শেষ দেখা
শেষ দেখা
মানব মন্ডল

গল্প - শেষ দেখা

মানব মন্ডল
রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫ বিরহ, ভালোবাসা

জীবনের কিছু সম্পর্ককে একদিন হয়তো শেষ করতে হয়। আর সে আমাদের দেখা হয়ে যায়। কেউ চলে যায় দূরে, কেউ হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে। কিন্তু সেই শেষ দেখার মুহূর্তটা—যেখানে চোখে জল, মনে অস্থিরতা আর ঠোঁটে নিষ্ঠুর নিরবতা থাকলেও। বুকে জমে থাকে হাজারটা কথা। কিছু কিছু শেষ দেখার অনুভূতি সবচেয়ে গভীর  স্মরণীয় হয়ে থাকে । শেষ দেখা মানেই হয়তো শেষ না, কিন্তু সেই সময়টা হয়ে ওঠে এক চিরন্তন অনুভূতির প্রতীক।
শেষ দেখাটা শুধু একটি শারীরিক দূরত্ব তৈরি করে। মানসিক ভাবে দূর্বল করে। এটি দুটি আত্মার মধ্যে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করে।কিছু বিচ্ছেদ এতটাই অপ্রত্যাশিত হয় যে, শেষবারের মতো ‘বিদায়’ বলারও সুযোগ পাওয়া যায় না অনেক সময়।
তৃণা কোন দিন হয়তো জানতে পারবে না। কেন আমি তাকে উপহার হিসেবে একটা ঠাকুরের ছবি দিয়েছিলাম। কারণ সে তো কোন দিন জানতে পারবেই না ওটাই আমাদের শেষ দেখা। কারণ ঘটনা চক্র সেই দিন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি ওর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবো।
তবে খুব সতর্কতা সাথে। কারণ হয়তো খুব সৎভাবে ওকে ভালোবাসে ছিলাম। তাই আমাদের শেষ দেখার গল্পের করুণ সমাপ্তি নেই। সাদামাটা একটা বিদায়।
ও রূপালী পর্দায় অভিনেত্রী হতে চায়।   ওকে রোজ দেখেবছন শুট এর ফটো দিচ্ছে কিন্তু বাস্তবে আমি জানি কি অসম্ভব স্টাগেল আছে ওর জীবনে।আমি প্রতিদিনের ধূলিকণার মতো চোখের জল কে কনসিলারের আড়ালে লুকানো ওর মতো মানুষ গুলো কে মন থেকে রেস্পেক্ট করি ।কারণ এরা মানুষকে ঢং করে ভালো মানুষী দেখায় না।বাস্তবে সিম্প্যাথি অর্জন করতে চাওয়া মানুষ গুলি বাস্তবে কিন্তু এমন না।
যারা সিম্প্যাথি অর্জন করতে জানে তাদের মন দিয়ে ভাঁজে ভাঁজে বুদ্ধি জমায় আর কিচ্ছু করার মুরোদ নেই বলে অন্যকে দোষ দিয়ে সিম্পথি কুড়োয়।আসলে চূড়ান্ত ফ্রাস্ট্রেটেড আর পসিটিভ মানুষ গুলোকে দেখে কি হিংসা!দিন শেষে আমরা কিন্তু দেখি সিম্প্যাথি কুড়ানো মানুষ গুলো না বরং হাসতে থাকা মানুষ গুলো হঠাৎ নিজেদের তারা করে দেয়।কারণ এরা নাটক দেখাতে জানে না।হাসতে জানে আর তা দেখে লোকের জ্বলে না।
যাইহোক কাউকে দোষ দিতে চাই না।
হয়তো আমি এই রকম সিম্প্যাথি কুড়িয়ে ওর মন জায়গা করেছিলাম। আমি খুব একটা সুপুরুষ নয়। প্রবাসী হলেও কোন হোয়াইট কলারে চাকরি করি না। অথচ ওর এক্স ছিলো মস্তবড় ডাক্তার।কিন্তু ঐ অতীতের ক্ষত বিক্ষত হবার গল্প শুনিয়ে , ওর কাছের মানুষ হয়েছিলাম আমি। আমি যে ছাপোষা মানুষ সেটা ভালো করেই জানতো ও। কিন্তু ও আত্মবিশ্বাসী ছিলো আমি ওকে ভালোবাসি। আর ও বিশ্বাস করতো আমি ওর জন্য  সব কিছু করতে পারি।
জীবনের চলার পথে  আমরা অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হই। কেউ আসে, আবার কেউ চলে যায়। কিন্তু এমন অনেকেই আমাদের জীবনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, তাদের বাদ দিয়ে নিজের অস্তিত্ব ভাবাই যায় না। আর তারা হলো আমাদের বন্ধু।আমি জীবনের প্রথম অধ্যায়ে ক্যামেরা ম্যান হবার স্বপ্ন দেখতাম। মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে তাই ক্যামেরা ম্যান হবার স্বপ্ন টা পুরণ করার ঝুঁকি নিতে পারে নি। কিন্তু ক্যামেরা ম্যান হবার সময় জীবনের যে স্ট্রাগল পিয়োর্ডটা ছিলো সে সময় আমার কিছু ভালো বন্ধু হয়েছিল।

জীবনের প্রতিটি সময়ে বন্ধুরা আমাদের পাশে থাকে। যখন দুঃখে ভেঙে পড়ি, তখন তাদের সান্ত্বনা আমাদের মনকে শান্ত করে। যখন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হই, তখন তাদের উৎসাহ আমাদের আনন্দকে আরও দ্বিগুণ করে তোলে। তবে আমি হয়তো কিছু টা স্বার্থপর মানুষ। ওদের সাথে যোগাযোগ রাখতাম শুধু মাত্র একটা বুড়ি ছোয়া মতো। তবে এরা প্রাণের বন্ধু হলেও ওদের ছেড়ে  দূর প্রবাসে, চাকরি নিয়েছি তাই ওরা কিন্তু আমাকে এখন ভালো বন্ধু ভাবে । আর আমাকে  মিস করে ।তাই ওর জন্য কাজ চাওয়া, বা ওকে নিয়ে কাজ করবার প্রস্তাব ঠিক মতো দিতে পারনি। কোন দিনও। 
কিন্তু একদিন আমাদের এক জুনিয়র আকাশের সাথে আমার দেখা। ও আমার গল্প নিয়ে কাজ করতে চায় সাথে সাথে আমি ওর সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিলাম। কিন্তু আকাশ বললো ওকে নিয়ে ও কাজ করবে না। ও একটু নামী অভিনেত্রী নিয়ে কাজ করবে। কারণ এখন সব নাম খায়।
মনের মধ্যে একটা জিদ ধরে গেলো ওকে নিয়ে কাজ করবো আমার গল্পে। তাই পুরনো বন্ধু বান্ধব কাছে ছুটে গেলাম। আমার গল্প গুলো নিয়ে।
ওখানে আবিষ্কার করলাম আর একটা নতুন গল্প।
আমার প্রিয় মানুষটার আর একজনের প্রিয় মানুষ। আর সে দাবি করছে আমার জন্য নাকি আমার প্রিয় মানুষটির কিছু হচ্ছে না।
তার দাবি  আমার প্রিয় মানুষটির টাকার দরকার। আমি তাকে টাকা দিই কিন্তু যতটা দরকার ততটা দিতে পারি না। তাই ওদের কাজ গুলো উন্নত মানের হয় না। কিন্তু আমার প্রিয় মানুষটি সব সময় বিশ্বাস রাখে আমি ওর জীবনে ঠিক সুদিন নিয়ে আসবোই। আর এর জন্য ও কোন দু সাহসিক ছবি সুট করে না। করলে ওর প্রিয় মানুষ এবং আমার প্রিয় মানুষটা জুটি অনেক কিছু করে ফেলতে পারতো।
নিঃসন্দেহে আমি আমার প্রিয় মানুষটির ভালো চাই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওর জীবন থেকে সরে যাবো এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবো এমন ভাবে যাতে সে বিপদে পড়ে। এবং আমাকে ঘৃণা করে। সেটা করতে সক্ষম হলাম।
ও দরকার সময় দেশে ফিরবো বলেও ফিরলাম না। ও অনেক কষ্ট পেলো জানি।ওর জীবন থেকে বিদায় দিলো আমাকে। যদিও আমার কাছে বিদায় জানানো সহজ নয়,। হয়তো ওর সাথে শেষ দেখা নয়, আমার শেষ নয়, ‘পরে দেখা হবে’। কিন্তু চেনা মানুষ টা হয়তো অচেনা হয়ে যাবে। অথবা ও এতো সফল হয়ে যাবে, আমার ও খুব চানা বলতেও আমি সাহস পাবোনা। ও জানতো ওটা আমাদের শেষ দেখা, কিন্তু আমি জানতাম ওটা আমার শেষ দেখা।কষ্ট হয়েছিল সেই দিন এটা ভেবে যে, কাছের মানুষটির মুখ আর কখনো আগের মতো করে দেখা হবে না।

,

১৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন