শংকর ব্রহ্ম

গল্প - স্ত্রৈণ

শংকর ব্রহ্ম
রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০২৪ রম্য

স্ত্রৈণ
শংকর ব্রহ্ম

বিশালগড়ে একদা এক রাজা ছিলেন। তাঁর প্রতাপে প্রজারা সব সময়নতটস্ত থাকত। একদিন রাজা মহামন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন, এবার পয়লা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসব হবে দেশে। সেখানে দেশের সমস্ত বিবাহিত প্রজাদেরই যোগ দিতে হবে, না হলে তাদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

রাজার কথা মত, সারাদেশে সে কথা ঘোষণা করে দেওয়া হল।
প্রজারা সেদিন তাদের সমস্ত কাজ-কর্ম বন্ধ রেখে, রাজ প্রাসাদের কাছে বিশাল প্রান্তরে এসে হাজির হল।
হৈ হৈ কান্ড রৈ রৈ কান্ড,যেন কোন মহাযজ্ঞ শুরু হবে।
রাজা নির্দেশ দিলেন,যারা নিজের স্ত্রীকে ভয় পাও, তারা সোজা ডানদিকে দৌড়বে, আর যারা ভয় পাও না, তারা বাঁদিকে। সকলে বুঝেছো তো?
সকলেই মাথা কাৎ করে,ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
তারপর রাজার নির্দেশে হুইসেল বেজে উঠল।
রাজা দেখলেন, সকলেই প্রাণপনে ডানদিকে ছুটছে। হঠাৎ তার চোখে পড়ল, একমাত্র একজনই বাঁদিকে যাচ্ছে ছুটে।
দৌড় শেষ হলে রাজা সকলকে ডেকে ভাল ভাল দামী উপহার দিলেন। যে শুধু বাঁদিকে দৌড়ে ছিল, শেষে তাকে কাছে ডাকলেন। সে তো ভয়ে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে রাজার কাছে হাজির হলো।
রাজা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে ভয় পাও না?
— জী হুজুর ,পাই।
— তাহলে, তুমি বাঁদিকে দৌড়ে ছিলে কেন?
— আমার স্ত্রী বলে দিয়েছিল, সবাই যেদিকে যাবে তুমি সে দিকে যাবে না মোটেও।
রাজা শুনে, সহাস্যে বলে উঠলেন, তাই বল। তাকেও মূলাবান সব উপহার দিলেন রাজা।

তারপর রাজা খোস মেজাজে প্রাসাদে ফিরে এলেন। মহারাণীকে ডেকে বললেন, শোন গিন্নী তোমার কথাই ঠিক। আমার প্রজা বেটারা সবাই স্ত্রৈণ।

শুনে মহারাণী মুচকি হেসে বললেন, আর তুমি?
রাজা তার কোন উত্তর না দিয়ে, মহারাণীর মুখের দিকে তাকিয়ে হো হো করে অট্টহাসি হেসে উঠলেন।

৯৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন