দেখ দিদি লোকটা না আবার কবিতা লিখেছে ;
সেটা আবার প্রেমের কবিতা!
বিয়ে হয়ে গেলে একটা লোক কি করে প্রেমের কবিতা লেখে ?
সত্যি! কি চরিত্রহীন লোক!
নিজের স্ত্রী থাকতেও প্রেমের কথা মনে হয় ?
ছি ! আমার খুব ঘেন্না হচ্ছে।
মির্চি দিদি খুব দুঃখ পেয়ে বললো ‘ কি করবো অনেক সুখের স্বপ্ন দেখে
বিয়ে করেছিলাম কিন্তু এমন লোক হবে !! মনটা ভেঙে যায় – ‘
বোন বললো দুঃখ করিস না দিদি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তোর মতো এতো অপরূপ, এতো কোমল , মনে প্রাণে পতিপ্রেমী
মেয়ে পেয়েও যে প্রেমের কথা ভাবে , তাও আমার অন্য কাউকে নিয়ে রোমান্টিক কবিতা লেখে ,
কি আর বলবো এতো নচ্ছার মানুষ , কি ভাবে হয় ?
যাই হোক তোকে যেমন যেমন বলছি তেমন তেমন করবি। লাইনে চলে আসবে।
শুরু হলো ঘরের মাঠে ক্রিকেটের স্লেজিং
‘ইতিহাস ভূগোল পরে সরকারি চাকুরী ধরে তাঁতি তাঁত বুনে বেশ খাচ্ছিলো
এঁড়ে গরু কিনে হাল চাষ না করে , কেন কবিতা লিখতে গেলিরে ?
কি ট্যালেন্ট রে বাবা , মানে একদম মাল্টি ট্যালেন্ট , কত রকমের জ্ঞান একই মাথায় !!
শুধু একজনেরই নয় বন্ধুও দেখি কবিতা লিখতে শুরু করেছে
তাও আবার একই পাড়ায় থাকে।একই পাড়ায় এতো ট্যালেন্ট। ‘
প্রসঙ্গত আমার এক জন জানাশোনা পড়শি সেও কবিতা লিখতে ভালোবাসতো।
সে আবার আমার প্রেরণা।
“কি ব্যাপার বোলো দেখি চরিত্রে কি হুল ফুটেছে ?
রবীন্দ্রনাথ আবার কবীন্দ্রনাথ হয়ে এসেছে। কিন্তু আসবি তো আয় আমার ঘরেই কেন ?”
কবির দফা রফা হতে লাগলো দিন দিন –।
কতকদিন সময় মতো খাবার পেলাম কিন্তু এমনি কথার হুল ফুটতে লাগলো যে ভাত আর গলায় দিয়ে নামে না , নামলেও হজম হয়না। আবার কতকদিন খাবার জুটলো না। মির্চির খুব শরীর খারাপ তাই স্নান সেরে গুটি মেরে শুয়ে আছে। বেলা ৪ টা পেরিয়ে গেলে নিজের খাবার ফোন করে আনিয়ে নিলো। ঘরের কোনায় দরজা লাগিয়ে রেডি মেড খবর খেয়ে মুখ পুছে আবার শুয়ে পড়লো। আমিতো বাইরের খাবার খাইনা একটু শরীর সচেতন তাই অবেলায় হয়তো ভাতে ভাত করে খেয়ে নেবো। তার পরেও বিড়ম্বনা রান্না করে শুধু খেলেই হবে না। মির্চি বিছানা থেকে উঠে বলবে শুধু রান্না করে খেলেই হবে না , রান্না ঘরে যেন একটাও দাগ থাকে না। মির্চি অগ্নি বর্ণ হয়ে বলছে সে নাকি আমার বাবার চাকরানী নয়। যাইহোক আমার বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো খুব কষ্ট পেতেন। মাও যদি জানতেন বিবাহের পরে স্ত্রী সাথে থেকেও নিজেকে সেদ্দ ভাত করে খেতে হচ্ছে। কিন্তু সময় বদলে গেছে পুরুষ হয়েছো তো কি ! বেশি বাড়াবাড়ি করলে দেশের কঠিন আইন আছে। ফাঁসিয়ে দেব!!
কি করা যায় কবিতা লেখা বন্ধ করা যায় না, মনের টান।
আবার সময় তো কাটাতে হবে।
এই মানসিক জট একটু লঘু করার জন্যে সময় করে অনেক ভেবে ভাল মিষ্টি কথা যেটা আমি কোনোদিন ভাবি নাই , মির্চিকে রাত্রে বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওর মনের ভীষণ আগুন দেখে আমার ভাবটা এতটা ফুটলো না।
উত্তর এলো –
“যাও যাও আমার কাছে নেকামো করতে হবেনা আর।
ওই কবিতার মেহেরউন্নিসা আর কল্পনাকে নিয়েই থাকো না।
কি সুখ পাও দেখে নাও! ‘
এমন আগুনের হলকা খেয়ে আমার তো গলা শুকিয়ে গেলো।
কথা জড়িয়ে যেতে যেতে শেষে থেমেই গেলো।
রাত্রিটা অনিদ্রায় গেলো।
এমন ভাবেই দিন যাচ্ছিলো। গ্রীষ্মকালে ডোবার জল শুকিয়ে আসলে মাছেরা যেমন বাঁচার
চেষ্টায় খুব ছটপট করে কিন্তু লাফিয়ে গেলো ডাঙায় গিয়ে আরো বিপদে পরে। শেষে
কষ্টে শিষ্টে আবার ফিরে আসে সেই কষ্টের ডোবায়। আমারও তেমনি চলছিল।
একদিন রাত্রি হয়েছে সেটা ছিল গরমের সময় কিন্তু সুন্দর চাঁদ উঠেছিল, জ্যোৎস্না ভাসিয়ে দিয়েছিলো।
একফালি আলো জালানার ফাক দিয়ে বিছানায় এসে পড়ছিলো।
আমার মানসিক চিন্তা থাকায় ঘুম ঠিক হচ্ছিলো না। একটা হঠাৎ কথার আওয়াজ শুনলাম বিছানা থেকেই।
মির্চি কথা বলছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হয়তো স্বপ্ন দেখেছিলো –
‘আমি তোমায় চেয়েছিলাম কিন্তু জানিনা বাবা আমাকে কেন এমন লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। তুমি কি এখনো তোমার ওই নতুন গাড়িটা নিয়ে ঘুরে বেড়াও ?
বিয়ের আগে যখন ঘরের ব্যালকনিতে বসতাম বিকেলে তুমি ঠিক সামনে দিয়ে যেতে আর কোনো না কোনো ছুতায় গাড়ি রাস্তায় পাশে আটকে গিয়ে থেমে যেত। আর তোমার চোখ চলে আসতো আমাদের ব্যালকনিতে।কত সুখের সময় ছিল। আমি তোমার কাছে যেতে চাই।আবার সেই সুখের দিনগুলো ফিরে পেতে চাই। ওই গাড়িতে কিন্তু অন্য কাউকেই বসাবেনা কোনোদিন । ওটা শুধু আমার বসার জায়গা। – – ।।।।।। ‘
আমিতো একটু অবাক হয়ে শুনছিলাম বোঝার চেষ্টা করছিলাম ব্যাপারটা কি। ধীরে ধীরে
বুঝেতে পারলাম –
কিন্তু ভাবলাম ওর বাবা তো এক ছাপোষা লোক আমি তার হিসাবে অনেক ভালো চাকরি করি
তাই উনি আমার সাথে খুব খুশি হয়েই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওনার মেয়ে তো দেখি
বাপের কাজকে মনে প্রাণে মান্যতা দেয় নাই।
তাই কি আমাকে নিয়ে নিজের বোনদের সঙ্গে হাসি ঠাট্টা তামাশা করে । আমিকি অতৈ তুচ্ছ।
কবিতা লিখি বলেই কি আমি সেকেলে অকেজো হয়ে গেলাম?
যে কিনা একটা মূর্খ কিবা দুই পয়সার আনাড়ি আমার চেয়ে বড়ো হয়ে গেলো ?
ভাবছি কি করে মুক্তির পথ পাওয়া যায়?
আমি শক্তি হীন হতে পারি কিন্তু বুদ্ধি হীন নয় ।
ছুটলাম আমার উকিল বন্ধুর কাছে –
১৬১

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন