শিরোনাম: ভারতের অতীত দিনগুলি

আলোচক: Author Avatar আব্দুর রহমান আনসারী

বাংলার যুব- মানসের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
“বুকের মাঝে ছ পাই, ন পাই, মুখে বলিস স্বরাজ চাই
স্বরাজ কথার অর্থ তোদের ক্রমেই হচ্ছে দারাজ তাই।
‘ভারত হবে ভারতবাসীর’ এ কথাটাও বলতে ভয়,
সেই বুড়োদের নেতা বলিস, তাদের কথাই চলতে হয় ?”
কবি নজরুলের এ কথা পরিচ্ছন্নভাবেই প্রমান করে যে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের মুক্তি সংগ্রাম দুটি ভিন্ন ধারায় বিভক্ত ছিল। বস্তুত: পক্ষে ভারতবর্ষের ইতিহাস অনুপুঙ্খ আলোচনা করলে দেখা যাবে যে, যুগে যুগে কালে কালে বৈদেশিক শক্তি ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে এদেশে এসেছে। কেউ লুঠেরা। তারা লুঠ করেছে। চলেও গিয়েছে। আবার কেউ এসেছে রাজ্যপাট গড়তে এসেছে এ দেশে। এ দেশের জল হাওয়া মাটিতে তারা লীন হয়েছে। কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,
“কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে
কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে
সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথায় অনার্য
হেথায় দ্রাবিড়, চীন–
শক-হুন-দল পাঠান মোগল
এক দেহে হল লীন।”
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখবো যে ১২০৬ সালে সুলতানি শাসনের শুরু থেকে ১৮৫৮ সালে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর’র শাসন কালের অবসান ও ব্রিটিশ রাজ্ শক্তির শাসন শুরু এবং ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ ও ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহে ভারতীয় শাসকবার্গের ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট পরাজয় এর মধ্যে দিয়ে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থা বিদেশী শক্তির অধীনস্থ হয় ব’লে মনে করা হয়। কবি নজরুলের কথায়, “ওই গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর / উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।” আর ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল অবধি শাসনকাল রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “বণিকের মানদণ্ড দেখা দিলো রাজদণ্ড রূপে পোহালে শর্বরী।” তাহলে ১২০৬ থেকে ১৭৫৭ অবধি ভারতীয় শাসন ব্যবস্থা মোটেই বিদেশী শাসনের অধীন ছিলনা। সেই সময়েই স্বাধীনতার দাবি উঠতো। ওঠেনি। মূলত ১৭৫৭ থেকেই ১৮৫৭ সাল অবধি দেশীয় রাজার পরিবর্তে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ভারতের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত ছিল। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধাপে ধাপে দেশীয় রাজ্যগুলি যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে গ্রাস করে।ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অনুমোদিত ১৮৫৮ সালে গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’র (Government of India Act-1858 ) মাধ্যমে ভারতবর্ষ সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীন অর্থাৎ বিদেশি শাসকের অধীনে চলে যায়।
এই কারণেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা অনুমোদিত Indian Independence Act-1947″-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতার হস্তান্তর ও ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষিত।এখন প্রশ্ন হল স্বাধীনতা কী? এক কথায় উত্তর দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়।তবু বলা যায় যে, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারের অধীনে নিজস্ব আইন ব্যবস্থার দ্বারা পরিচালিত জনগণের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগকেই স্বাধীনতা বলা যায়। ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় স্বাধীনতার প্রয়োজন দেখা দিল কেন তা জানতে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার অতীতে আলোকপাত করতেই হবে।
ভারতীয় স্বাধীনতা দিবস হল ভারত প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস।১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত ব্রিটিশ-রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫অগাস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহুর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের জন্ম। এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের পিছনে যে ইতিহাস আছে তাহলো:-
১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলায় কোম্পানী শাসনের সূচনা করে। এটিই ভারতে ব্রিটিশ রাজের সূচনা হিসেবে বিস্তীর্ণভাবে দেখা হয়। ১৭৬৫ সালেতে বক্সারের যুদ্ধে জয়ের ফলে, কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার ওপর প্রশাসনিক অধিকার লাভ করেছিল। তারপর তারা ১৮৩৯ সালে মহারাজা রণজিৎ সিং-এর মৃত্যুর পর প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ(১৮৪৫–১৮৪৬) ও দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ(১৮৪৮–৪৯)-এর পর পাঞ্জাবও তাদের অধিকারে এনেছিল।বিদেশী নিয়মের বিরুদ্ধে কতিপয় আঞ্চলিক আন্দোলন ১৮৫৭ সালের আগে ভারতের বিভিন্ন অংশে গড়ে উঠেছিল। উপরন্তু, তাদেরকে একত্র করা যায়নি এবং বিদেশী শাসকের দ্বারা সহজভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল উদাহরণস্বরুপ ১৫৫৫ থেকে ১৫৭০ থেকে কর্ণাটকে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে আব্বাক্কা রানীর বিদ্রোহ, ১৭৭০ সালে বাংলায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, গোয়ায় পর্তুগিজ নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ১৭৮৭ নৃ-তাত্ত্বিক বিদ্রোহ যা পিন্টোস ষড়যন্ত্র হিসেবে পরিচিত, ১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহরূপে বাংলাতে তিতুমীরের ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতে ভীরাপান্ডা কাট্টাবমান বিদ্রোহ, কর্ণাটকে রানী চেন্নামার কিট্টুর বিদ্রোহ, সৌরাশট্রে কচ্ছ বিদ্রোহে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৫৭–৫৮ সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উত্তর এবং মধ্য ভারতে বিদ্রোহের ভারতীয় মহাবিদ্রোহ (সিপাহী বিদ্রোহ), ১৮৫৭ ছিল একটি পর্যায়কাল। এই বিদ্রোহ ছিল কয়েক দশকের ভারতীয় সৈন্য এবং তাদের ব্রিটিশ অফিসারের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্যের ফল। মুঘল এবং পেশয়ার মত ভারতীয় শাসকদের প্রতি ব্রিটিশের ভিন্ন নীতি এবং অযোধ্যার সংযুক্তি ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য সূত্রপাত করছিল।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল একটি পরিব্যাপ্ত, একত্রীভূত বিভিন্ন জাতীয় এবং আঞ্চলিক অভিযান বা আন্দোলন যা অহিংস ও বৈপ্লবিক উভয় দর্শনের প্রচেষ্টায় এবং ভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব এবং অন্যান্য ঔপনিবেশিক প্রশাসন শেষ হয়। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে এই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। তারা প্রার্থনা, আবেদন-নিবেদন এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে এক মধ্য পন্থা অবলম্বন করেছিল। ফলে উনিশ শতকের প্রথম ভাগে লাল-বাল-পাল এবং শ্রী অরবিন্দ এক মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতার আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করছিল। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু’র মত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পরবর্তীকালে একটি বৈপ্লবিক দর্শন অবলম্বন করে আন্দোলনে করতে এসেছিলেন। এর সাথেই যুক্ত হয়ে আছে অনুশীলন সমিতির আন্দোলন। ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, আজাদ, রাজগুরু, আসফাকুল্লা, বিনয়- বাদল- দীনেশ, সিধু- কানহু, সূর্য সেন ও তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন আরও নানান নামে নানান বিদ্রোহ। আত্ম বলিদান।
১৯৪২ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শ্বেতাঙ্গ-বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপক আন্দোলন (Quit India Movement, 1942) ক্রিপস মিশন এর অস্পষ্ট প্রস্তাবাবলি- যেমন, যুদ্ধ পরবর্তীকালে ভারতের জন্য ডোমিনিয়ন মর্যাদা প্রদান, প্রাদেশিক আইনসভা ও দেশীয় রাজ্যগুলির দ্বারা সংবিধান প্রণয়ন কমিটি নির্বাচন, প্রদেশগুলির এতে যোগদান করা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ধারা, যুদ্ধে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের আশু অংশগ্রহণ কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাখা প্রভৃতি কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারে নি। বরং এ প্রেক্ষিতে বলকান উপদ্বীপের মতো ভারতের ভাগ্য বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দেয়। মালয়, বার্মা ও সিঙ্গাপুর থেকে ব্রিটিশদের কলঙ্কজনক পলায়নের ফলে তাদের অধীনস্থ ভারতীয়দের নিজেদেরকেই আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হয়। এসব ভারতীয়ের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অবর্ণনীয় দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা, ভারতের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত শ্বেতাঙ্গ সৈন্যদের দ্বারা ভারতীয়দের ওপর জাতিগত বিদ্বেষমূলক আচরণ, সকল প্রকারের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে যুদ্ধের কাজে লাগানোর কারণে সম্ভাব্য জাপানি আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের বাংলায় অনুসৃত ‘পোড়ামাটি নীতি’, যুদ্ধকালীন জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, কালোবাজারী এবং মুনাফাখোরদের দৌরাত্মে সবকিছুই শ্বেতাঙ্গ-বিরোধী উত্তেজনা সৃষ্টি করতে বিশেষ অবদান রাখে।
ভারত ছাড় আন্দোলনের প্রধান তিনটি পর্ব দেখা যায়। প্রথম পর্বে এ আন্দোলন প্রধানত শহর অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। এ পর্যায়ে প্রধান শহরগুলিতে হরতাল, ধর্মঘট, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ ছিল লক্ষণীয় বিষয়। এ পর্বের আন্দোলন ছিল খুবই ব্যাপক এবং সহিংস। কিন্তু দ্রুততার সাথেই এ আন্দোলনকে দমন করা হয়।
আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় আগস্টের মধ্যভাগ থেকে। এ পর্যায়ে জঙ্গী ছাত্ররা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তারা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয় এবং একই সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিম বিহার, উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চল, বাংলার মেদিনীপুর জেলা এবং মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি অঞ্চলে স্বল্প স্থায়ী আঞ্চলিক ‘জাতীয় সরকার’ও গঠিত হয়।
১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারে সেই পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ হারিয়ে ফেলেছে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু’র নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রভাবে ভারতীয় নৌসেনা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর ব্রিটিশ রাজ্যের নিয়ন্ত্রণও শিথিল হয়েছে। এ অবস্থায় অনন্যোপায় হয়েই তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় ছিন্নমূল। তাঁরা দলে দলে র্যািডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিজেদের পছন্দমতো দেশে আশ্রয় নেন। বেশির ভাগ মানুষই চোখের জলে নিজেদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা হয় বাংলা ও বিহারেও। দাঙ্গায় সীমান্তের দুই পারের ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক হতাহত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহরু তাঁর বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।
তারপর আমরা তিয়াত্তরটি বছর অতিক্রম করে চুয়াত্তর বছরে আজ পদার্পন করছি। কত গান আর গালভরা আলোচনা আমরা করবো। অথচ আমাদের অতীত থাকবে সেই অন্ধকারে। আজকের এই দিনটির স্বপ্নে বিভোর ক্ষুদিরাম বসু ১১ই অগাস্ট আত্মাহুতি দিলেন। ক’ দিন আগেই গেলো সে দিন! ক’জন আমরা স্মরণ করেছি? এখনও মন্দির আর মসজিদের ইঁট-পাথরেই মানুষের পরিচয়। আমরা ক্রমশ পিছিয়ে চলেছি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সমগ্র ভারতেই অসহিষ্ণু অবস্থার সৃষ্টি করে। আজও খাদ্য, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নারীর সম্ভ্রম আর বেঁচে থাকার দাবিতে পথে নামতে হয়। পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ কই? বিগত একশত বছরের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের রক্ত স্নাত পথে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রথমে দুই পরে আরও একটুকরা করে তিনটি টুকরো করে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ। আজও দেশের আপামর জনসাধারণকে স্বাধীনতার পূর্ণ অধিকার দিতে পারিনি। আজও দেশভাগ -দাঙ্গা- জাতিবিদ্বেষ আমাদের মজ্জাগত। দেশ নেতাদের একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতা দখল। ভ্রষ্টাচারে আমরা পৃথিবী খ্যাত। তাই আজও আমাদের শুনতেই হয়,
“আমার পুলার গায়ে নাই ক্যানে কানি,
টগদু ত্যানার লাগি ক্যানে টানাটানি,
লাল নীল ফাতাটাকে প্যাড়্যা এন্যা দে,
জারে ধুকা ছেল্যাটাকে জামা কোর‍্যা দি,
আমাকে বুঝায় দে স্বাধীনতা কি”

এখন পর্যন্ত ডিসকাশনটি পড়া হয়েছে ২৭ বার
যদি ডিসকাশনটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন