ভগবান দর্শন
শংকর ব্রহ্ম
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি মাথার কাছে কে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। মিটি মিটি হাসছেন তিনি।
আমি বললাম, কে আপনি? কি চান? হাসছেন কেন এভাবে?
হাসিটা তিনি সারা মুখে ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমি আবার চাইবো কি রে? আমি ভগবান। সব লোক আমার কাছেই চায়। পুজো দেওয়ার আগে থেকে চাইতে শুরু করে, পুজো শেষ হলেও দেখি, চাওয়া তাদের আর শেষ হয় না। তুই বরং একটা বর চেয়ে নে আমার কাছে।
প্রথমটা বিশ্বাস হয়নি। তারপর চোখ কচলে দেখলাম বার দুয়েক। না জেগেই তো আছি। স্বপ্ন নয় মোটেও।
ভগবানের কথা শুনে আমি এমন বিগলিত হয়ে পড়লাম যে, বিছানা থেকে উঠে বসার আর ক্ষমতা রইল না আমার। কি বর চাইব ভাবতে ভাবতে আমি তখন দিশেহারা।
বিবেকানন্দের কথা মনে পড়ল। ভাবলাম চাই, জ্ঞান দাও, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও।
ভগবান আমার মনের কথা টের পেয়ে বললেন, ওসবের কানাকড়িও মূল্য নেই আজকের দিনে।
ভাবলাম, সত্যিই তো! কি চাওয়া যায় তাহলে?
মানুষ অমরত্ব চায়, আমিও তাই চাইব।
ভগবান আবার বললেন, ওসব তো মৃত্যুর পর পাওয়া যায়। তুই কি এখনই মরে যেতে চাস নাকি?
– না না, মোটেও না। তাহলে কি অর্থ চাইব?
– ধুস। ওসব না থাকলে যত ঝামেলা, থাকলে তার চেয়ে বেশি ঝামেলা। আত্মীয় স্বজনও শত্রু হয়ে ওঠে। লোভে পড়ে খুন করতেও পিছপা হয় না।
– না না, আমি খুন হতে চাই না। দরকার নেই অর্থের আমার। তা হলে, আর কি চাইব?
ভগবান বললেন, আজ সারাদিন ভেবে রাখ। কাল আমি আবার আসব, তখন চেয়ে নিস।
– বেশ। তাহলে, এখন একবার আপনার পা ছুঁয়ে প্রণাম করি?
ভগবান হাঃ হাঃ হাঃ হেসে করে উঠলেন উচ্চস্বরে। বললেন, তুইও আমায় ঘুষ দিতে চাস?
আমি বিচলিত হয়ে বললাম, না না, ছিঃ ছিঃ, আপনি এসব কি ভাবছেন? এটাকে ঘুষ ভাবছেন কেন? আমার ভক্তি – শ্রদ্ধা নিবেদন আরকি !
বলে তাঁর পা ছুঁতে গিয়ে দেখি, তিনি বড় হতে হতে একটা ধোঁয়ার কুন্ডলি হয়ে মিলিয়ে গেলেন কোথায়।
এবার সত্যিই ঘুমটা আমার ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে রাত দুটো চল্লিশ।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন