শঙ্খ ঘোষ

কবিতা - ঘরেবাইরে

লেখক: শঙ্খ ঘোষ

এই সেই অনেকদিনের ঘর, তার দেয়াল ফাটছে, আশা ফাটছে।
যেদিকে তাকাই তার নির্বোধ নীরব চোখ,
ভীষণ লজ্জাহীন একঘেয়ে সূর্যহীন গন্ধ
বৎসরের পর বৎসর একখানি করে টালি খসিয়ে মাথা তুলছে।
বৃদ্ধা ঠাকুমার নামাবলির মতো মূঢ় দেয়ালের অসহ্য দুরবলোক্য তর্জনী
তাকিয়ে মনে হয়
আশা নেই আশা নেই
আমার বয়স হাজার কিংবা এ-রকম
আর সামনের ভবিষ্যৎ মানেই প্রাগৈতিহাসিক অন্ধ বর্বর যুগ
যে মারে সেই বাঁচে–
অন্তত মা-র মুখে তাকিয়ে এ-ছাড়া আর কোন্ আশা?

আমি জানি মায়ের এই দন্ত ঘুচবে না কোনোদিন
অকুলানের সংসারকে কুলিয়ে দেবার দম্ভ–
এ দুঃসাহসিক স্পর্ধা তার ভঙ্গুর পদক্ষেপেও কী আশ্চর্য প্রখর ফোটে।
কিন্তু তবু
তবু তার আঙুলের পঞ্চমুদ্রার বঙ্কিম ভঙ্গিতে বিধাতা ঝিলকিয়ে ওঠেন হঠাৎ
আর স্পর্ধার মেরুদণ্ডে সেই আদিম হা-কপাল শিরশির করে ওঠে
‘আর পারি না
তোমরা বরং এই দুর্দম ভার গ্রহণ করো, আমি দেখি
কী আলাদিনের প্রদীপে খরচ কুলোয় রাবণের।
আর, ভগবান,
সংসারের কোন্ সাধটা-বা মিটল এই অফুরান ঘানি টেনে টেনে!’

এমন ললিত সন্ধ্যা সোনার পঞ্চপ্রদীপ ছোঁয়াবে শান্ত ছেলের মাথায়
(হায়রে শান্তি)
ধানের শিয়রে পায়রা
(হায়রে শান্তি)
প্রজাপুঞ্জ বাইরে বেরোয় ঘর ছেড়ে কোন্‌খানে একটু নিশ্বাস মিলবে
শূন্য নীলে কিংবা শহরে
যেখানে ঘর নেই, ঘরের নৈরাশ্য নেই, ঠাকুমার চোখ নেই।
তারপর
সারাদিনের ক্লান্তি মিশে মিশে
সেই অস্বচ্ছ দিনান্তে ভয় নেমে ভীষণ
বাহির কৈল ঘর।

আর দেখব না সেই লাঞ্ছিত চোখ।
যার এক চোখ হাওয়ায় পশুগ্ৰাস দেখে দেখে ভয়ে স্থির,
ধর্ষকাম পৃথিবীর হাত থেকে, শূন্যবন্ধন থেকে
কেঁপে কেঁপে পেছোতে চায়, দেয়ালে লেগে লেগে রক্তের মতো নিশ্বাস টলছে–
আরেক চোখে ভীষণ নির্লিপ্ত ক্ষমা নীরব থেকে থেকে
লজ্জাতুর করে তুলছে যৌবন।
পসারিনী, যৌবন নিলাম করে ঘাটে ঘাটে
এমন নিষ্ঠুর ক্ষমায় বিধো না আমায় যৌবনবতী–

এই অজস্র বলি (মাগো!)
বালির নীচে নীচে কবর কামনা করে,
কতদূর থেকে তৃষ্ণা এসে এসে সমুদ্র ছুঁতে পায় না
আর মায়ের যন্ত্রণা!

এ কোন সৃষ্টির যন্ত্রণা।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ১০০ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন