Amarendra sen

গল্প - বিষক্রিয়া

Amarendra sen
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ জীবনবাদী, ভালোবাসা

আমি -আজ চাঁদের আলো একেবারে বিছানায় এসে তোমার মুখের ‘পরে পড়েছে , বড়ো সুন্দর লাগছে। চাঁদের আলোর সবটাই যেন তোমার রূপের আভা হয়ে উঠেছে। আমি চোখ বন্দ করেও তোমায় দেখতে পাচ্ছি।
তুমি- (অবাক বিস্ময়ে) আমি কি সুন্দর ? অনেক দিন তো এমন কথা শুনি নাই।
আমি -যে সুন্দর সে কি স্বীকার করে ? যে দেখে সেই তো বোঝে সামনের প্রেমাস্পদটি কত সুন্দর।
তুমি – আমি কি আর সুন্দর হতে পারি ? যাকে ভালোবাসো না সে কি করে সুন্দর হতে পারে ?
আমি – কে কাকে ভালোবাসে কি করে বোঝা যায়?
তুমি – যদি কেউ কারো খুশিতে সব কিছু করতে রাজি থাকে ? তাহলে মনে হয় সে ভালোবাসে |
আমি – কিন্তু অনেক কারণেই তো রাজি থাকতে পারে | আবার কারো ভালোর জন্যেই ভালোবেসে
কোনো কিছু করতে রাজি নাও হতে পারে|
তুমি – সেটা আলাদা ব্যাপার কিন্তু কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে অন্তত: ছোট খাটো কিঁছু তো
শুনবেই |
আমি – দেখো ছোটোখাটো ব্যাপার অনেক সময় অনেক বড়ো ব্যাপার হতে পারে। বাবা তার ছোট ছেলের কথা শুনে বিপদ হতে পারে বুঝে তার কথা অনেক সময় শোনে না | তাতেই কি প্রমান হয়ে যায় বাবা সন্তান কে ভালোবাসে না ?
আবার ছোট জিনিসের জন্যই যদি কেউ ভাবে ভালোবাসা নেই তাহলে কি সত্যি সে ভালোবাসা চায় ?
তুমি – ভালোবাসলে সবই করা যায় ..
আমি – এই পৃথিবীটা কিন্তু শুধু তুমি আর আমি নোই | আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাকে নিয়েই আমরা বাঁচি | কিন্তু তবুও তার মাঝে তুমি প্রধান | সবার আগে তুমি তোমার সব কিছু শুনবো কিন্তু তার পরেও সামান্য কিছু উৎচ্চিষ্ট উদবৃত্ত দিয়ে যদি অনেক অনেক জীবনের সাথে বেঁচে থাকা যায় , তাদের ভালোবাসা যায় তাতে তোমার ক্ষতি কোথায় ? তোমারতো কিছু কমে যাচ্ছে না .বরঞ্চ সকলের সাথে তোমার জীবনের বৃত্তটা আরো বেড়ে যাবে . আরো বেশি উপভোগ করতে পারবে।

তুমি – আমাকে যারা পছন্দ করে না , আমিও তাদের পছন্দ করি না . আমার বৃত্তের মধ্যে তাদের কোনো স্থান নেই।
আমি – কিন্তু তোমার বৃত্ত আমি অস্বীকার করি না।তাদের যেমন ভালোবাসো তুমি সেই বৃত্তকে একটু বাড়িয়ে আমার বৃত্ত কেও তাকে নিয়ে নাও। দেখো জীবন আরো সুন্দর হবে। আরো সুখী মনে হবে। যত বৃত্ত ছোট করবে ততই সুখের গন্ডি কমে যাবে।
তুমি – আমি সবাইকে নিয়ে সুখী চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই। যারা আমায় চায় না তাদের আমি চাই না।
আমি – আমি তো তোমারি তোমার জন্যেই আমার সব কিন্তু বলছি মানুষ একা বাঁচতে পারে না।
আসে পাশের সবাইকে নিয়ে বাঁচা। যদি শুধু তুমি আর আমি থাকি তাহলে কি আমাদের
উৎসটাকেও অস্বীকার করা হয় না ? বাগানে একটা গাছ শুধু নিজেই বাঁচে কি ? মাটি জল
আলো বায়ু পরিবেশের সব কিছুই তো লাগে।
তুমি – আমি অত মহান বড়ো ব্যাপার বুঝি না শুধু তোমায় চাই , আর তুমি আমার কথা শুনবে।
আর কাউকে আমি চাই না আমাদের মাঝে।
আমি – তোমার আর আমার মাঝে আর কেউ নেই। আমি তোমার জন্যেই- শুধু তোমারি , কিন্তু আমি আমার পাশে যারা আছে তাদের অস্বীকার করি কি ভাবে যাদের নিয়ে জন্মেছি যাদের নিয়েই
বড়ো হয়েছি তারা কি আমার কেউ নয় ? তুমি আমার আমিও তোমার কিন্তু তারাও আমার তারাও তোমার।
তুমি – দেখা আমি শুধু একটাই বুঝি তুমি আমার, আর তুমি, আমি যা বলবো তাই করবে। আমাদের মাঝে ওদের কোনো স্থান নেই। আমি কিন্তু এসব আর একেবারেই সহ্য করতে পারছি না। আমি
চলে যাবো। তুমি আমায় ঘুলে যাও। আমায় তুমি একটুকুও ভালোবাসো না। নাহলে কেন তুমি
সব সময় সবাই কে নিয়ে ভাবো ? অরে আগে ঘরকে নিয়ে ভাবতে হয়। ঘর থাকলে তবেই তো
সব ঠিক থাকবে।
আমি – আমিতো সেটাই বলছি সবার আগে তুমি তারপরে — ছোটোখাটো যা কিছু অন্যের জন্যেও
ভাবতে হয় – আর আমি তো সেটাই করছি—
তুমি – দেখো তোমার এসব বড়ো বড়ো কথা আমার আর সহ্য হচ্ছে না– শুধু একটাই মনে রাখবে
হয় আমি নাহয় ওঁরা — তোমাকে দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে হবে —
আমি – বলেছি তো সবার আগে তুমি- আর তোমার স্থান কেউ পাবে না — কিন্তু তবুও বলছি তোমার পরেও ওঁরা আছে– ইটা অস্বীকার করা যায় না–
তুমি – তাহলে তুমি তোমার মতোই থাকবে বলছো ? দেখো আমি আর সহ্য করতে পারছি না —
আমি – ঠিক আছে। ঠিক আছে তোমার আর আমার মাঝে এখন থেকে আর কেউ থাকবে না–
শুধু তুমি আর আমি –( ঘরে গ্লাসে দুধ ঠিক সেটা পান করে ) শুয়ে পড়লাম।
অর্ধ রাত্রের পর
তুমি – তুমি কি জেগে আছো ? গায়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে
আমি – আমি জেগে আছি আর ঘুমোলে জাগবো না।
তুমি – কেন কি হয়েছে ? তুমি কি গ্লাসের দুঃখ খেয়েছো ?
আমি – হা খুব ভালো লাগছিলো। তোমার হাতের সব রান্না চুব ভালো। আর মধু দেওয়া দুধ
আরো ভালো।
তুমি – (সর্বনাশ ) ওতে তো — আমি — বি –ষ — দিয়ে রেখেছিলাম আমি খাবো ভেবে–
আমি – আমি জানতাম তাইতো পান করেছি। তুমি যা চেয়েছিলে তোমার আর আমার মাঝে
কেউ থাকবে না। সত্যি আজ থেকে কেউ থাকবে না। শুধু তুমি আর আমি।
তুমি – আমিতো তোমাকে চেয়েছি আর তুমি তো চলে যাচ্ছ — আমার তো সর্বনাশ হয়ে গেলো
আমি – না না আমি তো তোমায় সব দিয়ে গেলাম তোমার শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করলাম তোমার আমার মাঝে কেউ রইবে না আর।
তুমি – না না আমিতো এমন চাইনি। আমি চেয়েছি তোমাকে।
আমি – আমায় চাইতে গিয়ে তুমি নিজেকে হারাতে রাজি ছিলে তাইতো আমি ভালোবাসার প্রতিদান দিতে নিজেকে হারিয়ে তোমাকে দিয়ে গেলাম ভালোবাসার উপহার। ভালোবাসার বিষ যে প্রতিদিন আমার দেহমনে প্রবেশ করছিলো আজ তার পূর্ণ প্রতিক্রিয়া হলো।

১৪৯
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন