।। প্রয়াণ দিবসে মাতৃ তর্পণ।।
স্যার বললেন কাজটা ছেড়ে ভালো করলে না তুমি
টেম্পোরারি হোক আর যাই হোক
সেন্ট্রাল গভমেন্টের রিসার্চ প্রজেক্ট এর কাজ
এই বাজারে এমন কাজ কেউ ছাড়ে নাকি
তোমার মতন এম এ পিএইচডি করা
কলেজ সার্ভিস কমিশন এর ইন্টারভিউ দেওয়া
বহু ছেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে কলকাতার রাস্তায়
অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে
সেখানে একটা অত বড় প্রজেক্ট এর কাজ পেয়েছিলে তুমি
কাজটা করতে করতে এভাবে ছেড়ে দেওয়াটা ভালো হলো না তোমার
বললাম আপনি তো স্যার জানেন আমাকে
আমি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে পারবো না থাকতে
আমি মুখ বুজে সব সহ্য করে থাকতে পারবো না
বন্ধুরা বললে তোর এসব সেন্টিমেন্টের দাম দেবে না কেউ
বাস্তবটা তোকে বুঝতে হবে
যুগটা হল আপস এর যুগ
আপস ছাড়া বাঁচতে পারবি না এ যুগে l
আমি সব ছেড়ে ছুড়ে চলে গেলাম গ্রামে
মহানগরী থেকে বহুদূরে আমাদের রাঙ্গামাটির গ্রামে
সেখানে মাটির উঠানে সাবেকি আমলের
একতলা দালানে
শুধু মা আর আমি
আমি আর মা
তারপর আর কি
গ্রামের বাড়িতে পলেস্তারা খসা ভাঙ্গা দালানে
মাটির উঠানে
দিনের পরে দিন রাতের পরে রাত
সে দেখতে দেখতে যেমন যায়
তেমন করে গেল গড়িয়ে
বর্ষার পরে শরৎ
শরৎ এর পরে হেমন্ত
হেমন্তের পরে শীত
বাড়িতে শুধু আমরা দুজন
মা আর আমি
আমি আর মা
এমনি সময়ে একদিন এক শীতের দুপুরে
আমার ছেঁড়া পাজামা সেলাই করতে বসেছেন মা
তখন ওটাই আমার একমাত্র সম্বল
একখানা পাঞ্জাবি আর পাজামা
বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে
সুচ সুতো দিয়ে ছেঁড়া পাজামা সেলাই করতে করতে
হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মা বললেন
তাই তো রে আর কতদিন এমন করে কষ্ট করবি তুই
আর কতদিন এমন করে ছেঁড়া পাজামা সেলাই করে পরতে হবে তোকে
আমি আর কি বলি
মা তো কখনো এমন করে বলেনি কথা
মা তো কখনো এমন করে ফেলেনি দীর্ঘশ্বাস l
তারপর সেই শীতের দুপুরে
দুপুর গড়িয়ে বিকেল না হতেই
পুরন্দরপুর পোস্ট অফিসের বিদ্যা পিয়ন এর ডাক
চিঠি আছে চিঠি
মা তখনো ছেঁড়া পাজামা সেলাইয়ে ব্যস্ত
আমি চিঠিখানা হাতে নিয়ে দেখি
কলেজ সার্ভিস কমিশন এর চিঠি
সে চিঠি খুলতেই আমার আকাশ ছোঁয়া আনন্দ
সে চিঠি খুলতেই আমার বিশ্ব জয়ের আনন্দ
তারপর চিঠি হাতে মায়ের পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে
মাকে জড়িয়ে ধরতেই
আমার মায়ের মুখে ভুবনভোলানো হাসি
আমার মায়ের মুখে জীবনজয়ীর হাসি
শ্রাবণ দিনের বাদল বেলার মেঘের পরে
আলো ঝলমল নীল আকাশে রামধনু রাঙ্গা সোনা রোদের হাসি।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন