১ একরের বিশাল এলাকাটি সম্পুর্ণ সুরক্ষিত। কাক পক্ষিও ঢুকা সম্ভব নয়।এখানে একটি বিশাল হলরুমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় নিয়মিত।আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে সেইসব অফিসারের সকলকেই যাদেরকে ট্যাগ দেয়া হয়েছে সাদা ঘোড়া।আর লালঘোড়া ট্যাগধারী অফিসারের মধ্যে থাকবে হাতে গোনা কয়েকজন।
আর তৃতীয় পক্ষ মানে জুনিয়র অফিসারদের মধ্যেও নির্বাচিত বেশ কিছু অফিসার।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।বিভু তার টিম নিয়ে প্রস্তুত।বিভু এখানে প্রবেশ করেছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোক হিসেবে।বিভুর টিমে কারা আছে তা টিমের বাইরে অন্য কারো পক্ষেই ধারণা করা সম্ভব নয়।বিভু তাকিয়ে আছে ঘড়ির কাটার দিকে।সময় হলেই সে বাঁশিতে ফু দিবে।বিভুর সেই বাঁশির শব্দ নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারো কর্ণকুহরে পৌঁছাবে না কারণ সেই শব্দ থাকবে নীরবতার চেয়েও অনেক বেশি মৌন।আর মৌন বলেই কেউ টেরও পাবে না। আজ যা ঘটতে চলেছে এই অঞ্চলের ইতিহাসে এরচেয়ে ভয়াবহ আর নৃশংস ঘটনা হয়তো দ্বিতীয়টি নেই।কিন্তু কেনো এই আশ্চর্যতম ঘটনা!আসলে ঘটনাটি ঘটার পর রহিমা বেগমকে চ্যালেঞ্জ করার মতো আর কেউই থাকবে না।ময়দান ফাঁকা হয়ে যাবে আর রহিমা বেগম একটার পর একটা গোল দিয়ে যেতে থাকবে।রহিমা কি জানে গোল দিয়ে তিনি আসলে জিতার পরিবর্তে একটি ভূখণ্ডের সমগ্র মানুষকে মূলত হারিয়ে দেবেন!সকলকে হারিয়ে দিয়ে কেউ কি একা জিতে যেতে পারে?
ডায়েসে বক্তব্য রাখছেন লাল ঘোড়া ট্যাগ প্রাপ্তদের প্রধান লাল ঘোড়া।তার বক্তব্য শেষ হলেই মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখবেন সাদা ঘোড়া ট্যাগ প্রাপ্ত প্রথম ঘোড়া।
বিভু ঘড়ির কাটায় চোখ রেখে হাত দিয়ে অদৃশ্য বাঁশিটাকে অদৃশ্য হাত দিয়ে স্পর্শ করে নিলো।
বিভু মঞ্চ বরাবর তাকিয়ে আছে চোরাই দৃষ্টিতে।মঞ্চে উঠে এসেছেন প্রথম সাদা ঘোড়া।প্রথম সাদা ঘোড়া কখনোই তার বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেন না।সে সংক্ষিপ্ত কথা আর দীর্ঘ কাজে বিশ্বাসী।বিভু বাঁশি দিয়ে ফেলেছে।বাঁশি হলো – ইলেক্ট্রিসিটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ডিসকানেক্টেড থেকেই কানেক্টেড হয়ে যাবে।বাঁশি দেবার পর ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফিরে এলো।মঞ্চে উঠে এলেন
দ্বিতীয় সাদা ঘোড়া।বক্তব্য আড়াই মিনিট পার হবার সাথে সাথেই মঞ্চের সরাসরি বিপরীত দিকে হলরুমের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেন গায়ে তৃতীয় পক্ষের পোশাক পরা একজন । সামান্য ভেতরে ঢুকেই সে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে কয়েক রাউন্ড বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিলো বক্তব্যরত দ্বিতীয় সাদা ঘোড়ার বুক পাঁজর পাকস্থলী। ঝাঁঝরা করেই সে অদৃশ্য হয়ে গেলো।ঘটনার আকস্মিকতায় সমগ্র হলরুমই কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইলো।কিন্তু লাল ঘোড়াদের কেউই স্তব্ধ হলো না।অন্যরা স্তব্ধতা কাটিয়ে উঠবার আগেই পূর্ব নির্দেশনা মেনে কয়েকজন লাল ঘোড়া পেছন ফিরে তৃতীয় পক্ষের উদ্দেশে এলোপাতাড়ি কয়েকরাউন্ড গুলি ছুঁড়ে নিমিষেই সেইফ এক্সিট নিয়ে হলরুম থেকে বেরিয়ে গেলো।উদ্ভুত আকস্মিক পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ তাদের কর্তব্য ঠিক করতে গিয়ে সামান্য বিলম্ব করে ফেলেছিলো বলেই লাল ঘোড়াদের পালিয়ে যাওয়া সহজ হলো।সাদা ঘোড়া আর লাল ঘোড়াদের পোশাক অভিন্ন।তৃতীয় পক্ষের জানা নেই যে সাদা ও লাল অফিসারকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে গেছে।তারা জানে সকলেই সাদা বা সকলেই লাল কিংবা সকলেই সিনিয়র অফিসার।সম্বিৎ ফিরে এলে তারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশে শুরু করলো ফায়ার। হলরুমে তখন কোনো লাল ঘোড়া নেই,শুধু সাদা ঘোড়া আছে।কিন্তু সাদা ঘোড়ার কাছে সেদিন কোনো অস্ত্র ছিলো না কারণ সাদা ঘোড়াদের অস্ত্র বহন করা নিষেধ করে দেয়া হয়েছিলো।সাদা ঘোড়াদের কেউই জানতে পারে নি যে লাল ঘোড়াগণ গোপনে অস্ত্র বহন করছিলো।
ঘটনার কোনোকিছুই না জানা ও না বুঝতে পারা তৃতীয় পক্ষের মনে হয়েছিলো অফিসাররা নিশ্চয়ই তাদেরকে কোনো এক অজানা কারণে শেষ করে দিতে চাইছে কারণ বেশ কিছুদিন ধরেই তাদেরকে অফিসারদের বিষয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছিলো।বলা হচ্ছিলো অফিসাররা তলে তলে চক্রান্ত করে জুনিয়রদের বঞ্চিত করে ব্যাপক অংকের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছে।বলা হচ্ছিলো অই টাকায় তাদেরও হক আছে।সিনিয়ররা তাদের হক নষ্ট করছে।কিন্তু এই কথাগুলি ছড়ানোর প্রথম সোর্স কে বা কারা কেউই বুঝতে পারছিলো না।হলরুমে আকস্মিকভাবে গোলাগুলি শুরু হওয়ায় তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সেই আত্মসাৎ-এর ঘটনাকে মনে পড়ে গেলো আর যেনো অই মুহুর্তেই এক তীব্র ক্ষোভ অভিমান অসন্তোষ আর প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠলো।বিভু নিরাপদ দূরত্ব থেকে সেই ক্ষোভ আর অসন্তোষ টের পেয়ে মনে মনে কুৎসিতভাবে হেসে উঠেছিলো।
তৃতীয় পক্ষের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।নিরস্ত্র সাদা ঘোড়াগুলি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তৃতীয় পক্ষের প্রচন্ড অপারেশনে ঝাঁঝরা হয়ে লুটিয়ে পড়লো হলরুমের লাল কার্পেট শোভিত মেঝেয়। কার্পেটের লাল রঙের সংগে সাদা ঘোড়াদের রক্তের লাল রঙ মিলেমিশে এলাকার হয়ে গেলো। অপারেশনের পর তৃতীয়পক্ষের অনেকেই কিছুটা হলেও ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলো যেহেতু তারা স্পষ্ট নয় সেদিন ওসব কেনো ঘটেছিলো আর কেনোইবা তারা সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছিলো।আর কে ছিলো সেই ব্যক্তি যিনি সর্ব প্রথম গুলি ছুঁড়েছিলেন মঞ্চ বরাবর। তৃতীয় পক্ষের পোশাক পরিহিত সেই আগন্তুককে তৃতীয় পক্ষের কেউই চেনে না,কোনোদিন কেউ তাকে এ তল্লাটে দেখেছে বলেও মনে হয় না।
তারা তারপর আর জানতেও পারে নি কে ছিলো হঠাৎ উদয় হওয়া সেই আগন্তুক!
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন