শংকর ব্রহ্ম

গল্প - মহাপুরুষ

শংকর ব্রহ্ম
রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০২৪ অন্যান

মহাপুরুষ
শংকর ব্রহ্ম

আমার নাম অতীশ রায়। একটা সরকারী কলেজে পড়াই।
কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছি,আমি কোন কথা বলতে গেলেই,মুখ দিয়ে আমার বলার কথাগুলো না বেরিয়ে, মহাপুরুষদের মতো বাণী বেরিয়ে আসছে।ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত এবং বিভ্রান্ত।
প্রিয়াকে কথাটা বলতেই, সে ব্যঙ্গ করে বলল, দ্যাখো তুমি আবার কবে মহাপুরুষ হয়ে যাও। বলেই সে তার হাতে ধরা মাটনরোলে বড় করে একটা কামড় বসাল।
প্রিয়া একসময় আমার ছাত্রী ছিল, এখন প্রিয় বান্ধবী, তবে মোটেই প্রেমিকা নয়। কিন্তু ওর আচার আচরণ অনেকটা প্রেমিকার মতো,
বাইরের কেউ দেখে প্রেমিকা ভাবলেও ভাবতে পারে, আপত্তি করার মতো কোন জোড়ালো যুক্তি খুঁজে পাই না আমি।
প্রিয়া মুখের খাবারটা চিবোতে চিবোতে বলল, আচ্ছা তুমি মহাপুরুষ হলে আমি তোমার মূখ্য সেবিকা হবো। আপত্তি করবে না তো বলো?বলেই আবার মুখেের খাবার চিবোতে শুরু করলো।
এ’দিকে আমি মরছি আমার জ্বালায়, আর প্রিয়া সুখাদ্যের স্বাদ নিতে নিতে রঙ্গে মেতে উঠেছে দেখে, আমার খুব রাগ হল মনে।
রাগ দুঃখ মহাপুরুষের সাজে না, মনে হতেই আমি আমার রাগ সংবরণ করলাম।
বললাম, আচ্ছা প্রিয়া তুমি আমার সেবিকা হয়ে কি করবে?
– এখন যা করি, তোমাকে সঙ্গ দেব, বলেই ঠোঁট টিপে হেসে আমার হাতের বাজুতে একটা চিমটি কাটল।
আমি মনে মনে ভাবলাম, মহাপুরুষ হতে গেলে প্রিয়ার সঙ্গ আগে ছাড়তে হবে আমাকে।
প্রিয়া খাবার শেষ করে,ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে, জলের বোতল বের করে দু ঢোক জল খেলো, পুনরায় বোতলটা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে বলল, তুমি কি ভাবছ, আমি জানি।
– কি ভাবছি?
– আমাকে সেবাদাসী করলে, তোমার মহাপুরুষ হওয়ায় বিঘ্ন ঘটবে, এই তো?
– আশ্চর্য! তুমি জানলে কি করে আমার মনের কথা?
– মেয়েরা মনের ভাষা পড়তে পারে।
– আর ছেলেরা?
– শরীরের ভাষা। বলেই প্রিয়া আমার চোখে
চোখ রেখে, মধুর হাসলো।
আমি বিস্ময়ে, বিমুগ্ধ ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওর মনের ভাষা বুঝবার চেষ্ট করলাম।
প্রিয়া শাড়ি ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, রঙ্গের সুরে বলল, এবার চলুন মহ্পুরুষ, বাড়ি ফিরতে হবে।
আমি ভাবলাম, মহাপুরুষেরা শরীর ও মন দুটোর ভাষাই বুঝতে পারেন।
আমি পারি না তাই আমার কোনদিনই বোধহয় আর মহাপুরুষ হয়ে ওঠা হবে না।

১১৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন