ভৌতিক সারমেয়
শংকর ব্রহ্ম
ভাদ্র মাসের শেষ। কয়েকদিন ধরে খুব বৃষ্টি হয়েছে এখানে। মাঠের পুরো এলাকাটা বৃষ্টির জলের তলায় চলে গেছে। ধান গাছগুলির মাথা জলের উপরে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে, পুরো মাঠটাই ধানক্ষেত বলে মনে হচ্ছে। দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। ধান গাছের নীচেই প্রায় একবুক সমান জল।
বৃষ্টি থামার পর জল কমতে শুরু করেছে। প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে এবারে। আমরাও মাছ ধরার জন্য ধান ক্ষেতের আলে মাছ ধরার চাঁই পেতেছি।
বাড়ির পিছনেই একটা নালা। খুব গভীর নয়। এক হাঁটু পরিমাণ জল। বর্ষা শেষে এখান দিয়ে উজানের জল নেমে যায়। বাড়ি থেকে দু-তিন’শ গজ দক্ষিণে এবং রাস্তা থেকে পঞ্চাশ গজ পশ্চিমে একটা ঝাঁকড়া কুলগাছ আছে। এই কুল গাছের তলাতেই কয়েক বছর আগে মিনতি সান্যাল হঠাৎ কি দেখে, জ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল এক সন্ধ্যায়। সবাই তাই ঝাঁকড়া কুলগাছটাকে ভূতুড়ে গাছ বলে ডাকে। গাছ থেকে পশ্চিমে নালার অপর প্রান্ত পর্যন্ত পুরো নালাটিই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দুই থেকে আড়াইশ গজ বাঁশের বেড়ার মাঝে মাঝে দশ পনেরো হাত অন্তর অন্তর পাঁচ ছয় ইঞ্চি ফাঁক রেখে, সেই ফাঁকের মুখে একটি করে চাঁই বসানো হয়েছে।
ভাদ্র মাসের এই সময়ে বৃষ্টির পর চাঁইয়ে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। বড় বড় মাছগুলি চাঁইয়ের ভিতর আটকা পড়লে বের হওয়ার জন্য দাপাদাপি শুরু করে, চাঁই ভেঙে ফেলে কখনও কখনও পালায়। দিনে বড় মাছের ঘাইয়ের শব্দ শুনলে তাড়াতাড়ি গিয়ে চাঁই ভাঙার আগেই মাছগুলি তুলে আনা যায়। কিন্তু রাতে পাহাড়া না দিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে, অনেক সময় মাছ চাঁই ভেঙে বেরিয়ে চলে যায়।
বাড়ির দীর্ঘদিনের পরিচারক চাঁদু সন্ধ্যার সময় এসে আমায় বলল. দাদাবাবু আজ রাতে চাঁই পাহাড়া দিতে হবে। আজ অনেক মাছ পড়বে মনে হচ্ছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে বুঝলি?
চাঁদু বলল, আজ সারা দিন অনেক চড়া রোদ উঠেছে। জল অনেকটা শুকিয়েছে। জলে টান ধরছে তো, যে কারণে মাছ ধরা পড়বে। পাহাড়া না দিলে বড় বড় মাছগুলি চাঁই ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারে।
আমি তার কথায় সায় দিয়ে বললাম, ঠিক বলেছিস।
রাত আটটা-ন’টার মধ্যে দু’জনেই ভাত খেয়ে দু’টো বালিশ একটা তালপাতায় চাটাই, একটা নাইলনের শক্ত জাল আর দু’জনে দু’টা বাঁশের লাঠি নিয়ে চাঁইয়ের কাছাকাছি রাস্তায় চলে গেলাম।
রাস্তাটি জল থেকে অল্প খানিকটা উঁচুতে। রাস্তার উপরে চাটাই পেতে বসে আছি। চাঁদনী রাত। অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাতচরা পাখি বিকট শব্দ করে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলে যাচ্ছে। মশার উৎপাতও কম নয়। চাঁদু মশার উৎপাত সহ্য করতে পারে না। সে ধানের খড় দিয়ে ভুতি বানিয়ে, তাতে আগুন ধরিয়েছে। ভুতির ধোঁয়ায় মশার উপদ্রব কিছুটা কমেছে।
অনেকটা রাত হয়ে গেছে। আমি খালি চাটাইয়ের উপর বালিশে মাথা রেখে শুয়ে আছি। চাঁদুও তার বালিশে মাথা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখছে।
রাত বারোটার সময় দুই জনে জলে নেমে চাঁই উঠিয়ে কিছু মাছ তুলে এনেছি নাইলনের জালের ভিতর রেখেছি। সেই জালটা অল্প জলের ভিতর ডুবিয়ে দিয়ে, শুকনো ডাঙায় একটা গোঁজ পুঁতে, তার সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রেখেছি। মাছগুলি বন্দি অবস্থায় কিছুক্ষণ ছটফট করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আস্তে আস্তে ছটফটানি থামিয়ে মরার মতো পড়ে আছে।
রাত একটা দেড়টার নাগাদ দু’চোখে ঘুমে জড়িয়ে আসছে। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়েছে চরাচর জুড়ে। আমার চোখ দু’টি তন্দ্রা আবেশে ঢুলু ঢুলু।
হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে জলের উপর দিয়ে কোনও প্রাণী হেঁটে আসার আওয়াজ কানে ভেসে এলো। আমরা তেমন কোন গুরুত্ব না দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি। জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসার শব্দ ক্রমশই বাড়ছে। বোঝা যাচ্ছ কোন একটা প্রাণী জলের উপর দিয়ে আমাদের দিকেই আসছে। চাটাই থেকে মাথা তুলে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা কালো কুকুর। আমি চাঁদুকে বললাম, কুকুর কি চাঁইয়ের মাছ খাবে নাকি রে?
চাঁদু বলল, আমি তো জানি, কুকুর কাঁচা মাছ খায় না।
— তাহলে পশ্চিম দিক থেকে ওটা এদিকে আসছে কেন?
এ’কথা শুনে চাঁদু শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। পশ্চিম দিকে তাকিয়ে বলল, দেখতে তো কুকুরের মতোই লাগছে। ধান গাছের উপর দিয়ে যেন হেঁটে আসছে মনে হচ্ছে।
চাঁদুর কথা শুনে আমিও উঠে বসলাম। পশ্চিম দিকে মুখ করে তাকিয়ে দেখি সত্যিই ধান গাছের উপর দিয়ে চার পা ফেলে, কালো কুকুরটা যেন হেঁটে এদিকেই আসছে।
চাঁদু হাতের লাঠি উঁচিয়ে বলল, এই শালার পো শালা কুত্তা, আর এদিকে আসবি তো মাজা ভেঙে দেব তোর। চাঁদু একথা বলার পরও একই ভাবে জলের উপর দিয়ে ছপছপ শব্দ করে কুকুরটা হেঁটে আসছে আমাদের দিকেই।
আমি বললাম, এটা কোন বাড়ির কুত্তা রে, এত রাতে পশ্চিমে গেছিলো কি করতে?
চাঁদুও আমার কথায় সায় দিয়ে বলল, হ্যাঁ দাদাবাবু , আমিও তো তাই ভাবছি। এক বুক জল ভেঙে পশ্চিমে কার বাড়ি গেছিল?
চাঁদুর মুখে একবুক জলের কথা শোনার সাথে সাথে আমার সম্বিৎ ফিরে এলো। কুকুর তো কখনও এক বুক জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে পারে না? এক হাঁটু জলেই যেখানে কুকুরের সাঁতার দিতে হয়, সেখানে একবুক জল তো অনেক। নিশ্চয় এটা কুকুর নয় অন্য কিছু হবে। এ কথা মনে হতেই একটা শীতল স্রোত শরীরের ভিতর দিয়ে বয়ে গেল। ভয়ে শরীরটা শিরশির করে কাঁটা দিয়ে উঠল। কাঁপুনির মতো একটা ঝাঁকি দিল মনেও । সাথে সাথে লাঠি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। চাঁদুকে উদ্দেশ্য করে বললাম, চাঁদু তাড়াতাড়ি লাঠি নিয়ে উঠে দাঁড়া। এ শালা তো কুত্তা মনে হচ্ছে না। এক বুক জলের উপর দিয়ে কুকুর কখনও হেঁটে আসতে পারে?
আমার কথা শুনে চাঁদুও সায় দিয়ে বলল, হ্যাঁ দাদাবাবু, ঠিকই তো! এক হাঁটু জলে যেখানে কুকুরের সাঁতার কাটতে হয়, সেখানে এক বুক জলের উপর দিয়ে কুকুর হেঁটে আসবে কী করে? বলেই সে লুঙ্গিটা হাঁটু পর্যন্ত তুলে, মালকোছা দিতে দিতে বলল, দাদাবাবু লুঙ্গি কাছা দিয়ে রেডি হন এবার। এইডা কুত্তা না, অন্য কিছু হবে মনে হচ্ছে! বলেই সে চিৎকার করে উঠল, এই কুত্তা, আর এক পা সামনে আসবি তো, ঠ্যাং ভেঙে দেবো তোর।
কুকুরটা কিন্তু সেই আগের মতো একই গতিতে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে । চাঁদের আলোতে তার কালো কালো লম্বা পা চারটি দেখে ঠিক কুকুরের মতই মনে হচ্ছে আমাদের। আমিও চাঁদুর দেখাদেখি জোরে জোরে ধমক দিয়ে বললাম, এই কুত্তা, আর এক পা সামনে আসবি তো লাঠি দিয়ে মাথা ছেঁচে দেব তোর।
আমরা যত ধমকই ধামক দিই না কেন, কোন কিছুতেই তো কুকুরটা বাগ মানছে না। কুকুরটা একই গতিতে আমদের দিকে হেঁটে আসছে। মুখে যত জোরে জোরেই চিৎকার করি না কেন, ভয়ে আমাদের হাত পা নিজেদের ভিতরেই সেঁধিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে কুকুর প্রায় একশ’ গজের মধ্যে চলে এসেছে। আমাদের থেকে পঞ্চাশ গজ দুরে সেই ভূতুড়ে ঝাঁকড়া কুলগাছটা। যে গাছের নীচে আট দশ বছর আগে মিনতি সান্যাল নামের সদ্য বিবাহিতা মহিলা কি দেখে ভয়ে সেই রাতে দুইবার চিৎকার করে, পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছিল। ওই ঘটনার পরে আরও অনেকেই ভয় পেয়েছে সেই ঝাঁকড়া কুলগাছটার নীচে।
আমরাও মাঝে মাঝে গভীর রাতে এই কুল গাছের নীচেই আলোর নাচানাচি দেখেছি। কুকুরটি এখন ঠিক ঐ ভূতুড়ে ঝাঁকড়া কুল গাছটার কাছাকাছি এসে পড়েছে। ভয়ে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। মনে মনে ভাবছি আরেকটু সামনে এলেই চাঁটাই বালিশ ফেলে রেখেই বাড়ির দিকে দৌড় দেব। চাঁদু একটু দূরে ছিল, ভয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়াল। দু’জনে মিলেই খুব ধমক ধামক দিচ্ছি কিন্তু কোন কিছুতেই সে বাধা মানছে না।
এই দৃশ্য দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম ভিতরে ভিতরে। গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। কুকুর প্রায় কুল গাছের পাশে এসে গেছে। চাঁদু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, দাদাবাবু আর থাকা ঠিক হবে না। এবার বাড়ির দিকে দৌড় দিই চলুন।
আমরা দু’জনে দৌড় দিতে যাবো, এমন সময় পাশের বাড়ি থেকে বাবার বন্ধু ‘পিশাচ-সিদ্ধ তান্ত্রিক’ সিধু জ্যাঠার গলা শোনা গেল। তিনি বললেন, এই চাঁদু কি হয়েছে রে?
চাঁদু জবাব দিল, জ্যাঠা একটা কুকুর জলের উপর দিয়ে আমাদের দিকে আসছে। ধমক দিলেও মানছে না।
এ কথা শুনে তিনি বলল, তোরা ওইখানেই থাক, আমি আসছি তোদের কাছে। তিনি এগিয়ে আসতে আসতে বললেন, এই চাঁদু, কুকুর কি এখনও আসছে রে?
চাঁদু বলল, হ্যাঁ জ্যাঠা এখনও আসছে, থামেনি।
চাঁদুর কথা শুনে তিনি কুকুরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কিরে পোলাপানে মাছ ধরতে এসেছে তোর সহ্য হল না? ভয় দেখাতে এসেছিস। যেখান থেকে এসেছিস সেখানে ফিরে যা, নইলে কিন্তু লাঠির ঘা খেয়ে মারা পড়বি বলছি। মনে করেছিস আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তাই না?
বলেই জোরে জোরে তিনবার গলা খাকারী দিতেই কুকুর থেমে গেল।
কুকুর থেমে যাওয়ায় জলের উপর দিয়ে আর হেঁটে আসার ছপছপ শব্দ আর শোনা যাচ্ছিল না । তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কিরে চাঁদু কুকুরটা কি এখনও আসছে, নাকি থেমছে রে?
চাঁদু বলল, কুত্তা এবার থেমেছে জ্যাঠা।
তিনি তখন বললেন, শুধু থামলে তো হবে না। যেখান থেকে এসেছে সেখানে চলে যেতে বল ব্যাটাকে, বলেই তিনি কুকুরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কিরে ফিরে যাবি, না আমার হাতের মার খাবি? এইকথা বলেই তিনি আবার জোরে গলা খাঁকারি দিলেন তিনবার। তার গলা খাঁকারী শুনে কুকুর আমাদের দিকে ফিরে কিছুক্ষণ কটমট করে তাকিয়ে রইল, তখন দেখলাম তার চোখ দু’টি থেকে আগুনের হলকা বেরিয়ে আসছে যেন আমাদের পুড়িয়ে দেবে। এরপর প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও, উল্টোদিকে ঘুরে গিয়ে কুকুরটি যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকেই আস্তে আস্তে ফিরে যেতে লাগল।
সিধু জ্যাঠা ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে এসে পৌঁছে গেছেন। কুকুর পিছন ফিরে কিছুদূর যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই যেন কোথায় হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না তার। ভাল করে তাকিয়ে দেখি কুকুরের কোন চিহ্নই নেই আর কোথায়ও।
তিনি আবার কুকুরকে উদ্দেশ্য করে ধমক দিয়ে বললেন, কই মিশে গেলিরে আবার হারামজাদা? এই এলাকায় যেন আর না দেখি তোকে। উত্তরদিকে সোজা গোঁসাইয়ের ভিটেয় চলে যা। সেখানে গিয়ে থাকবি। কেউ ওদিকে যায় না।
(সনাতন গোঁসাইয়ের ভিটেটা সম্পূর্ণ পোড়ো । আগে সনাতন গোঁসাই থাকত। এখন কেউ থাকে না ওখানে। আগাছা এবং নানা ধরণের গাছগাছালিতে ভরা। রাতের আঁধারে মাঝে মাঝে ভুতের আলো জ্বলে উঠে আর আলোটা জ্বলে উঠে এক জায়গায় স্থির থাকে না, মাঝে মাঝে সোজা গাছের উপরে উঠে যায় আবার সরাৎ করে নীচে নেমে আসে। যে কারণে এই ভিটাকে সবাই ‘ভুতুরে ভিটা’ বলে জানে। সন্ধ্যার পরে কেউ ঐ ভিটার দিকে, মরে গেলেও একা যায় না।)
তারপর সিধু জ্যাঠা আমাদের বললেন, যা এবার তোরাও বাড়ি চলে যা। বাকি রাত আর এখানে থাকতে হবে না। ওই হারামজাদাকে বিশ্বেস নেই কোনও, আবারও ফিরে আসতে পারে ।
চাঁদু নাইলনের জালটা জল থেকে তুলতেই মাছগুলি একসাথে ফরফর শব্দ করে লাফাতে লাগল। জ্যোৎস্নার আলো পড়ে মাছগুলির রূপালী শরীর ঝলমল করে উঠল।
চাঁদু নাইলনের জালটা আমার হাতে দিয়ে, সে বালিশ দু’টি দু’হাতে তুলে নিল। আর আমি একহাতে নাইলনের জাল আর আমার অন্য হাতে নিলাম তালপাতার চাটাইটা। বাড়ির দিকে রওনা দিলাম, কিন্তু একটা চাপা আতঙ্ক মনের ভিতর রয়েই গেল। সিধু জ্যাঠা যদি সময় মতো না এসে পড়ত, তাহলে যে কী হতো, ভেবে আমি কোনও কুল-কিনারা পাই না। ভয়ে শরীরটা হিম হয়ে আসে আমার।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন