শংকর ব্রহ্ম

গল্প - গোঁড়ায় গলদ

লেখক: শংকর ব্রহ্ম
প্রকাশ - বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ধরণ: অন্যান

গোঁড়ায় গলদ
শংকর ব্রহ্ম

একদিন এক অধ্যপক বন্ধুর বাড়িতে গেছি,
তার সঙ্গে ‘বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা’ নিয়ে একটু আলোচনা করার জন্য।
সামনের সপ্তাহে আমাদের ‘বিদ্বজ্জন’ সংগঠনের একটি সেমিনার আছে, বাংলা আকাদেমি-তে। সেখানে এই নিয়ে অনেক বাঘা বাঘা বক্তারা তাদের জ্ঞনগর্ভ বক্তব্য রাখবেন, সেই সংগঠনের সভাপতি হিসাবে, আমারও শিক্ষা প্রসঙ্গে কিছু না বললে কেমন বেমানান হবে ভেবে, তাই নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটু আলোচনা করার ইচ্ছে জাগে মনে, সে কারণেই তার বাড়ি যাওয়া।

গিয়ে শুনলাম অধ্যপক বন্ধুটি তখনও বাড়ি ফেরেননি, বন্ধু স্ত্রী আমাকে বসতে বলে, পাশের রান্নাঘরে চা করতে চলে গেল।
ঘরে বসে শুনলাম, বন্ধু স্ত্রী তার শিশু সন্তানটিকে জিজ্ঞাসা করছে, বাছা তুমি আজ স্কুলে গেলে না কেন?
শিশুটি বলল, আমি আর কোনদিনই ওই স্কুলে যাব না মা।
– কিন্তু কেন? মা তার, বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে তার কাছে জানতে চাইলেন।
– স্যার সব সময় উল্টোপাল্টা বলেন।
– কেন, কি বলেছেন আবার স্যার তোমায়?
– পরশু আমাদের বললেন, তিন আর তিনে ছয় হয়।
আবার গতকাল বললেন, চার আর দুয়ে ছয় হয়।
আজ গেলে হয়তো বলতেন পাঁচ আর এক – য়ে ছয় হয়।
তারপর ধরো, সেদিন অংকের শিক্ষক বললেন, সেল
মানে বিক্রয়। আবার তারপর একদিন, বিজ্ঞানের শিক্ষক এসে বললেন, সেল মানে কোষ, আবার তার কিছুদিন পর বাংলার শিক্ষক এসে বললেন, শেল মানে শূল, মানে পুরোনো কালের অস্ত্রসস্ত্র।

আবার বাবা সেদিন বললেন, সেল ফোন।
তবে কোনটা ঠিক বলো তো মা?
এবার বলো তো মা, ওই স্কুলে গিয়ে আমি কি ঘোড়ার ডিম শিখব?
তিনি তো তার শিশু সন্তানের কথা শুনে স্তম্ভিত হলেন আর
আমিও হলাম হতভম্ব।

এরপর বন্ধুর সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আর কোন আলোচনা করার ইচ্ছে রইল না আমার মনে।
বন্ধু স্ত্রীর হাতের এক কাপ চা খেয়ে, ধীরেসুস্থে বাড়ি ফিরে এলাম। বুঝলাম, শিক্ষা ব্যবস্থার, গোঁড়ায় গলদ। পাত্র বুঝে জ্ঞান বিতরণ হয় না।
শিক্ষকরা বিদ্যা ঢেলে যান, ছাত্র তার কত গ্রহণ করতে পারবে, তা বিচার করেন না কোন সময়। শিক্ষার নামে পরিহাস চলছে বর্তমানে।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৭৩ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন