প্রতিদ্বন্দ্বী
শামসুর রাহমান
অনেক পরে তোমার জবানিতে শুনেছি-
তুমি আমাকে প্রথম দেখেছিলে কিয়দ্দূর থেকে
জাতীয় যাদুঘরে মৃণাল সেনের
চলচ্চিত্র উৎসবে। মিলনায়তনের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম
অপেক্ষমাণ। আমার গায়ে ছিল পাঞ্জাবি, পশমি শাল আর
ট্রাউজার্স; পায়ে চপ্পল, চোখে পুরু লেন্সের চশমা।
তুমি ছিলে আদূরে নিজস্ব সৌন্দর্যলীনা,
অথচ রয়ে গেলে আমার না-দেখার ওপারে।
সেদিনই আমাকে ভালো না-বেসেও
আমার একটি স্কেচ তুমি রচনা করেছিলে
মনের বুদোয়ারে, হয়তো অজান্তেই
স্কেচটির প্রতি মঞ্জরিত হয়েছিল তোমার অনুরাগ।
ক্রমান্বয়ে সেই স্কেচ হয়ে উঠল
পূর্ণাঙ্গ এক প্রন্টিং। চিত্রটি যার আদলে সৃষ্ট,
তাকে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এলো
তোমার একান্ত ঘাটে, যেখানে তার জন্যেই
অপেক্ষা করছিল ফুলশাখার দোল, বুলবুলির গান,
ময়ূরের নাচ এবং প্রেম-উদ্ভাসিত দীপাবলি।
তুমি তোমার রচিত চিত্রের সঙ্গে আমার
অবিকল মিল দেখে পৌঁছে গেলে
মনোজ এল দোরাদোয়। তোমার যৌবনের তরঙ্গভঙ্গে
আনন্দের অবিশ্বাস্য রঙধনু দেখে যুগপৎ উল্লসিত এবং
ঈষৎ শঙ্কিত হলাম। আমাদের দীর্ঘ মধুচন্দ্রিমায়
রাহু কালো ছায়া ফেলবে না তো তস্করের চাতুর্যে?
এখন তুমি তোমার মনোজ যে-সৃষ্টি আমি, তাকে
আর এই প্রকৃত আমি-কে দেখছ খুঁটিয়ে; ঘুরে ফিরে
করছ তুলনা, আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছ আমার নিজেরই বিরুদ্ধে।
এখন আমি নিজেরই অসম প্রতিদ্বন্দ্বী। তোমার রচিত
চিত্রের কাছে পরাজিত হচ্ছি বারবার; মতাদর্শের সংঘর্ষে তোমার
ধিক্কার এবং ঘৃণার লুপ্তপ্রায় আমার প্রকৃতি।
তোমার রচিত আমার প্রতিকৃতি থেকে খসে খসে
পড়ছে রঙ; চোখ, নাক, কান উধাও।
এই মুহূর্তে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে
তুমি দেখছ কনিষ্কের মূর্তি-নিঃসঙ্গ, ভাঙাচোরা।
তুমি আমাকে প্রথম দেখেছিলে কিয়দ্দূর থেকে
জাতীয় যাদুঘরে মৃণাল সেনের
চলচ্চিত্র উৎসবে। মিলনায়তনের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম
অপেক্ষমাণ। আমার গায়ে ছিল পাঞ্জাবি, পশমি শাল আর
ট্রাউজার্স; পায়ে চপ্পল, চোখে পুরু লেন্সের চশমা।
তুমি ছিলে আদূরে নিজস্ব সৌন্দর্যলীনা,
অথচ রয়ে গেলে আমার না-দেখার ওপারে।
সেদিনই আমাকে ভালো না-বেসেও
আমার একটি স্কেচ তুমি রচনা করেছিলে
মনের বুদোয়ারে, হয়তো অজান্তেই
স্কেচটির প্রতি মঞ্জরিত হয়েছিল তোমার অনুরাগ।
ক্রমান্বয়ে সেই স্কেচ হয়ে উঠল
পূর্ণাঙ্গ এক প্রন্টিং। চিত্রটি যার আদলে সৃষ্ট,
তাকে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এলো
তোমার একান্ত ঘাটে, যেখানে তার জন্যেই
অপেক্ষা করছিল ফুলশাখার দোল, বুলবুলির গান,
ময়ূরের নাচ এবং প্রেম-উদ্ভাসিত দীপাবলি।
তুমি তোমার রচিত চিত্রের সঙ্গে আমার
অবিকল মিল দেখে পৌঁছে গেলে
মনোজ এল দোরাদোয়। তোমার যৌবনের তরঙ্গভঙ্গে
আনন্দের অবিশ্বাস্য রঙধনু দেখে যুগপৎ উল্লসিত এবং
ঈষৎ শঙ্কিত হলাম। আমাদের দীর্ঘ মধুচন্দ্রিমায়
রাহু কালো ছায়া ফেলবে না তো তস্করের চাতুর্যে?
এখন তুমি তোমার মনোজ যে-সৃষ্টি আমি, তাকে
আর এই প্রকৃত আমি-কে দেখছ খুঁটিয়ে; ঘুরে ফিরে
করছ তুলনা, আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছ আমার নিজেরই বিরুদ্ধে।
এখন আমি নিজেরই অসম প্রতিদ্বন্দ্বী। তোমার রচিত
চিত্রের কাছে পরাজিত হচ্ছি বারবার; মতাদর্শের সংঘর্ষে তোমার
ধিক্কার এবং ঘৃণার লুপ্তপ্রায় আমার প্রকৃতি।
তোমার রচিত আমার প্রতিকৃতি থেকে খসে খসে
পড়ছে রঙ; চোখ, নাক, কান উধাও।
এই মুহূর্তে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে
তুমি দেখছ কনিষ্কের মূর্তি-নিঃসঙ্গ, ভাঙাচোরা।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৫৮ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন