শুভশ্রী রায়

কবিতা - আন্তর্জাতিক বেড়াল

লেখক: শুভশ্রী রায়

বিষুব রেখা বরাবর সে বিরামবিহীন হাঁটে হেলেদুলে
পাশেপাশে হাঁটে অবিচলিত গৃহস্থমায়া
প্রায় চার হাজার বছর আগে পোষ মানার
পর থেকে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সেঁটে আছে
তার অনিবার্য মনোহর ছায়া।
সে একটা মৃত্যুহীন কিন্তু সামান্য বেড়াল
সঙ্গে নয় বা ন’ হাজার জীন্মের স্মৃতিসত্তার সার।
দেশে দেশে যুগে যুগে সে ছিল, আছে, থাকবে
এবং মায়াময় বাটি ভরা দুধ খাবে
মাছটাছও খেয়ে নেবে কখনো কখনো
চুরি করে, কখনো না চাইতেই পেয়ে যাবে
দুর্মূল্য আদরমাখা মাছভাত
আহা খাক, মা ষষ্ঠীর প্রিয় ছেলেপুলে।

বিষুব ও দ্রাঘিমা রেখাগুলোর
কাটাকুটির ভেতর দিয়ে
সব যুগে সব দেশে সব গোষ্ঠীর সংসারে
শোনা যায় তার নরম আদুরে গরগর।
ষষ্ঠী ঠাকরুনের সে বড় প্রিয় প্রাণী
কত কত শিশুগল্পের বেড়াল মহারাণী
কালো ও ধলো যত বেড়ালবাহিনী
নিয়ে গড়ে ওঠে শত শত কাব্যকাহিনী।
আজ অবধি কোনো দেশে বা পাড়ায়
কোনো অভাব ঘটেনি মেনি বা হুলোর।

চোরা চোরা চালাক চালাক, বুদ্ধিতে ঠাসা
আন্তর্জাতিক বেড়াল মানুষের সব চাল ও চলন
বোঝে যদিও অকারণে
ম্যাও ম্যাও করে বোধবুদ্ধির করে না অপচয়।
সন্তুষ্ট হলে প্রায়ই গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে চিরচেনা ম্যাটের ওপরে সেই গোলগাল ফ্যাট ক্যাট।
বাচ্চারা তাকে খুব ভালোবাসে তবে
ঢের বেশি ভালোবাসে বড়রা
তাদের নিয়ে দারুণ দারুণ গল্পকবিতা আর ছড়া লিখে ফেলে যে কোনো প্রাচীন বা অধুনা সময়ে।
লেখকের জগৎ জুড়ে জাদুময় পর্দা থেকে লাফায়
অলৌকিক বেড়াল, বরাবর বিস্ময়ে ঠাসা।

ইঁদুর ধরতে ধরতে সে ক্লান্ত হয়ে যায় মাঝেমাঝে
তবে সেটা সাময়িক, সহজেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে
এবং হাজার হাজার বছর ধরে
মানচিত্র জুড়ে আঁকা হাস্যকর সব সীমানা টপকে
পৃথিবীসুদ্ধু ইঁদুরের পেছনে নিরন্তর দৌড়য় আন্তর্জাতিক মার্জার মহাশয়।
ফসল ধ্বংসকারী ইঁদুরের পেছনে এই দৌড়
তার শিকারী সত্তাকে নিশ্চয় সাজে।

সাংসারিক অভিজ্ঞতায়
সমৃদ্ধ চেতনা তার, কত কিছু দেখে ফেলেছে
যুগ যুগ ধরে, ভাগ্যিস কথা বলতে পারে না
বললে কী যে হ’ত না, বলা দায়!
জিন থেকে পাওয়া তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর
পালক সংসারের রীতিনীতি থেকে ছিটকে আসা
অভিজ্ঞতায় ঈর্ষণীয় জ্বলজ্বল করে ক্যাটস আই।

কখনো মরেও মরে না, দুর্ভিক্ষ মড়ক
বা মহামারীর সময়েও দিব্যি হেসে খেলে
কখনো গল্পের বইয়ের হৃদয়,
কখনো আমাদের ভাঙাচোরা
সংসার কখনো ডাস্টবিনের পাশ থেকে
সভ্যতাকে সকৌতুকে দেখে প্রাচীন মার্জার।
অভিজ্ঞতা চাই তার, আরো টিকে থাকতে হ’বে
এবং একটা পরিষ্কার রুমাল হওয়ার জন্যও।্
সে রুমালে সমস্ত কল্পনাপ্রিয় শিশু ও বয়স্ক
মুছে নেয় বিষণ্ণ মুখ।
দেশে বিদেশে মানুষকে সংসারিক মায়ায়
আরো বেশি জড়িয়ে রাখতে সব সময়ে ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত, ভালোবাসায় পুষ্ট, আদর কেড়ে নেওয়া
উল্লেখ যোগ্য একটি অমর বেড়াল, আদরভূক
বারবার ভরিয়ে তোলে কল্পনার নিজস্ব সড়ক।

‘আমাকে নিয়েও কিছু লেখ,’
আব্দেরে ম্যাও ম্যাও মাখিয়ে এমন কথা
আমাকে সবার সামনে সে বলে গ্যাছে কাল।
দেখি পারি কী না
দেবী বাস্তেত, আমার ওপরে কৃপা রেখ ।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৯৮ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন