আব্দুর রহমান আনসারী

গল্প - বিদায় সংবর্ধনা

লেখক: আব্দুর রহমান আনসারী
প্রকাশ - বুধবার, ২৯ মে ২০২৪ ধরণ: জীবনবাদী

শতবর্ষ প্রাচীন বিদ্যালয়। আলী সাহেব সেই তেইশ বছর বয়সে এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরীতে যোগ দেন।আজ তাঁর অবসর।চলছে তাঁর বিদায় সংবর্ধনার অনুষ্ঠান।স্বাভাবিক ভাবেই ভারাক্রান্ত মন।কত স্মৃতি তাঁর মনে উদয় হচ্ছে।প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর সুমিষ্ট ব্যবহার আর ছাত্রদরদী গুণাবলীর কথা স্মরণ করে সমগ্র বিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে করে তুলছে বিষাদময়।সহকারী শিক্ষকগণ তাঁর বিদ্যালয়ের পাঠানপাঠনে অবদান ও অগ্রণী ভূমিকার কথা শ্রদ্ধায় স্বীকার করছেন। এই বিদ্যালয় থেকেই অষ্টম শ্রেণী পাশ করে শহরের স্কুলে পড়াশুনা। তারপর বিশ্ববিদ্যলয় স্তরের ডিগ্রি অর্জন ও একই বিদ্যালয়ে চাকুরী।সেখান থেকেই প্রাইভেটে এম এ পাশ।তাঁরই নাছোড়বান্দা চেষ্টায় অষ্টম শ্রেণীকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উত্তরণ। এখন এ বিদ্যালয় মহীরুহে পরিণত। যা তাঁরই চেষ্টার ফসল। এই বিদ্যালয় তাঁর মানস সন্তান। আলী সাহেবের বেশ মনে পড়ে গত দুবছর আগে এক বৃষ্টি স্নাত দিনে বিদ্যালয় হতে বাড়ি ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনার অশ্রুসিক্ত ঘটনা। সেদিন তাঁর প্রানপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী আর যথার্থ সুহৃদ সহশিক্ষকগণ তাঁর প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলেন। কিন্তু আজীবনের মতো তাঁর একটা পায়ের চলার শক্তি হারিয়ে খুঁড়িয়ে চলেন।
বিদায় অনুষ্ঠান শেষ।এবার তাঁর বাড়ি ফেরার পালা।দীর্ঘ জীবনের কর্মতীর্থকে বিদায় দিয়ে অবসরের জীবন।ভাবতেই অশ্রুর বন্যা দুচোখ বেয়ে নেমে আসে। সহশিক্ষকগণ চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তাঁকে বিদায় দিলেন। বিদ্যালয়ের গেট পার হয়ে আবারও ফিরে আসতে হয় তাঁকে।ভুলে গেছেন একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিতে যা তাঁর অবসরের সঙ্গী।বিদ্যালয়ে ঢুকতেই নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেননা।যে শিক্ষকরা এই মাত্র তাঁকে চোখের জলে বিদায় দিলেন সেই তাঁদেরই একজন তাঁর খুঁড়িয়ে চলা অবিকল নকল করে দেখাচ্ছে আর অন্যরা আনন্দে আত্মহারা। সহাস্য স্ফূর্তিতে মেতে উঠেছেন। মেলাতে পারছেননা। দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর তিনি যে বিদ্যালয়ের জন্য প্রাণিপাত করলেন এই তাঁর মূল্য! এই চোখের জল, স্তুতিবাক্য, মানপত্র সবই নিছকই উপহার! নাটকের নিখুঁত অভিনয়!না।আর ভাবতে পারলেন না।মাথাটা শূন্য হয়ে পড়ছে। অন্ধকার দেখছেন। কিছু একটা অবলম্বন খুঁজছেন। পড়ে গেলেন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।কর্ম জীবন নয়,পার্থিব জীবন থেকেই তাঁর বিদায় হল।কারও নিখুঁত অভিনয় তাঁকে আর দেখতে হবেনা। চিরকালীন অবসর নিলেন আলী সাহেব।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৩৯ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন