় আর আদি থেমে যায়।আদি কিছুই বুঝতে পারে না তার সাথে কি হচ্ছে। পিংকি আড়াল থেকে সব দেখছিল। এবার বেরিয়ে আসে
“কিছু ধরতে পারলি না তো?”
“কি শুরু করেছিস তোরা বলতো?”
“প্রেম করবি আর আমরা তোকে ফাঁসানোর চেষ্টা করব না একি হয়?”
“ও আমাকে এভাবে বললো কেন?”
“আমি ওকে তোর পরিচয় দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ও তোর দুর সম্পর্কের এক বোন হয়।”
“কি বলছিস?”
“তুই চিন্তা করিস না অনেক দূর সম্পর্কের বোন। নির্দ্বিধায় প্রেম করা যায়।”
“আরে রাখ তো! বাড়ি চল।”
“এই নে তোর বই। কলেজে রেখেই দৌড়েছিলি।”
“ধন্যবাদ”(বিরক্তি সহকারে)
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব -৩
আদি আর অর্পি দুইজন পিংকির বাসার দরজায় কড়া নাড়ে। বিকালের এই ক্ষণে বাড়িতে আগন্তুকের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই পিংকির বুঝতে অবকাশ রইল না দরজার ওপারে কে দাড়িয়ে আছে। মুখে লজ্জার ভাব নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে দরজার একপাটি খুলে দেয় সে। এক অধীর আগ্রহে অপেক্ষার অবসান ঘটে আদির। এমন মনে হয় তার লক্ষ্য তার সম্মুখে কিন্তু ধরতে পারছে না, ধরতে গেলেই কেমন যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আদি ভাবনার জগতে ডুবে থাকা আদির মুখের সামনে নিজের ডান হাত দিয়ে তুড়ি বাজায়। আদি বুঝতে পারে তার ভাবনার জগতে আপনাকে হারিয়ে ফেলার রহস্য। নিজে নিজেই একটু লজ্জিত হয় সে। অর্পির পিছন পিছন নীরবতা পালন করে ঘরে ঢুকতে থাকে সে।
“মন খারাপ মনে হচ্ছে?”
“না ঠিক। তবে অপ্রস্তুত ছিলাম একটু। এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে বুঝতে পারিনি!”
“মনে হয় ভুল সময় চলে এসে বিব্রত করলাম! দুঃখিত!”
“না এসব কি বলছ অর্পি! খুব একা একা লাগছিল। তোমরা এসেছ ভালই হয়েছে।”
“তার মানে তুমি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলে?” – মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে আদির।
“ঠিক তা না! তবে ভাবতেই পারো। তেমন একটা ভুল ও হবেনা।”
লাজুক হয়ে মৃদু হাসে আদি।
“কি হলো? বসছো না কেন তোমরা?”
“হ্যাঁ বসি। বস আদি!”
তিনজন একসাথে বসে যায়। পিংকি তাদের জন্য চা বানানোর কথা বলে রান্নাঘরে যায়। আদি ঘরটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করে। তার চোখ যায় একটি তৈলচিত্রের উপর। খুব সুন্দর কারুকাজ করা একটি চিত্র যেখানে পলাশীর যুদ্ধের একটি চিত্র অঙ্কিত। আদির ছবিটা দেখে খুব পছন্দ হয়। পিংকি চা নিয়ে ফিরে আসে। সবাই চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে কাপে চুমুক দেয়। কিন্তু আদির চোখ তখনো সেই চিত্রটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। এমন মনে হচ্ছে সেই চিত্রটি তাকে নিজের বশে করে নিয়েছে।
“পিংকি তোমার পিছনে থাকা ওই চিত্রটি কি তোমার নিজের আঁকা?” – চিত্রটিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা নির্দেশ করে আদি জিজ্ঞেস করে!
পিংকি পিছন ফিরে একবার চিত্রটি দেখে। কিন্তু সে আদির প্রশ্নের জবাবে নিরব থাকে। আদি বুঝে যায় পিংকি এই ছবির ব্যাপারে আদিকে কিছু বলতে চাইছে না। তাই আদি আর এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন তুলে না। চা খাওয়া শেষে সবাই মিলে অনেক কথা বলে। এই ফাঁকে আদি আর পিংকির মাঝে একটি ভালো বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠে। সন্ধ্যার আভাস পেয়ে অর্পি বাড়ি ফিরতে আদিকে তাড়া দেয়। আদি দ্বিমত পোষণ করে না। চুপচাপ বেরিয়ে আসে। পুরো রাস্তা সে ওই চিত্রটি নিয়ে ভাবতে থাকে। ওই ঘরে আরো অনেক চিত্র ছিল কিন্তু শুধু ওই চিত্রটিই কেন আদিকে এতটা ভাবুক করে তুলে সে বুঝে উঠতে পারে না। আর পিংকিই বা সেই চিত্রের বিষয়ে কিছু বলতে চাইছে না। সবকিছু তার মাথায় গুলিয়ে যায়। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির সামনে পৌঁছে যায় আদি। ততক্ষণে সন্ধ্যার আলো নিভতে শুরু করেছে। অর্পি তার বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়। দেরী করে বাসায় ফিরায় তাকে অনেক কথা শুনতে হয়।
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব -৪
ভাবনার জগতে হারায় আদি। দেহ শ্রান্ত কিন্তু নয়ন মুদে না তবু, যেন শ্রান্তির কোন লেশমাত্র নেই। কখন দুচোখে ঘুম ভর করে নেয় বুঝতেই পারেনা আদি। মেয়েরা বুঝি এমনই হয়? মায়াবী? নাকি ভালোবাসা মেয়েদের এমন মায়াবী করে তুলে! মনের ভিতর বাজতে থাকে সঙ্গীত “কে তুমি তন্দ্রাহরণী”। কোনমতে দিন চলে যায়, বেলা ফুরোয়। কিন্তু এ তো না পাওয়া বাসনার মতো। পিংকি শত হলেও বোন হয়। ওকে নিয়ে কি এসব চিন্তা করা মানায়। কিন্তু কি আর করবে আদি। প্রেমে পড়লে সাধারণ বোধ বুদ্ধিও নাকি লোপ পায়। এমনটাই হলো আদির সাথেও। সকালে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে মায়ের গলা শুনতে পায় আদি। মা যেন অপরিচিত এক কণ্ঠস্বরের সাথে কথা বলছে। মায়ের কথায় ভয় স্পষ্ট। আদির মনে হতে থাকে কণ্ঠস্বরটি আরো কাছে আসছে। তার আর বুঝতে বাকি রইল না যে অপরিচিত ব্যক্তিটি বাড়ির ঘরের ভিতর ঢুকে পড়েছে। আদি নিজের কক্ষের দরজার ফুটো থেকে লোকটিকে দেখার চেষ্টা করে। বিশেষ কিছু দেখতে না পেলেও ভয়ংকর কালো কুৎসিত চেহারার একটি লম্বা বিভৎসকার লোককে আন্দাজ করতে পারে। বিপদের আশঙ্কা করে শীগ্রই বাবার কক্ষের দিকে ছুটে যায় সে সাহায্যের জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে যা দেখল টা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তার বাবার রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে বিছানার উপর। স্পষ্ট ছুরির দাগটি বুঝা যাচ্ছে। রক্ত তখনো গরম রয়েছে। এই দৃশ্য দেখার পর কিছু মুহূর্তের জন্য সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। মাটিতে বসে পড়ে সে। বাবা বলে চিৎকার দেওয়ার মত শক্তিও যেন তার ভিতর আর নেই। কিছুক্ষণের জন্য সে ভুলে যায় তার মা বিপদে রয়েছে। কিন্তু তার হুস ফিরে এক বিকট হাসির শব্দে। সে দৌড়ে যেতে চায় মায়ের কক্ষে। কিন্তু পা ফসকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে সে। অনতিবিলম্বে আবার উঠে দাড়ায় সে কিন্তু ততক্ষণে যথেষ্ট বিলম্ব হয়ে যায়। আদির মায়ের চিৎকার হটাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আদির বুঝতে বাকি নেই তার মা পরপারে যাত্রা করেছে। আর মাকেও শেষ দেখা দেখার সাহস তার হয় না। সেখানেই মাটিতে জ্ঞান হারায় সে। জ্ঞান ফিরে ক্রন্দনরত অর্পির জলের ঝাপটা খেয়ে। জ্ঞান ফিরতেই অর্পি জড়িয়ে ধরে তাকে। কাঁদতে শুরু করে দুইজনই। ওইদিন শুধু আদি নয়, অর্পিও তার আরেক পরিবারকে হারায়। অর্পি আগেই পুলিশ কল করে দিয়েছিল। তাই পুলিশ চলে আসায় তারা একটু স্বাভাবিক হয়ে লাশ দেখিয়ে দেয়। পুলিশ লাশের ছবি নেয় এবং লাশ সরিয়ে ফেলে। তারপর মার্ডার স্পটকে ঘেরাও করে দেয়। অর্পি ও আদি কে শহরের বাইরে যাওয়ার জন্য নিষেধ করে পুলিশ চলে যায় লাশের পোস্টমার্ডাম করাতে। পোস্টমার্ডাম সম্পন্ন হওয়ার পর জানা যায় তার বাবাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে মারা হয়েছে আর মা কে কঠিন বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারা হয়েছে। পুলিশ আদির বাড়িতে সার্চ চালায়। ছুরি টি খুঁজে না পেলেও পুলিশ একটি রক্ত মাখা ফুলদানি খুঁজে পায় বাইরের বাগানে। পুলিশ আঙ্গুলের ছাপ মিলাতে ফুলদানি টি ল্যাবে পাঠায়। তারপর আদিকে প্রশ্ন করে তাদের কাওকে সন্দেহ হয় নাকি। আদি ভেবেচিন্তে জানায় তার বাবা একজন বড় কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল যখন আদি ছোট ছিল। যদিও সব সাক্ষ্য প্রমাণ আদির বাবার পক্ষে ছিল তবুও মোটা অংকের ঘুষের ও মিথ্যা দলিলের সামনে হেরে যায় এইসব সাক্ষ্য প্রমাণ। হতে পারে সেই পুরনো ঘটনার জেদের জন্য সেই মালিক এইসব করেছে। পুলিশ আদির দেওয়া তথ্যমতে সেই কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিকের সাথে দেখা করে কিন্তু তার আগে আদির ও অর্পির হাতের ছাপ নেয়।
“আসতে পারি?”
“কি ব্যাপার! এই সময় পুলিশ তাও আমার বাড়িতে?”
“একটু চা কফির দাওয়াত রক্ষা করতে এলাম।”
“আমার যতদূর মনে পড়ে আমি আপনাকে চা কফির দাওয়াত দেই নি। তাও এসে যখন পড়েছেন খেয়েই যাবেন নাহয়। বলুন চা নাকি কফি?”
“বাইরে প্রচুর গরম। এক কাপ কোল্ড কফিই হোক।”
“বিশ্রাম করুন। আমি বানিয়ে আনছি।”
মিঃ আকন্দ চলে যায় কফি বানাতে। কিছু সময় পর দুই কাপ কোল্ড কফি নিয়ে হাজির হয়।
“নিন। চিনি কম দিয়েছি।”
“আমার সুগার আছে। চলবে।”
“এবার নাহয় আসার কারণ টা জানা যাক?”
“দশ বছর আগে মিঃ চৌধুরীর মামলাটা নিয়ে একটু কথা বলতে চাইছিলাম।”
“কোন মিঃ চৌধুরী? ঠিক চিনলাম না।”
“চৌধুরী ব্রিকস এর প্রতিষ্ঠাতা মিঃ চৌধুরীর কথা বলছিলাম।”
“ওহ উনি। এক নম্বরের বাটপার আর পল্টিবাজ সাহেব।”
“কেন?”
“আরে স্যার কি আর বলব ওনার বিষয়ে। এই মশাই আমার আকন্দ বিল্ডার্স এর থেকে প্রায় সতের লক্ষ টাকা নেয় একটি বিল্ডিং বানানোর প্রজেক্টে ইট দিবে বলে। কিন্তু ইট তো দেয় ই না বরং ইটের সব টাকা মেরে দেয়। আমি আমার টাকা ফেরত চাইলে আমাকে বলে আমি নাকি তাকে কোন টাকাই পাঠাই না। তারপর আমি আমার ব্যাংকের লেনদেন দেখালে ও আমাকে প্রতারক বলে এবং আমার উপর মামলা দায়ের করে।”
“তারপর!”
“তারপর আমাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সব সাক্ষ্য প্রমাণ আমার পক্ষে থাকায় আমি মামলা জিতে যাই। কোর্ট মিঃ চৌধুরীকে আমার সতের লক্ষ টাকা ফেরত দিতে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরো এক লক্ষ টাকা দিতে আদেশ করে।”
“মিঃ চৌধুরী কি আপনাকে আপনার টাকা ফেরত দেয়?”
“প্রথমে তো দেয় নি। কিন্তু পরে কোর্টের নির্দেশ তো মানতেই হবে। তাই বাধ্য হয়ে আরকি টাকা ফেরত দেয়। এরপর থেকে আর কখনো আমরা ওনার সাথে কোন ডিল করিনি। এর কিছুদিন পরই জানতে পারি তার কোম্পানি নাকি বড় লসে পরে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর আর তার কোন খোঁজ নেয়া হয়নি। তবে এটুকু শুনেছি তিনি এখন শহরে থাকেন না। তিনি শহরের বাড়ি বিক্রি করে গ্রামের দিকে কোথাও একটা বাসা নিয়েছেন।”
“আচ্ছা আজ আসি তাহলে।”
“সেকি আরেকটু বসলে ভালো লাগত।”
“দেখুন আমি আমার ডিউটি করতে এসেছি। আড্ডা দিতে নয়। ভালো থাকবেন। ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।”
“আচ্ছা বলুন তো কোন সিরিয়াস কেইস? হটাৎ মিঃ চৌধুরীর কথা জিজ্ঞেস করতে আমার বাড়ি আসলেন যে?”
“মিঃ চৌধুরী আজকে সকালে খুন হয়েছেন। তাঁর লাশ তার কক্ষে বিছানায় আর তার স্ত্রীর লাশ ঘরের মেঝেতে পাওয়া যায়। তার ছেলেকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় কিছুটা ঘটনা জানা যাবে আশা করছি।”
“খুব খারাপ হলো ওনার সাথে।”
“হ্যাঁ কিন্তু আমরা অপরাধীকে ঠিক খুঁজে বের করব। আজ আসি তাহলে।”
“আসবেন আরেকদিন! কফির দাওয়াত রইল।”
“অবশ্যই। আপনিও শহরের বাইরে যাবেন না অপরাধীকে না শনাক্ত করা পর্যন্ত। বাইরে যাওয়ার সময় হলে আমরাই আপনাকে জানিয়ে দিব।”
“অবশ্যই। আইনের প্রয়োজনে সর্বদাই সাথে আছি। তবেই না আমি এক যোগ্য নাগরিক।”
ওসি মোঃ জামাল হায়দার চলে আসেন। এরপর তিনি নিজের চেম্বারে ঢুকে একটা পুরনো কেস ফেইল খুলে ঘাঁটতে থাকেন। আসলে এটি ছিল মিঃ চৌধুরীর মামলাটার ফাইল। বিশেষ কিছু পাওয়া না গেলেও কোন একটি চিত্র দেখে জামাল সাহেবের খটকা লাগে। সে এই চিত্র আরো কোথাও দেখেছে। কিন্তু কোথায়?
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব ৫
চিন্তা করতে করতে প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছিলেন জামাল সাহেব কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা মনে করে তড়িঘড়ি বেরিয়ে আসেন তিনি। হাবিলদারকে গাড়ি বের করতে বলে তিনি কোথাও একটা চলে যান। হাবিলদার গাড়ি বের করে অপেক্ষা করতে থাকেন। মিনিট তিনেক এর মধ্যেই আবার তিনি ফেরত আসেন এবং গাড়িতে উঠে বসেন। হাবিলদার জিজ্ঞেস করে “কোথায় যাব স্যার।” জামাল সাহেব উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। হয়ত বিষয়টা এমন যে তিনি উত্তর দিতেই চাননি। হাবিলদার তাই বেশিক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা না করে গাড়ি নিয়ে বড় রাস্তায় উঠে। তারপর আবার জিজ্ঞেস করেনে “কোথায় যাব স্যার?” এবারও আগের মতই জামাল সাহেব হাবিলদারের প্রশ্নের তোয়াক্কা না করে চুপ থাকেন। হাবিলদার তাই নিজের ফোন থেকে জামাল সাহেবের নাম্বারে একটি কল দেন। ফোনের রিংটোন শুনে জামাল সাহেবের ভ্রুক্ষেপ নড়ে। তিনি কল রিসিভ করতে গেলে হাবিলদার বলেন
“ওইটা আমার কল স্যার। রিসিভ করতে হবেনা।”
“আপনি এখানে বসে আমাকে কল দিলেন কেন?”
“স্যার আপনাকে ডেকে কোন সাড়াশব্দ পাই নি তাই এই পথ বেছে নেওয়া।”
“শহরের ভিতর চৌধুরী সাহেবের আগের বাসায় নিয়ে চলুন।”
“ঠিক আছে স্যার।”
যানজটের কারণে পৌঁছাতে একটু দেরি হওয়ায় প্রায় বিকেল গড়িয়ে যায়। জামাল সাহেব বাড়ি না ফিরায় তার স্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার উপর জামাল সাহেব ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পান তার স্ত্রী এর ১৬ টি মিস কল। রাস্তায় গাড়ির হর্নের শব্দে তিনি টেরই পান নি। তিনি কল ব্যাক করতে গিয়ে দেখতে পান তার ব্যালেন্স নেই। এবার তিনি রিচার্জ করতে সময় নষ্ট না করে চৌধুরী সাহেবের আগের বাড়িতে ঢুকেন। সেখানে এখন এক নবদম্পতি বসবাস করেন। জামাল সাহেব ভিতরে চলে যান আর হাবিলদার সাহেব বাইরে গাড়ির সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন। জামাল সাহেব তাকেও নিজের সাথে ভিতরে নিয়ে যেতে চাইলে হাবিলদার বলেন গাড়ির কাছে কারও থাকা উচিত। তাই আর জামাল সাহেব কথা বাড়ান না। তিনি বাড়ির ভিতর ঢুকতে যান। তখনই বাড়ির পাশে বাগানে লাগানো একটি বোর্ডের দিকে নজর যায় তার। বোর্ডে থাকা ছবিটি সে আগেও দেখেছে। তার মনে পড়ে ছবিটি সে মিঃ চৌধুরীর বেডরুমের দেয়ালে ঝুলানো দেখেছে। বুঝতে বাকি রইলো না ছবিটি মিঃ চৌধুরীর খুব পছন্দের ছিল। তাইতো হুবহু এমন আরেকটা ছবি বানিয়ে তার বেডরুমে টাঙিয়ে রেখেছেন। তবে এই ছবিটার আগামাথা কিছুই তিনি বুজতে পারেন না। ছবিতে একটি যুবককে দেখা যাচ্ছে। মনে হয় রাজপরিবারের কেউ হবে। তবে ভাবার বিষয় এটা যে মিঃ চৌধুরী এটাকে এই বাসায় ফেলে গেলেন কেনো। অন্য সবের মত এটাও তো নিজের সাথেই নিতে পারতেন। তবে কি তিনি আবার এখানে ফেরত আসতেন বলে ভাবতেন?
ভাবতে ভাবতে তিনি দরজার দিকে পা বাড়ান। কলিং বেল টিপতে যাবেন অমনি তার ফোনে তার স্ত্রীর কল আসে আর কল রিসিভ করতে গিয়ে অসতর্কতাবশত কল কেটে যায় আর জামাল সাহেবের হাত গিয়ে লাগে কলিং বেলের পাশের দেয়ালের খালি অংশে। তার হাতে রং লেগে যায়। তিনি রং নিজের টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেলেন এবং কলিং বেল চাপেন। কিছুক্ষণ পরে এক সুদর্শন যুবক দরজা খুলে দেয়। যুবকের বয়স বেশি নয় এই বিশ বা পঁচিশ হবে। মনেই হচ্ছে না এই দম্পতির সন্তান। কেননা দম্পতিকে দেখলে মনে হয় তাদের বয়স প্রায় চল্লিশ এর কাছাকাছি হবে। জামাল সাহেব ভিতরে গিয়ে বসলেন। ঘর থেকে আওয়াজ শুনা গেল
“কে এসেছে লিখন?”
“বাবা পুলিশ এসেছে।”
“পুলিশ!? আচ্ছা বসতে দে আমি আসছি। অপর্ণা কোথায়? একটু চা করতে বল।”
“মা তো পুজোর ঘরে আছে। আমি করে আনছি।”
মিঃ লিঙ্কন নিচে আসে একটি শার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে। এসে নমস্কার জানিয়ে কথা বলতে থাকে
“নমস্কার! আইনশঙ্খলাবাহিনীর লোকেদের কাজ তো জানতাম অপরাধী ধরা আর দেশে অপরাধ দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আমাকে দিয়ে আপনার কেমন লাভ হতে পারে জানতে পারি কি?”
“বসুন মশাই। দাঁড়িয়েই কথা বলবেন নাকি।”
“এখনো স্নান করি নি। এখন বসবো না নাহয়। আপনি বলুন আমি দাঁড়িয়েই শুনব।”
“আচ্ছা তাহলে আমিও দাঁড়িয়েই বলি।”
“এই ছিঃ ছিঃ। আপনি দাঁড়ালেন কেন। আপনি বসুন না!”
“না মশাই আমি ঠিক আছি। আচ্ছা আপনি তো মিঃ চৌধুরীর থেকে বাড়িটা কিনেছেন।”
“হ্যাঁ। বড্ড ভালো লোক ছিলেন। এক কথায় বাড়ির দাম ঠিক করে কাগজপত্র সব ঠিক করে দিলেন। ওনার সাথে খুব খারাপ হলো।”
“আচ্ছা আপনি কত টাকার বিনিময় বাড়িটি কিনলেন?”
“বাড়ি বাবদ আমার খরচ সত্তর হাজার টাকা।”
“এতো বড় বাড়ি মাত্র সত্তর হাজার টাকায়?”
“মিঃ চৌধুরীর অনেক টাকার দরকার ছিল।”
“বাড়ি তো নয় যেন মহল। এলাহী কান্ড।”
“তা আর বলতে। খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন কিনা। তাই তো বাড়িটা প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়।”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
“অবশ্যই অবশ্যই। নেন ছেলে চা নিয়ে এসেছে চা খান।”
“ধন্যবাদ। আচ্ছা আপনারা কি এই বাড়ি এই অবস্থায়ই কিনেছেন নাকি কিনে এমন বানিয়েছেন?”
“এমনই কিনেছি।”
“আজ তবে উঠি। তদন্তের প্রয়োজনে আপনাদের ডাকা হতে পারে।”
“অবশ্যই আসব।”
“আপনাদের ছেলে ও?”
“হ্যাঁ। কি ভাবছেন এত বড় কিভাবে?”
“হ্যাঁ”
“আমার ও লিখন এর মায়ের প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ। তখন আমরা সবে এন্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি। দুইজন ক্লাসমেট ছিলাম। এর একবছর পর লিখন জন্ম নেয়। তখন আর আমারই বা বয়স কত। এই বাইশ হবে।”
“আজকে আসি তাহলে।”
“আবার আসবেন।”
বেরিয়ে এসে জামাল সাহেব হাবিলদার কে সামনে না পেয়ে ডাক দেন।
“সিদ্ধার্থ! সিদ্ধার্থ!”
“জ্বী জ্বী জ্বী স্যার!”
“কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?”
“কিছু মনে কইরেন না স্যার একটা বিড়ি ধরাইছিলাম।”
“গাড়িতে ওঠেন।”
“জ্বী স্যার!”
জামাল সাহেব নিজের বাড়ির সামনে নেমে যান। তখন বেলা সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রিতে পা দিয়েছে মাত্র। ঘরে ঢুকেই জামাল সাহেব সব কিছু শান্ত শিষ্ট দেখে বুঝতে পারে বিপদ আসন্ন।
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব ৬
জামাল সাহেব খুব শান্ত স্বরে তার স্ত্রী কে ডাকলেন।
“মহারাণী! ও মহারাণী! শুনছো?”
“আমার একটা নাম আছে। শাপলা! এই রিমঝিম পড়তে বস এখনি। নাহলে আমার মতো এমন কপাল গড়তে হবে। জানিস তোর আব্বুর সাথে বিয়ের আগে কত বড় বড় জায়গা থেকে আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আইছিল। ওগো ইয়া ইয়া বড় দালান। চাইর চাক্কা ছাড়া কোত্থাও যায়না। তোর বাপে আমার জীবনটাই শেষ কইরা দিছে। আমি আম্মার শরীল ডা খারাপ আছিন দেইক্ষ্যা তোর আব্বারে বিয়া করতে রাজী হইছিলাম। তখন তো কত বড় বড় কইরা কইছিন প্রত্যেকদিন রাইতের বেলায় আমার লাইগ্যা কত কি লইয়া আইব। এই দেখ এগুলা তোর আব্বার লইয়া আওনের নমুনা।”
“সোনা সরি আমি সরি। এত কাজের চাপ ছিল কি বলব আমি দম ফালানোর টাইম পাই নাই!”
“এই চুপ! একদম অজুহাত দিবেন না। আমি কি কচি খুকি নাকি হ্যাঁ? কিচ্ছুটি বুঝিনা আমি?”
“আচ্ছা আচ্ছা রাগ কইরো না। তোমার লাগি ইয়া বড় একখান গিফট লইয়া আইছি আমি।”
“গিফট? আমার লাইগ্যা? কেন আপনের অফিসে মাইয়া কলিগ নাই নাকি?”
“উহ শাপলা ওইটা অফিস না ডিপার্টমেন্ট বলে।”
“ওই যাই আছে। যেই লাউ সেই কদু। আপনে ওগোরে দেইন যাইন।”
“আরে কি যে কউ তুমি এডি। রাগ কইরো না সোনা একটু পিছে ঘুরো তুমি।”
“রিমঝিম দেখলি? তোর বাপের মতলব। কত বড় হারামি। আমি পিছে ঘুরি আর তোর আব্বায় গিফট এর নাম কইরা আমার পিঠে ছুড়ি মারব। ও আল্লাহ রে তুমি এইডা কার লগে আমার বিয়া করাইলা। ও আম্মা গো এইডা তোমরা আমার কি সর্বনাশ করলা গো।”
জামাল সাহেবের জন্য যদিও এইটা নতুন কিছু না। সপ্তাহে কম হলেও ৩দিন বাসায় যেতে দেরী হয়। ৩ দিনই এই একই কথা শুনে শুনে একেবারে মুখস্ত হয়ে গেছে তার। এখনই বলে দিতে পারে এর পর তার জনাবা কি বলতে চলেছেন। থাক এসব বলে আর আপনাদের সময়ের শ্রাদ্ধ করতে চাইনা। জামাল সাহেব বুদ্ধিমান লোক। ঠিক সুযোগ বুঝে উপহারটি মিসেস শাপলাকে পড়িয়ে দেয়। জানেন সেটা কি? একটা বেলী ফুলের মালা। চুলে গুজে দেয় জামাল সাহেব তার বিবির। বুদ্ধিমান না হলে কি সম্ভব? সচরাচর কোন পুরুষ পারে না। আর বুদ্ধিমান হবেনই না বা কেন! শত হোক পুলিশ বলে কথা। মান ভঞ্জনের পালা শেষ হলে পুলিশ সাহেব খেতে গেলেন। ভাত নিয়ে যখন তাতে মাছের তরকারি ঢালতে যান একটু চমকে উঠেন। তবে কেন তা জানা জায়নি। তিনি স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যান।
রাত তখন বারোটা। আদি একা একা এত বড় একটা বাড়িতে। তার ভয় তাকে ঘুমাতে দিচ্ছেনা। বার বার সে ভয়ে কুকড়ে উঠছে। শেষ রাতে তার চোখ লেগে যায়। সকাল ৮টায় তার ঘুম ভাঙ্গে তার বাবার ড্রাইভার আংকেলের গাড়ির হর্ণের শব্দে। আদির পরিবারের একটি ঐতিহ্যবাহী গাড়ি ছিল। যদিও সেটা গাড়ি কম ভাঙারী বেশি বলা হত। তবুও পুরনো কালের জিনিস তো সহজে নস্ট হয়নি। দিব্যি চলে। এই গাড়িটা ছিল আদির বাবার দাদুর। ব্রিটিশ পিরিয়ডের গাড়ি এটা। এটা কিনার জন্যও অবশ্য অনেকেই আদির বাবার কাছে সুপারিশ করেছিল কিন্তু লাভ হয়নি। তিনি তো গাড়ি বেচতে নারাজ। পূর্বপুরুষদের গাড়ি বলে কথা। বংশের ঐতিহ্য। আদি দরজা খুলে দিলে ড্রাইভার সাহেব ভিতরে প্রবেশ করেন।
“বাবা আদি! আমি তোমার বাবার আন্ডারে অনেক বছর ধরে চাকরি করেছি। তোমার বাবা খুব ভাল মানুষ ছিলেন। কিন্তু বাবা এখনকার যে পরিস্থিতি আমার মনে হয় আমার এখন চাকরিটা ছেড়ে দিলেই ভালো হয়। এমনিতেই তুমি তো আর আমাকে মাইনে দিতে পারবে না। আমার তো এইটা থেকেই বউ বাচ্চাকে ভরণ পোষণ যোগাতে হয়। কিছু মনে করো না বাবা।”
“মোশতাক আঙ্কেল আমার জন্য একটা কাজ করবেন?”
“বলো বাবা। কি কাজ?”
“আঙ্কেল আমাকে গাড়ি চালানো শিখাতে হবে আপনাকে। কয়েকদিন সময় দিতে পারবেন। আমি আপনাকে টাকক দিব।”
“বাবা আমি বলি কি এখন তোমার যে মানসিক অবস্থা, তোমার গাড়ি চালানো শিখা ঠিক হবেনা। আজকে আসার সময় ওইযে তোমার ফুফু আছেনা পাশের গলির পরের গলিটায় বাসা?”
“হ্যাঁ, সুবর্ণা পিশি। আমার বাবাকে ছোটবেলা থেকে চিনেন। আসলে আমার বাবার তো কোন বোন নাই। উনিই আমার বাবাকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসতেন।”
“উনি আমাকে বলছিলেন তোমাকে একটু তার বাসায় দিয়ে আসতে। তুমি বরং ওনার বাসায় ঘুরে আসো।”
“না আঙ্কেল এটা কীভাবে সম্ভব। এই বাসা ফেলে রেখে যাওয়া এটা ঠিক হবেনা।”
“আরে বাবা তুমি চিন্তা করোনা। তোমার এই আঙ্কেল আছে তো। এই মোশতাক থাকতে তোমার কিসের চিন্তা।”
“মানে? আপনি কি করবেন?”
“বাবা তুমি আমার কাছে চাবি দিয়ে নিশ্চিন্তে পিশির বাসায় ঘুরে আসো কয়েকদিন। আমি এখানে দেখভাল করব।”
“আচ্ছা আর কাজের বুয়া আসলে তাকে দিয়ে পুরো বাড়ি একবার পরিষ্কার করিয়ে রাখবেন।”
“আচ্ছা বাবা তুমি কোনো চিন্তা করোনা।”
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব ৭
মোশতাক মাহমুদ আদির থেকে বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবিটা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। আদি তার ব্যাগ গোছানোর কাজে লেগে যায়। অল্প কিছু জামা আর কালো একটা টিশার্ট ভরে নেয় ব্যাগের ভিতর। সাথে ২টা জিন্সও ঢুকিয়ে নেয়। ব্যাগ গোছানো শেষে নাস্তা করে বাড়ির দরজায় তালা লাগাতে যাবে তখনই ড্রাইভার আংকেল হাজির।
“আংকেল আপনি আবার এলেন? কিছু ফেলে গেলেন নাকি? আমি তো এইমাত্র তালা লাগাচ্ছিলাম।”
“আরে না না। আমি তো তোমাকে ড্রপ করে দিব বলে আসলাম। রাস্তা ঘাটের ব্যাপার তার উপর তোমার যা মানসিক অবস্থা যদি কিছু থেকে কিছু হয়ে যায়। তাই ভাবলাম তোমাকে দিয়ে আসি।”
“ভালো করেছেন আংকেল। চলেন।”
আদি গাড়ির দরজা টেনে উঠে যায় গাড়িতে। মোশতাক সাহেব সামনের ওয়াচ গ্লাসটা একবার ভালোমতো পরিষ্কার করে নেন।
“আচ্ছা বাবা একটা কথা বলি? তুমি কিনা আমার ছেলেরই মতো নেহাত তাই নাইলে কিন্তু বলতাম না।”
“জ্বী বলেন!”
“তোমার বাবা এমনিতে খুব ভালো মানুষ ছিলেন কিন্তু খুব কিপ্টেমি করতেন। আমি একদিন ১০০ টাকা বাড়তি চেয়েছিলাম। জানো কি বলেছেন?”
“কি?”
“বলেছেন আজ ১০০ টাকা চাইলাম কাল চাইল ৫০০ টাকা। তারপর যখন একদিন টাকা চেয়ে না পাব তখন নাকি তার ঘরেই সিঁদ কাটব। তুমিই বলো বাবা টাকা দিবেনা ভালো কথা বললেই তো হয়। এভাবে কেউ অপমান করে?”
“কি আংকেল আপনিও না! আপনি তাও চিনেন বাবাকে। আপনি বাবার কাছে কেন চাইতে গেলেন? আপনি আমার কাছে চাইতেন। আমি বাবার থেকে নিয়ে দিতাম।”
“আরে সামান্য ১০০ টাকার জন্য শুধু শুধু তোমাকে কেন বিব্রত করতে যাবো?”
“যাই হোক বাড়ি এসে গেছে। কথা বলতে বলতে আবার পেড়িয়ে যাবেন না যেন।”
“গত ৪০ বছর ধরেই তো গাড়ি চালাচ্ছি। আজ পর্যন্ত কথা বলতে বলতে ঠিকানা ভূলিনি। তুমি চিন্তা করোনা।”
“হ্যাঁ আপনি তো আবার একটু বেশি স্মার্ট টেকনোলজির তৈরী।”
“কেন আমার কি নিজের বুদ্ধি নাই? নাকি পড়াশুনা করি নাই বলে মেধা দুর্বল?”
“আরে আমি ওটা বলতে চাইনি। আপনার অনেক বুদ্ধি। এবার খুশি?”
“থাক আর বলতে হবেনা। বাড়ির গেইট চলে এসেছে। এবার নামো। সবাই অপেক্ষা করছে। যাও মজা করো।”
“ধন্যবাদ আংকেল। বাড়ির চাবিটা সামলে রাখবেন। হারিয়ে ফেলবেন না যেন।”
“তোমাদের বাড়িতে এত বছর ধরে কাজ করছি তাই বিশ্বাস করে চাবিটা দিতে পারছ তুমি। এই বিশ্বাস কিভাবে ভাঙ্গি আমি বলতো। এই চাবি এই আমার গলার চেইনে বেঁধে নিলাম। আর কোত্থাও হারাবে না। এবার তুমি যাও মজা করো।”
আদি ব্যাগ নিয়ে নেমে যায়। তার ডানের বাড়িতে আগে একটি বৃদ্ধ লোক থাকতেন। আদি যখনই ছোটবেলায় তার এই পিশির বাড়িতে আসতো এই দাদু তাকে অনেক চকলেট দিত। পাশেই দাদু একটি ছোট দোকান চালাতো। প্রায় ৬ বছর হলো দাদু না ফেরার দেশে চলে গেছেন। দাদু মাঝেমধ্যেই মন খারাপ করে বসে থাকতো। আদি তখন প্রশ্ন করতো-
“দাদু তোমার কি হয়েছে?”
“কিছু না দাদু! চকলেট খাবে?”
“না দাদু। আগে তুমি বলো তোমার চোখে জল কেন?”
“তুমি বড় হলে বুঝবে আদি। তুমি এখনো অনেক ছোট। তুমি এই নাও চকলেট খাও।”
“দাদু কেউ কি তোমাকে বকেছে?”
“না দাদু আমাকে কে বকবে? আমার তো মা বাবা নাই। আর আমি পড়াশুনাও করিনা। কে বকবে আমাকে!”
“তোমার মন খারাপ কেন দাদু?”
“কাছের মানুষ গুলো না ঠিক এই চকলেট গুলোর মতো হয় আদি। যখন তৈরী হয় তখন এগুলোর একজন মালিক থাকে। ওই মালিক এদের বাজারে পাঠায়। এরপর থেকে এরা যখনই যে খদ্দেরের থেকে বেশি মূল্য পায় সেই খদ্দেরের হাতে চলে যায়। যতদিন এরা আমার কৌটোতে ছিল এরা আমার ছিল। এই দেখ আজ তোমার হাতে চলে গেছে। একবারও ওর মনে হয়নি এতদিন যে আমাকে ভালো রেখেছে আমি তাকে কিভাবে ছেড়ে যাই।”
আদি সেদিন এই কথাগুলোকে বুঝতে পারতো না। তার কাছে এগুলা গল্পের মতো লাগত। দাদু শুনাতো আর তার অনেক ভালো লাগত। এজন্যই দাদুকে সে অনেক পছন্দ করতো। আজ আর আদি ছোট নেই। আজ সে সবই বুঝতে পারে। এটাও বুঝে দাদু কেন এমন বলতো। দাদুর বড় ছেলে ক্যান্সারের কবলে পড়ে জীবন হারায়। ছোট ছেলেটা তখন সবে মায়ের পেটে। মেঝো ছেলেটেই তখন সংসারের হাল ধরে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ম্যানেজারের চাকরি নেয়। মাসে ৬০০০ টাকা বেতন। এইটাই তখনকার দিনের জন্য অনেক টাকা। তার উপরের কর্মকর্তাদের বেতনই ছিল ১০০০০ থেকে ১২০০০ টাকা। কোম্পানির সিইও ছিলেন মিস এশা। দেখতে যেমন সুন্দরী গুণেও তেমন নম্র। সবাই কমবেশি তাকে পছন্দ করে। কানাঘুষায় শুনা যায় কোম্পানির মালিকের সাথে নাকি তার সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে সে এই চাকরিটা পায়। কিন্তু মালিক কম বয়সে এক্সিডেন্টে মারা গেলে মালিকের ছোট ভাই সব দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে সেই সবকিছুর মালিক। নাম মোঃ ইরফান খান। দেখতে লম্বাচওড়া, কালো বর্ণ। অত্যন্ত রাগী স্বভাবের হওয়ায় অফিসের সবাই তাকে ভয় পায়। মিস এশার সাথে তার সম্পর্ক একদম ভালো না। কিন্তু চাইলেও তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারবেন না। কেননা তার বড় ভাইয়ের কথানুযায়ী কোম্পানির কিছুটা শেয়ার মিস এশার বাবার। কিন্তু তিনি সেখান থেকে কোনো টাকা নেন না। কেননা তার মেয়ে নিজেই এই চাকরিটা করতে চায়। কিন্তু তার কোনো কারণ কাউকেই বলেন না মিস এশা। শোনা যায় ইরফান সাহেব মিস এশাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু মিস এশা তা পুরোপুরি নাকোচ করে দেয় এবং সাফ জানায় তাকে বিরক্ত করার চেস্টা বা কোনো হুমকি ধামকি দেওয়া হলে সে পুলিশে কম্পলেইন করবে। তাই ইরফান সাহেব তাকে দু’নজরে দেখতে পারেন না। দাদুর মেঝো ছেলে সাদমান সাকিব প্রথম দিনই মিস এশাকে দেখে তার প্রতি দূর্বল হয়ে যায়। সাকিব দেখতে তুলনামূলক ফর্সা ত্বকের অধিকারী হওয়ায় অল্প দিনের ভিতরই মিস এশার আশে পাশে থাকার সুযোগ পেয়ে গেলেন। তাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে বন্ধুত্বে পরিণত হয় যা কিছুদিন পর বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বিয়েতে একটি শর্ত ছিল যে সাকিবকে ঘর জামাই থাকতে হবে। এশার কোনো ভাই-বোন না থাকায় তার বিয়ের পর তার বাবা একা হয়ে যাবেন। তিনি এশার জন্মের সময় তার স্ত্রীকে হারান। তাই এশাই তার কাছে সবকিছু। সাকিব এইটা বাসায় জানালে তার বাবা তার প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়। সাকিব বাবাকে কিছু না জানিয়ে পালিয়ে যায় এবং এশাকে বিয়ে করে নেয়। ততদিনে ছোট ছেলে অনেকটা বড় হয়েছে। দাদু তখন খরচ যোগাতে না পেরে এই দোকানটা দেয় যেখানে আজকের এই বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে আছে। দাদুর ছোট ছেলে সিফাত দাদুর সাথেই দোকান দেখাশোনা করত। তার তখন উঠতি যৌবন। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সে কুবুদ্ধি নিতে শুরু করে। ধূমপানের অভ্যাস গড়ে উঠে সিফাতের।
বহ্নিপতঙ্গ
পর্ব ৮
দাদুর অনুপস্থিতিতে দোকান থেকে সিগারেট চুরি করতে থাকে। তারপর বন্ধুদের সাথে মিলে সিগারেট খায়। কয়েকবার ধরাও পড়েছে কিন্তু দাদুর আদরের সন্তান হওয়ায় কিছু বলতে পারেন নি। ২টা সন্তানকে হারিয়েছেন তিনি। এই শেষ সন্তানকে হারাতে চাননি। কিন্তু এভাবে তো ছেলেটা নস্ট হয়ে যাবে এই ভেবে তিনি সিগারেট বিক্রি করা বন্ধ করে দেন। কিন্তু ততদিনে সিফাতের আসক্তি হয়ে গেছে। তাই সে তার বাবার দোকান থেকে টাকা চুরি করতে থাকে। একসময় এই টাকা চুরির ঘটনা নিয়ে তার সাথে দাদুর অনেক ঝগড়া হয়। এরপর থেকে এই ঝগড়া নিত্যদিনের কর্মসূচিতে লেখা হয়ে যায়। এভাবে সন্তান হারানোর কস্ট আর বয়সের ধকল নিতে না পেরে দাদুর স্ত্রী মারা যায়। এরপর থেকে এই ঝগড়া বিবাদ কমে যায়। দাদু আর সিফাতকে কোনো কিছুতে আটকায় না। এরপর থেকে সিফাত কুসঙ্গের প্রভাবে নেশা করতে শুরু করে। বিভিন্ন নিষিদ্ধ স্থানে তার চলাচল শুরু হয়। রাত করে বাসায় ফিরে। মেয়ে নিয়ে বাইরে রাত কাটায়। এক বেশ্যাকে ভালোবাসতে শুরু করে সিফাত। আস্তে আস্তে তার কুসঙ্গ কেটে যায়। একদিন সে মিথিলাকে কথা দেয় যত টাকাই লাগুক না কেন তাকে সে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাবে। সুন্দর একটা জীবন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবে প্রায় অনেকগুলো মাস সে কাজ খোঁজার অনেক চেস্টা চালায়। কিন্তু কেউ তাকে কাজ দিতে চায়না। কাজ খুঁজার চাপে তার সিগারেট আসক্তিও কমে আসে। বাহ্যিক আচরণেও পরিবর্তন আসে তার। নরক থেকে যেন সে সদ্য মুক্তি পেতে চলেছে। নরকের দরজায় দাড়িয়ে বাইরে আসার চাবি খুঁজতে ছুটছে সিফাত। বারবার ব্যার্থ হতে থাকে সিফাত। এভাবে বার বার হারতে হারতে অনেক কান্না করে সেদিন রাতে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও নেশা করে বাড়ি ফিরে দেখতে পায় দাদু তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। বাবাকে এই অবস্থায় দেখে নিজের জন্মের সময়ের কথা চিন্তা করে সে। নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয় তার এই অবস্থার জন্য। আল্লাহ কেন তাকে একটু ভালো ধনী ঘরে জন্ম দেননি। তখনই মিথিলাকে দেওয়া কথা মনে পড়ে তার। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকায় সিফাত। তখনই মনে পড়ে তার বাবার সম্পত্তির কথা। এগুলো যদি হাতে পায় তবে বিক্রি কম হলেও ১৮ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পাবে সিফাত। এই টাকা দিয়ে মিথিলাকে ওখান থেকে ছাড়িয়ে এনে নতুন করে একটা ব্যবসা দিবে সিফাত। নতুন করে জীবন শুরু করবে। নেশায় জর্জরিত মস্তিষ্ক হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়। সিফাত ঘরে গিয়ে একবার নিজের বাবার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায়। পরক্ষনেই বিদ্যুৎ গতিতে গিয়ে নিজের বালিশখানি এনে বাবার মুখে সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরে। মুখের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ অনুভব করে দাদুর ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ঘুম ভেঙে দাদু মৃত্যুকে সামনাসামনি দেখতে পায় যে তার নিজের সন্তানের রূপ ধরে তার শ্বাস আটকে প্রাণ নিতে উদ্যত হয়ে আছে। দাদুর অস্ফুট স্বরে দু একটি কথাই মাত্র সিফাতের কান পর্যন্ত পৌঁছায়।
“আমারে মারিস না বাজান। আমি তোর নিজের বাপ লাগি।”
পরক্ষণেই সব শান্ত। রাত যেন আরও গভীরতার সাথে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সিফাতের নেশা কাটতে শুরু করে। অজ্ঞান হয়ে যায় সিফাত। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুই মনে করতে পারেনা সে। নিজেকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখে বাবার উপর রাগ করে বাবাকে ডাকতে থাকে। কেন তাকে উপরে উঠিয়ে শোয়ায় নি। বাবার কোনো সাড়া না পেয়ে মাটি থেকে উঠে বসে। চোখ যায় বিছানার দিকে। দেখে বাবা এখনো ঘুমাচ্ছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দুপুর ১২ টা বাজতে চলল প্রায়।
“এত বেলা পর্যন্ত তো বাবা কোনোদিন ঘুমায় নি। তাহলে আজকে কেন? বাবার কি শরীর খারাপ করল? নাকি রাতে ঘুম হয়নি ঠিকমতো। নাহ ওই তো দরজা খোলা। এমনও তো হতে পারে বাবা হয়ত সকালে উঠেছিল দুপুরের খাওয়া শেষ করে ক্লান্তিতে ঘুমাচ্ছে।”
তাই আর ডাক না দিয়ে সিফাত বাইরে গিয়ে প্রাতঃকর্ম সেরে খাবার ঘরে যায়। গিয়ে দেখে রান্না হয়নি। তাহলে কি বাবা আজ রান্না করে নি? এমনটা ভাবতে ভাবতে বাবাকে ডেকে তুলতে ঘরে যায়। গিয়ে বাবাকে ধাক্কা দিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সিফাত। বাবার মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে আর শরীর অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে আছে। একটা দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে শরীর থেকে। ভয়ে ভয়ে নাকের সামনে আঙুল নিয়ে শিউরে উঠে সিফাত। বাবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। মনে পড়ে যায় গত রাতের কথা। সে-ই তো তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। চিৎকার করে বাবা বলে কেঁদে উঠে সিফাত। মাথায় হাত দিয়ে স্তম্ভিত হয়ে বসে পড়ে মাটিতে। সবাইকে জানায় দাদুর শ্বাসকষ্ট ছিল। রাতে টের পায়নি তাই ঘুমের ভিতর মারা গেছে। কেউ সন্দেহ করার আগেই কবর ও জানাজা পড়া শেষ করা হলো। এরপর সব সম্পত্তি বিক্রি করে মিথিলাকে ছাড়িয়ে আনে সিফাত। দুইজনে মিলে নতুন সংসার গড়ে তুলে। সিফাত একটি দোকান দিয়ে বসে আর মিথিলা বাসার কাজ করে। এভাবেই প্রায় ২ মাস চলল। একদিন নিত্যদিনের মতোই সিফাত রাতে বাসায় ফিরে দরজা খোলা দেখতে পায়। ভিতরে গিয়ে মিথিলাকে দেখতে পায়না। চিন্তিত হয়ে দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে যায়। মধ্যরাতে ঘরে চোর আসে। দরজা খোলা পাওয়ায় চোরকে বেশি কস্ট করতে হলো না। চোর যখনই সিন্দুক খুলে তখনই সিফাতের ঘুম ভেঙে যায়। ঘরে চোর দেখে চিৎকার করে উঠে। চোর সিন্দুক খোলা রেখেই পালিয়ে যায়। সিফাত পাশে ফিরে দেখে মিথিলা এখনো আসে নি। এবার তার দুশ্চিন্তা শুরু হয়। পায়চারি শুরু করে সে। তখনই চোরের খুলে ফেলে যাওয়া সিন্দুকের দিকে নজর যায় সিফাতের। সিন্দুকটা খোলা ছিল তাই ভাবল সিন্দুকের ভিতর থাকা সব কৌটাগুলো আবার ঠিক করে রাখা যাক। বাড়ি বিক্রির সব টাকা আর এতদিনের সব জমানো টাকা এই সিন্দুকের একটা কৌটায় রাখা আছে। আরেকটা কৌটায় জমির সব দলিল আছে। সিফাত সিন্দুকের ভিতর কৌটা দুইটা দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হলো যে চোর কিছু চুরি করতে পারে নি। তবে রাতে চোরটা আবার আসতে পারে এগুলো নিতে। তখনই সে কৌটোগুলো অন্য জায়গায় রাখার জন্য বের করে। কিন্তু কৌটোর ওজন অনেক কম মনে হয় তার কাছে। সাথে সাথে কৌটো খুলে দেখতে পায় একটা টাকাও আর কৌটোতে নাই। জমির দলিল ও নাই সেখানে। কিন্তু একটি চিরকুট পায় সে। চিরকুটে লিখা ছিল মিথিলার সাথে অনেকদিন ধরেই এই যুবকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। ওই যুবক সিফাতের থেকে অনেক ধনী। তাই সেই ওই যুবকের সাথে থাকার জন্য সিফাতকে ছেড়ে যাচ্ছে। আর সাথে সব টাকা আর জমির দলিলপত্রও নিয়ে যাচ্ছে। এই জমিতে তার প্রেমিক রাফায়েল কবির তার ৮ তলা ফ্ল্যাট বানাবে। সিফাতের কাছে সে ক্ষমাপ্রার্থী। যত শীঘ্র সম্ভব যেন সিফাত এই জায়গা ছেড়ে দেয়। চিরকুটটি পড়ার পড় সিফাতের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তার বাবাকে সে মেরে ফেলেছে, তার মাও মারা গেছে তার জন্যই, তার এক বড় ভাই মারা গেছে, তার স্ত্রী তাকে ঠকিয়ে অন্যের ঘরে চলে গেছে। এখন তার মেঝো ভাই তার সম্বল। তাই সে তার মেঝো ভাইয়ের কাছে যায় সাহায্য চাইতে কিন্তু তার সাথে দেখাই করতে পারেনি। বুঝতে পারে বাবা ছাড়া আর তার আপন কেউ নাই। কিন্তু সে তার সেই বাবাকেই মের ফেলেছে নিজের হাতে। এই অপরাধের জন্য সে বারবার তার বাবার কাছে ক্ষমা চায় কিন্তু তার বাবা আর ফিরে আসেনা। ওইদিন রাতে সিফাত আত্মহত্যা করে। সিফাতের কবরের উপর দাঁড়িয়ে আছে আদির সামনে থাকা এই বিল্ডিংটি। আদির চোখের কোণায় হালকা জল আসে। আদি চোখ মুছে সামনে আগায়। পিশির বাসায় অনেকদিন পর এলো কিন্তু পিশি তার সাথে একবারও হেসে দুটো কথা বললো না। আদি বুঝতে পারলো বাবা মারা যাওয়ার পর পিশি আর তার আপন রইল না। এই সম্পর্ক শুধু তার বাবার টাকার উপর দাঁড়িয়ে ছিল তা আদি খুব ভালোমতো বুঝতে পারে। ওইদিন রাতেই বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় আদি।
মোশতাক সাহেব চৌধুরী সাহেবের ঘরের চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকে এবং কিছু সময় পর আবার বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে দরজা হাট করে খোলা রেখেই চলে যায়।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন