শারদীয় উপসর্গ

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

বাঙালি ভদ্দরলোকের যে পীড়া বর্ষণ শেষে শারদীয়
উপসর্গ বলে প্রতি বছর ফিরে আসে সেই ঝকঝকে নীল
ছোঁয়াচে অসুখ আমাকেও ঘর ছাড়তে প্ররোচনা দেয়।
সম্ভব না হলেও সঙ্গত না হলেও কাগজের শারদীয়
টাইম টেবিল খুলে কোথায় অলীক তার হদিশ করতে থাকি
আমি যে বাঙালি ভদ্দরলোকের মধ্যে পড়ি এ তো
যে কেউই বলতে পারে এর ব্যাখ্যা তারা কেউই দিতে পারেনা
আমি সারাদিন সারা মাসে সারা বছরে যা খাই
তার একটাও আমার উৎপন্ন করা নয়
যা যা পড়ে রোদ বৃষ্টির প্রহার থেকে বাঁচি সুবেশে
ভদ্দরলোকের মধ্যে চলাফেরা করি তার একটাও আমি তৈরি করি না
মাথা গোজার যে আশ্রয়টুকু আমার আছে তার
একখানা ইট কি জানলা কপাটের একখানা পাল্লাও আমি লাগাইনি
আমার ভদ্রলোক হয়ে বাঁচার রহস্যটা এর থেকেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে
এ কাজগুলো যারা আমার জন্য করে দেয় অন্তরের ভেতর তাদের মিত্র ভাবার কথা কোনদিন মনে আসেনি
তাদের সম্বন্ধে উদাসীন থাকাটা আমার অধিকার
আমাকে শিখিয়েছে
তাদের কাছ থেকে কাজ পাওয়ার সময় কতটা
কম খরচে তা পাওয়া যায় তার হিসেব করার সময় তাদের মনে করি
ভদ্দরলোক হিসেবে বেঁচে ভদ্দরলোক থাকতে থাকতেই যাতে মরে যেতে পারি সে চেষ্টা থেকে বিরত হতে পারিনি
এবার শরতের নীল অসুখটা এসে ছুঁতেই মনে হচ্ছে
'ধন্যবাদ ভাই' এটা বলে যাবার সময় এসে গেল বোধহয়
কিন্তু যে উপকূল ভাগে আমি বাস করি
সেখানে ভদ্দরলোকের দিনানু দৈনিকে এর কোনো
জায়গা নেই - এত স্বপ্ন বিলাস
বাঙালি ভদ্দরলোকের যে পীড়া বর্ষণ শেষে শারদীয়
উপসর্গ হয়ে ফিরে আসে সেই ঝকঝকে নীল অসুখ এবারও
আমাকে ছুঁয়ে বলছে ঘর ছাড়ার আগে ধন্যবাদ দাও।
সেই স্বীকারোক্তিই এই শরতে মুক্তিপত্র ধরিয়ে দিতে পারে
~ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (কাব্যগ্রন্থ, স্বেচ্ছাবন্দী আশার কুহকে)
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ২১ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন