অপমান
শংকর ব্রহ্ম
এরপর থেকে আমি আর কোন মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, সংকোচে।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা। সালটা উনিশশো সত্তর , আমার বয়স তখন মাত্র উনিশ, সাউথ সিটি কলেজে পড়ি। আমি আর অমিত প্রায়ই গড়িয়াহাট মোড়ে অফ পিরিয়ডে, চা সিগ্রেট সহযোগে আড্ডা দিতাম।
পুজোর সময় দু’জনে একসঙ্গে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়াতাম, প্রতিমা দেখতে নয়, প্রতিমার মতো মুখ খুঁজতে। মেয়েদের, আমরা আজকালকার ছেলেদের মতো আওয়াজ দিতাম না, তবে কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলে বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠত।
সে’বার উনিশশো সত্তরে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে, আমি আর অমিত হাঁটছি, গল্প করছি, সিগ্রেট টানছি, কিন্তু চোখদুটি উৎসুক হয়ে খুঁজছে সুন্দরী কোন মুখ। দেশপ্রিয় পার্কের পূজা প্যান্ডেলে বেশ ভিড়। হঠাৎ এক পলকের মধ্যেই আমার চোখ আটকে গেল একটি কিশোরীকে দেখে। যেন আমার আবিষ্কার। সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার এ আবিষ্কারের।
পরনে ডুরে শাড়ি, কপালে সবুজ টিপ, কানে মুক্তোর দুল, সারা শরীর দিয়ে যেন লাবণ্য ঝরে পড়ছে। সে পিছনে ফিরে তাকাতেই চোখাচুখি হয়ে গেল। বুকের ভিতর ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল। মনে হলো এমন রূপ যেন আমি কখনো দেখিনি। পর মুহূর্তেই কিশোরী আবার ফিরে তাকালো। বুকের ভিতর এবার দামামা বাজতে শুরু করলো।
তারপরই মেয়েটি দু’হাত দিয়ে মুক্তোর দুলদুটি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, আমাকে দেখে। যেন আমি কোন ছিনতাইবাজ।
এ’রকম চূড়ান্ত অপমান বোধ আমি আগে এর আগের কখনও বোধ করিনি। মনটা তিতো হয়ে গেল সে কারণে।
এরপর থেকে আমি আর কোন মেয়ের মুখের দিকে আজও সরাসরি তাকাতে পারি না, সংকোচে।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন