লুচি তরকারি দেখে জ্বিভে জল এসে গেলো মাইরি। শরীর মন দুটোই ভালো নয়। বয়সটা হয়েছে হজম হয় না সব কিছু আর। লুচি তরকারি বাঙালির প্রিয় খাবার। কিন্তু তেলে ভাজা হজম করতে না পারলেই অম্বল। তাই খুব ভাবছি খাবো কি খাবো না। বাঙালিরা কাজ করে কম ভাবে বেশি , ভাবে বলেই কবিতা লেখে, গল্প লেখে । আমি তেমন বাঙালি। লুচি তরকারি দেখে তেমন লোভ সামলাতে পারছি না। তেমনি আরো একটা বিষয় নিয়ে লোভ সামলাতে পারছি না।
ও এতো আলোচনার আগে বলাই হয়নি তো আমি কে ? আমি হলাম ঘুটঘুটানন্দ রায় চৌধুরীর। জমিদার বংশের ছেলে। জমিদারী না থাকলে ও লোক জন মান্যিগুন্যি করে । করবে না কেন। বাম জমানায় ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট যখন আনা হলো তখন সবাই বিপদে পড়লেও আমার বাবা রাঘব বোয়াল রায় চৌধুরীর বুদ্ধি করে সব জমি একটা ট্রাস্ট বানিয়ে , দেশ সেবার ব্রতী হয়েছিলেন।
সেখান থেকে আমাদের এতো প্রভাব, হাসপাতাল, বিদ্যালয় , সব আছে আমাদের। সেবা বা জনগনের মঙ্গল নাম করে আমাদের ভালোই মঙ্গল হয়।
যেমন জমিদারি গেলেও। এখন এ অঞ্চলে বাঘে গুরুতে জল খায় আমাদের কথায়। আমি এখনও এ অঞ্চলের শাষক, এমেলে, আবার অনেকে চেষ্টা করে মন্ত্রী ও হয়েছি বছর খানেক। আমার যশ প্রতিপত্তি দেখে লুচির মতো ফুলে ওঠে আমার আত্মীয় স্বজনরা। এরাই আমার সবচেয়ে বড় শত্রুর।
জীবনের একটি স্বপ্ন বোধহয় এরা আমার আর পূর্ণ হতে দেবেন না কখনো। এটা ভেবেই বাশি লুচি তরকারি খেয়ে যেমন চাপ অম্বলের মতো একটা কষ্ট বুকের ভিতরে নিয়ে বেয়ে চলেছি বহু কাল। সেটা ভাবলেই মুখটা আমার ঠান্ডা লুচির মতো চুপশে যায়। লোকজন আমাকে কৃপান বললেও একটি বিষয়ে হাত খুলে খরব আমি চিরকাল খরচা করেছি। একটু লাজুক আমি। তবু আরো একটু লজ্জা ধার নিয়ে বলি। আমি ভালো কবিতা লিখি ছবি আঁকি গান গাই। তবে আমার স্বপ্ন কবি হবার। এর জন্য আমি লিটিল ম্যাগাজিন বেড় করতাম। নিজের বই ছাপানোর জন্য প্রকাশনা সংস্থা খুলে ফেললাম। এখানে ওখানে কবিতা চাপানোর অনুদান বিজ্ঞাপন , সব কিছু দিয়েছি। কবি সম্মেলন করে সবাইকে ফুলকো ফুলকো লুচি তরকারি ও খাইয়েছি। কিন্তু অশিক্ষিত পাঠকরা আমার কবিতা মানেই বুঝতে পারে না। তাই হয়তো আমার নাম আপনার শুনতে পান না।
সেদিন অবশ্যই একটা বুদ্ধি দিলো আমার কিছু ফ্যান ফলোয়াররা। বললো বেশী খরচা পাতি হবে না। আমার জন্মদিনে সবাই কে লুচি তরকারি খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে আর একটা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। সেখানে আমাকে জেলার সেরা পুরস্কার দেওয়া হবে । যদিও পুরস্কারটা কিনবো আমি নিজে হাতেই তাই ওখান থেকে কাটমানি কেউ গেড়াতে পাড়বে না। সব কিছু ঠিক ঠিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, আমার অনুপ্রেরণায় আমি পুরষ্কার লাভ করছি। কিন্তু আমার ছোট মেয়ে পুঁটি এখানে ভিলেন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিন আমার জামাই সদানন্দকে বললো ” মৃত্যু পর দেহ দান করবে বলেছো ভালো কথা। কিন্তু এখনি শিরদাঁড়াটা বেঁচে দিলে বাবার কাছে। কবিতা তুমি ভালোই লেখো , ভালোই বোঝো। তাও বাবাকে বারণ করতে পারছো না এসব পাগলামি করতে।এ পুরস্কার পেয়ে বাবার সম্মান হানি হবে বেশী, হবে অনেক বঙ্গ সেটা বোঝাও বাবাকে ।”
ওর কথা শুনে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। বাদাম ভাজা গান গেয়ে ভুবন বাদ্যকর যখন রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলো। তখন কিছুটা এরকম অবস্থা হয়েছিল আমার , সামনে ফুলকো ফুলকো লুচি তরকারি , কিন্তু অম্বলের ভয়ে আপনি খাচ্ছেন না। আমরা সোস্যাল মিডিয়া দৌলতে হঠাৎ করে খুব বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছি , ঠিক ফুলকো লুচি র মতো পুষ্টি গুণ শুন্য স্বাদে দুর্দান্ত। ভাবন বাদ্যকরকে যখন কেউ সঙ্গীত শিল্পী বলে তখন কষ্ট হয়। কতো ভালোই গায়ক তো আছে এ বাংলায়, লোকগান আছে, কিন্তু ভাইরাল হলো কিনা কাঁচা বাদাম।
সাহিত্য পুরস্কার পেয়ে গেলে আমি ও বিখ্যাত হবো জানি। কারণ দশ বারোটা টিভি চ্যানেল, খান কয়েকটা খবরের কাগজ খবরটা ছাপ হবে । প্রচারে আলোয় আমি বেশ কিছুদিন ঘরা ঘুরি করবো মুখে মুখে। ফেসবুক হবে লাইক আর কমেন্ট এর মিছিল। কিন্তু সত্যি সত্যি সাহিত্যিক হওয়া কি আমার হবে। কাকের পিছনে ময়ুর এর পালক লাগালে তো আর কাক ময়ুর হবে না। তাই লোভে পরে লুচি তরকারি খাওয়ার পর চাপা অম্বলের মতো সাহিত্যিক হবার স্বপ্নটা আমার অপূর্ণ্য থেকে যাবে। তাই উৎসবটা ক্যানসেল করেই দিলাম।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
লুচি তরকারি
এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ১৬ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন