তুমি আমার কাছে আসবে ন!আমাকে ছোবে না!
অপরাজিতার কথায় তেমন অবাক হলাম না অর্ধেক রাত্রে; কারণ আমার এমন অভিজ্ঞতা পূর্বেও হয়েছে , মাঝে মাঝেই এমন হয় কিন্ত আজকে কেন হয়েছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছি।
আমি বললাম- দেখ আমি এমন কিছুই করিনাই যে তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে। আমিতো একটা মানুষ আমিও লোকের সাথে কথা বলবো , মিশবো তাদের সাথে সামাজিক ভাব বিনিময় করবো। এটাই তো স্বাভাবিক!
তুমিও তো তাই করছো। আমি কাকে কি বলছি কার সাথে কি কথা বলছি এবং সেটা কোন প্রসঙ্গে বলছি তুমি সেটা কি করে জানবে যদি সবটা না জেনে থাকো ?
অপরাজিতা বললো যে আমি কি করছি না করছি , কাকে কি বলছি না করছি, সে নাকি আমার চোখ দেখেই বুঝতে পারে ।
আবার বললো – আমি সব জানি তুমি কাকে কি বলছো। আমার কাছে থেকে তুমি কোনো কিছু লুকাতে পারবে না। এটা মনে রাখবে। আমি একদম পছন্দ করি না আমার ঘরের খবর অন্য লোকেরা শুনে নেক।
আমার মনে হলো আমি আমার বন্ধুকে কিছু একটা বলছিলাম যেমন- মনটা ভালো নেই। মানসিক ভাবে খুশি হতে – পারছি না, কষ্টে আছি। জানি না জীবনে কেন এতো অশান্তি আসছে ইত্যাদি ।
আমিতো অফিসে গিয়ে ফোনালাপ করেছিলাম তাহলে অপরাজিতা এটা কি করে জানলো ? ওকি আমার ফোনের তথ্য পেয়ে যাচ্ছে কোনো সফটওয়্যার দিয়ে ,নাকি কোনো এজেন্সী কে লাগিয়ে দিয়েছে ? কিন্তু এতো কেন কৌতূহল আমি কাকে কি বলি ? কি করি ? আমি তো যা কিছু করছি
সেটা সবাই করে বাস্তব জীবনে। এটাই তো আমাদের নগন্য লোকের সামাজিক জীবন।
কিন্তু আমিতো কোনো এমন কিছু বলি নাই যাতে অপরাজিতাকে দোষী বা দায়ী করা হয়েছে ?
হয়তো মনে মনে ভেবে মনগড়া কাহিনী তৈরী করে আমার ওপরে মানসিক প্রতিশোধ নিচ্ছে।
আমি হালকা করার জন্যে বললাম –
দেখো এমন সন্দেহ করলে আর মনে মনে ভাবলে জীবন চলে না। ভাল মন্দ বলার , ভাবার প্রত্যেকের অধিকার আছে। এটা একটা স্বাভাবিক মানসিক প্রবণতা । তুমি যেটাকে খুব অন্যায় ভাবছো আমার দ্বারা সেটা কিন্তু মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সবাই এটা করে থাকে কিন্তু কারো নামে অপবাদ দেওয়া অন্যায়। সেটা সমীচীন নয়।
তুমিও এমনি করছো প্রিতিদিন রুটিন করে সকলের সাথে কথা বলছো তখন কিন্তু ভাবছোনা তুমি অন্যায় করছো , তুমি স্বাভাবিক ভাবে এটা করে যাচ্ছ। এটাই স্বাভাবিক।
কাউকেই কিছু বলা মানেই নিন্দা নয় ;এটা একদিক থেকে অনেক ভালো যে অন্যের মতবাদ জানা যায় আর নিজের মনের কষ্ট লাঘব হয়।
কিন্তু অপরাজিতা আরো বেশি রেগে গিয়ে বললো-
তোমার নিজের ভুল কোনোদিন বিশ্বাস হয় না নিজের কাছে,আর তুমি যে কোনো ভুল করতে পারো , অন্যায় করতে পারো সেটাও তুমি বিশ্বাস করো না । তুমি সেই দিন আমার কাছে আসবে যেদিন তুমি তোমার ভুল বুঝবে আর সব কিছু আমাকে দেখিয়ে করবে, কোনো কথা যাকেই বলবে আমার সামনে বলবে।
আমি বললাম -দেখো আমি যদি ভুল করে থাকি তুমিও সেই ভুল করছো প্রতিদিন। কিন্তু তুমি নিজেই বুঝতে পারছোনা যে তুমি যা বলছো অন্যায় ;সেটাই তুমি প্রতিদিন অবহেলে করে যাচ্ছ। তুমি কি ভাবছো আমি যদি তোমাকে না ছুঁই তাতে আমার কিছু আসে যায়?
অপরাজিতা আরো রেগে বললো তোমার তো কিছুই আসে যায় না। তোমার সবই আছে বাইরে।
আমি বললাম -আমি কিন্তু এমন কথা ভালোবাসি না; আমাকে এমন করে কথা বলবে না।
আমি অফিসের কাজ সংসারের বিভিন্ন ব্যাপার -ভবিষ্যৎ-এসব ভেযে ভেবে- খুব টেন্স হয়ে আছি।
আমাকে এখন ঘুমোতে হবে। কাল তো আমার অফিস আছে , অনেক কঠিন কঠিন সমস্যা নিয়ে আছি।
অপরাজিতা- হাঁ তোমার তো ঘুম হলেই হলো। মার্ কোলে গিয়ে ঘুমিয়ে নাও। নাহলে আরো হয়তো কেউ আছে তার কাছে যেতে পারো।
আমি বললাম , দেখো তুমি কিন্তু সীমা পার করে যাচ্ছ!
একটু ভেবে কথা বললে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে ।
আর এসব আমার প্রতিদিন ভালো লাগছে না। আমায় বাঁচতে দাও।
অপরাজিতা -হাঁ আমি তো তোমাকে মেরে ফেলতে চাই !! আমি তোমার সব চাইতে বড়ো শত্রু।
আমি – দেখো আবেগ তাড়িত হয়ে কথা বললেই সব কিছু সমাধান হয়ে যায় না। সমাধানের জন্যে সমস্যা কি সেটা বুঝতে হয়।
অপরাজিতা- সমস্যা হচ্ছে তুমি লুকিয়ে চুরিয়ে কাজ করো আর আমার অসাক্ষাতে আমাকে নিচু করে সবাই কে বলছো । সেটা তোমার বন্ধুকে হোক আর তোমার বাড়ির লোককেই হোক না কেন।
আমি – তুমি এটা খুব ভুল বললে। আমি অবশ্যই ভাবের আদান প্রদান করি সেটা কিন্তু তোমার সামনে হলে তেমনটা হবে না। যেমন তুমি যদি আমার কাছে বসে তোমার আপন জনের কাছে কথা বলো তখন সেটা সেভাবেই বানিয়ে নেবে। তুমি কি আমার ভালো মন্দ তোমার আপন জনকে বলো না ? তাদের ও মতামত শোনো না ? আমি কিন্তু এটা খুব ভালো করেই জানি তুমি ও এটা করো, তাহলে কেন শুধু আমাকেই দায়ী করছো ? এটা একটি স্বাভাবিক মানবিক প্রবণতা।
অপরাজিতা- দেখো তুমি যাই বলো না কেন আমি কিন্তু তোমার মতো করি না। তুমি এসব করে
আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দিচ্ছ।
আমি – সেটাই যদি হয়। তবে দোষ শুধু আমার নয় তোমারও দোষ আছে সমান সমান ; তোমার ভাবনাতেই ভুল আছে। গোড়ায় গলদ লেগে আছে। আমরা কি পৃথিবীতে শুধু দুজন ? আমাদের চারপাশে যারা আছে তারা সবাই এমন কি গাছ পালা বাড়ি ঘর সব কিছুই আমাদের মনে ভাল মন্দ ভাব ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে। কিন্তু যতটা সম্ভব ভালো দিকটা নিয়ে চলার চেষ্টা করতে হয়।
অপরাজিতা – রাখো তোমার বড় বড়ো কথা। এসব কথা আমার অসহ্য।
আমি – দেখো তুমি যদি ভাব সবাই তোমাকে শুধু ভালো বলবে তাহলে কি করে বুঝবে তোমার ভুল কি আছে ? তুমি কি করে শোধরাবে তোমার ভুলগুলি। শুধু তুমি বলবে আর সবাই শুনবে তাও কখনো হয় না। ভুল মানেই অন্যায় নয়। তুমি যাকে ভাবছো তোমাকে ছোট করে দিয়েছে , তোমার নামে খারাপ বলছে সে তোমার শত্রু; সে তোমার একমাত্র ঘৃণার পাত্র। সেটা কিন্তু নয়।
যদি কেউ তোমায় তেমন বলেও থাকে তুমি তার সাথে মিশলে, তাকে ভালো বাসলে,
তার সাথে ভাবের আদান প্রদান করলে তবেই তো তোমায় সে বুঝবে তুমি কত ভালো।আর তুমিও বুঝবে তাঁদের মনে কি আছে তোমাকে নিয়ে।
তুমি তাদের কোনো খারাপ চাও না তুমি তাদেরও শুভাকাংশী।
যদি তুমি এভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখ এই ভেবে সবাই তোমাকে খারাপ বলছে, তোমার জীবন বিষিয়ে দিচ্ছে সেটা খুবই ভুল।
আর তুমিও তো তাদের তেমনি করছো ।যেমনটা তুমি অভিযোগ করছো তাদের বিরুদ্ধে।
তাহলে তো একটা পূর্ণ দূরত্ব হয়ে যাচ্ছে সেখানে কেউ কাইকে বুঝতেই পারছেনা শুধু একে অপরকে দোষারোপ করছে।
এটা দেখে মনে হচ্ছে মনের একটা সিস্টেম ডেডলক। দয়া করে এর থেকে বেরিয়ে এস। দেখবে জীবন কত সুন্দর।
যে আজকে তোমাকে অহংকারী বলছে কাল সেই তোমাকে বলবে তুমি কত ভালো ! শুধু রূপেই নয় গুনেও তুমি তার সবচেয়ে প্রিয়। তোমার মতো মানুষ সে আর দেখে নাই। এমন ও বলতে পারে !!
তুমি সবাইকে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছো , আর ভাবছো তোমার সুন্দর জীবন সবাই নষ্ট করে দিচ্ছে, তোমার নামে দোষারোপ করে কিন্তু; তুমি মনে প্রাণে অনেক ভালো।
তুমি নিজেকে এতো একলা ভাবছো যে ওদের সম্পূর্ণ আলাদা গ্রহের লোক ভাবছো কিন্তু ওরাও তোমার একান্তই আপন।
তুমি ভাবছো ওরা তোমার কি করবে তুমি তো অপরাজিতা কারণ তোমার জগতে তুমি একই রাজ্ করছো । কিন্তু মনে রাখবে তুমি শুধু নিজের কাছেই অপরাজিতা।
তুমি ওদের কাছে হেরে গেছো। কারণ ওদের জীবন ওরা সবার সাথে সন্মানজনক দূরত্ব রেখে সুখে দিন যাপন করছে। জীবনে যতটা সুখ সম্ভব ওরা পৃথিবীর সব কিছু থেকে চারিধার থেকে নিংড়ে নিয়ে বেঁচে আছে। আর তুমি শুধু অপরাজিতা নিজের কাছে।
নিজের প্রাসাদ যতই বড়ো হোক যদি শুধু তুমি একাই থাকো তাতে কোন সুখ?
আমি যদি শুধু এই পৃথিবীতে একা হয়ে যাই তাহলে সেটা কি শুধু সুখের হবে?ভয়ের নয় ?

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন