আব্দুর রহমান আনসারী

গল্প - জোট

লেখক: আব্দুর রহমান আনসারী
প্রকাশ - বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪ ধরণ: অন্যান

গ্রামের নাম পটাশ ডাঙা। সাবেক বর্ধিষ্ণু গ্রাম। হাল ঠিকানা ভাঙা কলোনী। রাক্ষুসী পদ্মা গ্রাস করেছে গ্রামের সাবেকীয়ানা। গ্রামের সব্বাই থিতু হয়েছে গজিয় ওঠা কলোনীতে। এক বেলা একমুঠো অন্নের জন্য পঞ্চায়েত অফিসে লাইন, যদি কোন লাইন করে ১০০ দিনের কাজের হিল্যে হয়। ঠাঁ ঠাঁঁ রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে জনা পঞ্চাশেক হাড্ডিসার মানুষ।
পঞ্চায়েত অফিসের সামনে একটা জিপ এসে দাঁড়াল। নেমে এল এক নব্য ছোকড়া। পরনে টাইট জিনস্ প্যান্ট। গায়ে ভোটের ছবি ওয়ালা গেঞ্জি। মাথায় টুপি। ভোটের ছবি সাঁটা। চোখে রোদ্ চশমা। গলায় ফুল ছাপা রুমাল বাঁধা। ছোকড়া হাঁক্ দিল ও–——-ছমিরুদ্দী চাচা——–! সমিরুদ্দিন মন্ডল। পটাশ ডাঙার সম্পন্ন চাষী। ডাক শুনে গলা বাড়ায় সমিরুদ্দিন। কেডা ডাকে—–? এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে ও লবারুন! তা কী মুনে কর্যা এতদ্দিন পর? ” চাচা, কলোনী মোড়ে আজ একটা মিটিং আছে। ভোটের। ইবারের ক্যানডিডট আর সত্য দা থাকবেন । তুমি লোকজন নিয়ে হাজির থাকবা। আমি প্রচারে যাচ্ছি।” এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে হুঁশ্ করে জিপ নিয়ে বেড়িয়ে গেল নবারুন।
বিকাল ৫টা। কলোনী র মোড়। মানব পার্টীর মিটীং। পাশাপাশি দু’টি চেয়ার পাতা। একটাতে বসে আছে মানব পার্টীর দাপুটে নেতা সত্য সাহা। অন্যটিতে নির্বাচন প্রার্থী অভিজিৎ মন্ডল। নব্য ছোকড়া নবারুন এক নাগাড়ে মাইক ফুঁকে চলেছে। ভাই সব, বন্যা-ভাঙন বিধ্বস্ত মানুষের ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অভিজিৎ মন্ডলকে “কদম ফুল” চিহ্ন ভোট দিয়ে বি———পু–——–ল ভোটে জয়ী করুন। আজকের মিটীং-এ দলে দলে যোগ দিন। কিন্তু তিনজন ছাড়া জনপ্রানীর দেখা নেয়।
সূর্য ঢুলু ঢুলু। সমিরুদ্দিনের সাথে গ্রামের জনতা হাজির হয় কলোনী মোড়ে। নবারুনের গলার তেজ বেড়ে যায়। জনতার ভীড় বাড়ায় নেতারা নড়েচড়ে বসে। সমিরুদ্দিন চিৎকার দিয়ে বলেন, ও লবারুন তুমার বোল থামাও। আমাধের কুছু বুলত্যে দ্যাও। মুখ খোলেন সত্য সাহা। তোমার যা বলার এই খানে এসে বল।
এগিয়ে আসে সমিরুদ্দিন। মাইকের ডান্ডা ধরেন। বলেন, ভাইসব, গিরগিটি রং পালঠিয়্যা আমাধের কাছে এস্যাছে। এ্যধের বিশ্বাস করবেননা। বানে ভাঙনে যখুন আমাধের জমিজির্যাত, আঙনা বাড়ী ভেঙ্যা চোল্যা গ্যালো তখুন লাগরীক পা্র্টী ছাড়া কেহু আমাধের সাথে আসেকনিখ। ইরা তখুন কুঠে ছিল? বোল্ডার দিয়্যা লদীর পাঢ় বাঁনধার দাবীতে লাগরীক পার্টীর মুজিবুর পুলিশের গুলি খেয়্যা মোড়্যলো। ভোট দিলে ওধেরকেই দিব। উরা হয়তোক জিতবেকনা। কিন্তক আমরাই জিতবক। গরীব মানুষ জিতবেক। আপনারা ঠিক করেন কী কইরবেন।
সমবেত জনতা উত্তাল। সমস্বরে বলে আমরা নিজেদের জোট, গরীব মানুষের জোট গড়ব। কোন ভোটের জোট নয়। দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে আসে সমবেত জনতা। ভোট ভিখারী তিনজন সুযোগ বুঝে সটান পিছটান দেয়। দূরে কোথাও কোথাও মাইকের সুর ভেসে আসে
” আমরা করব জয়,
আমরা করব জয় নিশ্চয়.……।”

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ২২ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন